দীর্ঘ সাত বছর পর লন্ডনে পুনর্মিলন ঘটেছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার ছেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। এ সময় হিথ্রো বিমানবন্দরে এক আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বুধবার লন্ডনে স্থানীয় সময় সকালে পৌঁছান খালেদা জিয়া। তাকে বহনকারী কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
হিথ্রো বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়াকে ভিআইপি প্রটোকল দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপি মিডিয়া উইং শায়রুল কবির খান।
এ সময় বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানিয়ে বরণ করে নেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা।
দীর্ঘ সাত বছর পর পুনর্মিলনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমত তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। দোয়া ও শুভেচ্ছার সঙ্গে বয়ে গেছে আনন্দের জোয়ার। প্রতিটা পোস্টে নিজ নিজ প্রতিক্রিয়ায় কমেন্ট বক্সে ঝড় তুলেছেন সবাই। অনেকের কমেন্টে আবার আক্ষেপও ঝরেছে।
আব্দুল কাদের নামের এই নেটিজেন লিখেছেন, ‘আল্লাহর অসীম রহমত যে, শেষ পর্যন্ত মায়ের সঙ্গে ছেলের মিলন হলো। শেখ হাসিনার পতন না হলে এটা আদৌ সম্ভব ছিল কি? হয়তো মায়ের মৃত্যুতেও ছেলের বাংলাদেশে আসা সম্ভব হতো না’!
জিয়াউল হক নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি, কিছু নেতার কারণেই দলের বদনাম হয়’।
সৃস্টিকর্তার কাছে দোয়া চেয়ে আরেক নেটিজেন লিখেছেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি আমাদের মা-কে তোমার কুদরতি রহমত দিয়ে দ্রুত সুস্থ করে পরিবার ও দেশের মানুষের কাছে ফিরিয়ে দিও’।
নিগার সুলতানা নামের এক নেটিজেন লিখেছেন, ‘এই বন্ধন অটুট থাকুক চিরকাল’।
মোহাম্মদ সোয়েব টিপু নামের এক ফেসবুক ইউজার প্রশ্ন তুলে লিখেছেন, ‘আজকে এই সুযোগ কে করে দিয়েছে? ভেবে দেখ’।
শেখ সুরাইয়া রহমান নামের একজন লিখেছেন, ‘দারুণ মুহূর্ত মাশাআল্লাহ’।
নীরব অনুভূতি নামের এক নেটিজেন লিখেছেন, ‘মহান নেত্রী। দীর্ঘ ১৬ বছর সীমাহীন নির্যাতন সহ্য করার পরেও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি’।
আবুল হাসান নামের একজন লিখেছেন, ‘পৃথিবীর সব সৌন্দর্য যেন মিশে আছে এই এক ফ্রেমে। সাত বছরের বিরতির পর মা আর সন্তানের মিলন—এ দৃশ্যের চেয়ে হৃদয়ছোঁয়া আর কী হতে পারে! ২৪ শুধু একটি দিন নয়, এটি একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। মানবিকতার এক অনন্য উদাহরণ তৈরি করেছে এটি। এ যেন ভালোবাসার নতুন ভাষা শেখার দিন। আমাদের অনুভূতিকে আরও গভীরভাবে স্পর্শ করেছে এই মুহূর্ত’।
জব্বার আল নাঈম লিখেছেন, ‘৭ বছর ৬ মাস পর মায়ের সঙ্গে দেখা! অথচ কত কত বার মৃত্যুর দখলে চলে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। ফিরে এসেছেন, দেশটাকে নতুন করে দেখবেন বলেই। পুত্রের সঙ্গে দেখা করবেন বলেই। প্রেম অমর হোক।’
কামাল হোসাইন শাহরিয়ার লিখেছেন, ‘মায়ের স্পর্শ সন্তানের পাহাড়সম দুশ্চিন্তাকেও নিমেষেই ভ্যানিশ করে দেয়। মহান আল্লাহ এক বিশেষ যত্ন দিয়েই এই মা-সন্তান সম্পর্ক নির্মিত করেছেন। মা-ছেলে সব সময় অপার্থিব রত্ন। রাজনীতির চোখে যা ধরা যায় না।’
খাজা মাহাদী শিকদার লিখেছেন, ‘প্রিয় বাংলাদেশ। মা-শাশুড়ির মিলনমেলা। পারিবারিক জীবন আসলেই সুন্দর।’
সোহরাব মেহেদী লিখেছেন, ‘আমি গ্রামে গেলে বা আম্মু ঢাকায় এলে আমার প্রথম কাজই হলো আম্মুকে জড়িয়ে ধরা। মায়ের চেনা সুবাসে হৃদয় শীতল হয়, মন ভরে যায়। এমন অনুভূতিগুলো ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তাঁদেরও এমনই অনুভব হচ্ছে আজ। এই সাক্ষাৎ যে বহু প্রতীক্ষার, বহু দিনের।’
খালিদ সাইফুল্লাহ লিখেছেন, ‘দোয়া করি দ্রুত সুস্থ হয়ে দেশে ফিরবেন বেগম খালেদা জিয়া। যাদের নেতৃত্বের ফলে তিনি মুক্তি ও চিকিৎসার ব্যবস্থা পেলেন; তাদের শত্রু না ভেবে কৃতজ্ঞতা জানাবেন। নেতাকর্মীরা সেই প্রত্যাশা করি।’
আফফান মিতুল লিখেছেন, ‘এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য আর কিছুই হতে পারে না। মা-ছেলের দেখা হলো ৭ বছর পর।’
মো. নাজমুল হোসাইন লিখেছেন, ‘আবেগঘন পরিবেশ। পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর সম্পর্ক মা-সন্তানের। অথচ সেই ভালোবাসা ও নাড়ির সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ‘রাজনৈতিক কাঁটাতার’। ১৫ জুলাই ২০১৭ থেকে ৮ জানুয়ারি ২০২৪; প্রায় সাড়ে সাত বছর পর মা-ছেলের দেখা। আবেগাপ্লুত ছিলেন দুজনই। এয়ারপোর্টে এসে খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে ধরে স্বাগত জানান তারেক রহমান। সঙ্গে ছিলেন তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমানসহ যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিমানবন্দরে শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের পর খালেদা জিয়াকে ভর্তি করার কথা রয়েছে লন্ডন ক্লিনিকে। এর জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্স।’
পাশাপাশি কমেন্টে মা-ছেলেকে দোয়া ও ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছেন অসংখ্য নেটিজেন। খালেদা জিয়ার দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করছেন।