ষ্টাফ রিপোর্টার:
গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার লালপুর এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে করে ওই এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে সম্পূর্ণভাবে তলিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে বাড়িঘর, দোকানপাটেও প্রবেশ করেছে দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানি। পানির ভয়াবহতার কারনে বর্তমানে সেখানকার সড়কে নৌকা চলাচল করতে দেখা গেছে।
নৌকায় জনপ্রতি ১০-৩০ টাকায় পারাপার করে দেওয়া হচ্ছে বাসিন্দাদের।
অত্র এলাকার এমন অবস্থায় বৃদ্ধ, নারী, শিশু, রোগীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছে না। ওইসব এলাকায় যাতায়াতের এখন অন্যতম মাধ্যমে পরিণত হয়েছে নৌকা আর ভ্যানগাড়ি।
সেই সঙ্গে এসব এলাকায় যারা ভাড়া থাকেন তারা আরো আগে থেকেই বাসা ছেড়ে দিয়ে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছেন। কিন্তু যারা এই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা তাদের ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানির সঙ্গে বসবাস করতে হচ্ছে। না পারছেন এলাকা ছেড়ে চলে যেতে, না পারছেন এলাকায় থাকতে। এ অবস্থায় তারা কোনো স্থায়ী সমাধানে যেতে পারছেন না।
সব মিলিয়ে এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দার বসবাস করাটা দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সকালে ফতুল্লার লালপুর এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এলাকায় পানির পরিমাণ হাঁটু পেরিয়ে কোমর পর্যন্ত ঠেকেছে কোথাও কোথাও। রিকশাচালকদের তিনগুন ভাড়ার প্রলোভন দেখিয়েও আনা যাচ্ছে না এই সড়কে। ব্রাজিল বাড়ির সামনে থেকে মানিক ডাক্তারের দোকান পর্যন্ত নির্বিঘ্নে চলছে যাত্রীবাহী নৌকা। পাঁচ থেকে সাতজন যাত্রী উঠিয়ে স্থানভেদে ১০-৩০ টাকার বিনিময়ে গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছেন।
ব্রাজিল বাড়ি থেকে পশ্চিম দিকে পানির পরিমাণ কিছুটা কম থাকায় সেখানে চালকদের পানিতে নেমে েেনৗকা ঠেলে নিতে হচ্ছে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ফতুল্লা লালপুর এলাকায় বুক পর্যন্ত ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি জমে উঠেছিল। তবে গত দুদিন ধরে রোদ ওঠাতে পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। আবার অনেক সময় পানি সহজে নামে না। সেই সঙ্গে কিছু কিছু রাস্তায় সারাবছর ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি জমে থাকে। যা এলাকাবাসীর জন্য ব্যাপক দুর্ভোগের সৃষ্টি করেছে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এমপি, চেয়ারম্যান, মেম্বাররা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় এই জনদুর্ভোগ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে তারা জনপ্রতিনিধিদেরও সহযোগিতা পাচ্ছেন না।
আশরাফুল আলম নামের লালপুর এলাকার এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, পূর্বে এই এলাকায় কল্যাণী খাল নামের একটি খাল ছিল যা ২০ ফুট প্রশস্ত ছিল। কিন্তু কিছু অবৈধ দখলদার খালের দু’পাশে বালু ভরাট করে বাঁশ দিয়ে সীমানা তৈরি করে সেখানে নানা স্থাপনা নির্মাণ করেছে। এতে খালটি একটি সরু নালায় পরিণত হয়েছে। খালটি দিয়ে স্বাভাবিক গতিতে অতীতের মতোন বর্জ্য পানি বা বৃষ্টির জমে থাকা পানি নিষ্কাশিত হতে পারছে না। এতে সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যাচ্ছে এই এলাকার বসতবাড়ি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা। কবে যে আমরা এই কষ্ট থেকে মুক্তি পাবো তা সৃষ্টিকর্তাই ভালো বলতে পারবেন।
আলমগীর হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই পানির এই সমস্যা চলছে। আগে যারা জনপ্রতিনিধি ছিলেন তারা শুধু আশ্বাসই দিয়েছিল। কিন্তু দিন শেষে সমস্যার সমাধান আর হয় না। এখন যে অবস্থা বাড়িওয়ালাদের বিপদ। ভাড়াটিয়ারা ভাড়া না দিয়েই পালিয়েছে। একেক জনের দুই-তিনমাসের ভাড়া আটকে রয়েছে। ভাড়াই চাইবে এই সুযোগ নাই।
আব্দুল জলিল নামে আরেকজন বলেন, আমাদের কোমর সমান পানি উঠেছে। কী করবো, কোনো কাজ কাম নাই। আমাদের দোকানপাট বন্ধ। আমাদের চলাফেরা কষ্ট। গতবার এমপি সাহেব এসে নিজে দেখে গেছে কোনো ফলাফল পাইলাম না।
একইভাবে নার্গিস আক্তার বলেন, ভোর সকালে উঠে কাজে যেতে হয়। কিন্তু পানির কারণে যেতেই পারি না। কোমরের ওপরে উঠে যায় পানি। ভ্যানগাড়ি দিয়ে যেতে হয়। এই ভাড়ার টাকা কোথায় পাই। এই এলাকার কোনো এমপি নাই।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, আমি গত কয়েকদিন নাগাদ এখানে যোগদান করেছি। এ সময় ফতুল্লাবাসীর কাছ থেকে নানা অভিযোগ পেয়েছি। তবে বর্তমানে এখানকার বড় সমস্যা হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এ সমস্যা সমাধানে আমি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব, প্যানেল চেয়ারম্যানসহ ওই এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচলা করেছি। মূলত অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি পলাতক থাকায় এ সমস্যা সমাধানে আমাদের কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। চেষ্টা করছি, ফতুল্লার লালপুরসহ আশেপাশের এলাকা থেকে জলাবদ্ধতা দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করছি।
সুত্র: কালের কন্ঠ