‘ক্ষমতা নয়, সমতা চাই’ সোনারগাঁ পৌরসভার শহীদ মজনু পার্কের দেয়ালে এমন একটি গ্রাফিতি দৃষ্টি কাড়ছে সকলের। এ যেন ধনী-গরীব, ছোট-বড়, ছাত্র-শিক্ষক সহ বাংলাদেশের আপামর জনসাধারনের মনের কথা দৃষ্টিনন্দন গ্রাফিতির মাধ্যমে তুলে ধরেছে শিক্ষার্থীরা। কেউ আর ক্ষমতার নির্মম নির্যাতনে পৃষ্ট হতে চায় না, সকলের চাওয়া সমতার সাম্যে নতুন দেশের প্রত্যাশা। সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের দেয়ালগুলোর রূপও। উপজেলা ও পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের দেয়ালে গ্রাফিতির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে প্রতিবাদ, দেশপ্রেম, সাম্য, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের বার্তা।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা ও সোনারগাঁ পৌরসভার, শহীদ মজনু পার্ক, টিপুরদি, উপজেলা চত্বর, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেয়ালসহ বিভিন্ন এলাকার দেয়ালে শোভা পাচ্ছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আঁকা রঙিন প্রতিবাদী গ্রাফিতি। চলতি মাসের ৬ তারিখ থেকে শুরু হয়ে এসব গ্রাফিতি আঁকা চলমান আছে।
দেয়ালে দেয়ালে নেই কোনো রাজনৈতিক দলের শ্লোগান। কিংবা দলীয় নেতাদের পোস্টার। সব সড়কের গুরুত্বপূর্ণ দেয়ালে ঠাঁই করে নিয়েছে আবেগের প্রতিবাদের রঙিন গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখন। সেখানে জায়গা করে নিয়েছে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানবিক এক দেশ গড়ার আওয়াজ। পথচারী থেকে শিক্ষার্থী সবার নজর কাড়ছে এসব গ্রাফিতি।
বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুলের ‘বল বীর চির উন্নত মম শির’, ‘নতুন বাংলায় আপনাকে স্বাগত’, ‘এ বাংলায় স্বৈরাচারের ঠাঁই নাই’, এছাড়া আরবী ক্যালিওগ্রাফীও ঠাঁই পেয়েছে দেয়ালে।
মুষ্টিবদ্ধ হাত, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হাতে প্ল্যাকার্ড, শাসকের রুদ্ধদ্বার থেকে বন্দিদের আনতে লেখা হয়েছে, ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ অঙ্কিত আরেকটি গ্রাফিতি একই এলাকায় জায়গা করে নিয়েছে। গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীর আর্তনাদ সহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনেক গ্রাফিতি সহ বাংলাদেশ সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি, বাউল, ‘মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও আদিবাসী’।
শিক্ষার্থী মুনিয়া জান্নাত মিহা জানান, ক্ষমতা নয় সমতা চাই, এটি শুধু গ্রাফিতিই নয় এটি সাম্যবাদ এবং বৈষম্যবিরোধী নতুন এক বাংলাদেশ গড়ার শ্লোগান। আমি চেষ্টা করছি আমার আর্টের মাধ্যমে সমাজের সুন্দর দিকগুলো ফুটিয়ে তোলার। আমরা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব ধরনের ক্ষমতায় সমতা চাই। এ ছাড়া তরুণদের মধ্যে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটাতে হবে। আধুনিক যুগে নতুন ধ্যান-ধারণা ও সম্প্রীতির রাজনীতি প্রত্যাশা করব অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে।
শিক্ষার্থী তুহিন, মীম, জুথী, ফাহাদ, জয়, আমেনা, তৃষা ও সামিরা জানান, আমরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী গ্রাফিতি আঁকছি। ২০২৪-এর ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন একটি স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি। এর জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। সবকিছু স্মরণীয় করে রাখবে দেয়ালের এই গ্রাফিতি। আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক ও নিয়মতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই।
কবি সাহেদ কায়েস বলেন, গ্রাফিতির মাধ্যমে তরুনদের নব জাগরণ ও বৈষম্যবিরোধী অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের হাতছানী দিচ্ছে। বর্তমানে যিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন, তিনি শান্তিতে নোবেল জয়ী বাংলাদেশের একমাত্র বিশ^নন্দীন প্রজ্ঞাবান নেতা। ‘ক্ষমতা নয়, সমতা চাই’ আমরা তাঁর কাছে এ শ্লোগানের বাস্তবায়ন আশা করতেই পারি।