নীরব পুলিশ প্রকাশ্যে মাদক!
ষ্টাফ রিপোর্টার:
ফতুল্লা থানাধীন ফতুল্লার গোটা রেলষ্টেশন এলাকা মাদকের জমজমাট ব্যবসা চলছে। হাত বাড়ালেই মিলছে ফেন্সিডিল, ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য। জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বার বার মাদকের ব্যাপারে কঠোর হুংকার দিলেও কিছুতেই কর্নপাত করছে না মাদক ব্যবসায়ীরা। তবে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের নীরবতার ফলে অন্যান্য এলাকার চেয়ে ফতুল্লা রেলষ্টেশন, জোড়পুল,দাপা ইদ্রাকপুর,আলীগঞ্জের আশপাশ এলাকায় পুলিশের তৎপর না থাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
ফতুল্লা থানাধীন এলাকাটি বানিজ্যিক এলাকা হওয়ার সুবাদে অত্র থানা এলাকার জনসংখ্যা তুলনামুলকভাবে অনেক বেশী। ফতুল্লা থানাধীন ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ফতুল্লা এলাকাতে অধিক পরিমানে শিল্প প্রতিষ্ঠান থাকার ফলে এখানে ভাসমান লোকের সংখ্যা প্রচুর। দেশের বিভিন্ন জেলা হতে কর্মসংস্থানের কারনে বিভিন্ন মিল-কারখানাতে কর্মের জন্য আসা মানুষের ভীরে লোকালয়ে পরিনত হওয়া ফতুল্লা থানাধীন প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় মাদক,কিশোরগ্যাংসহ নানাবিধ অপরাধগুলো সংগঠিত হচ্ছে অহরহ। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারন করেছে মাদকের প্রবনতা। ৫ আগষ্টের পর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লাগুলোতে পুলিশের তৎপরতা একেবারে কমে যাওয়াতে মাদকের প্রবনতা এতটাই প্রবল আকার ধারন করেছে যা বলাবাহুল্য। রীতিমত অনেক থানাধীন অনেক এলাকাগুলো যেন এখন মাদকের আড়তে পরিনত হয়েছে। যেখানে হাত বাড়ালে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন প্রকারের মাদক। আর মাদক ব্যবসায়ীরা কোটিপতি বনে গেছেন। এবং মাদক বিক্রির টাকা দিয়ে অনেক মাদক ব্যবসায়ী দামী দামী অস্ত্র ক্রয় করেছেন নিজেদের সুরক্ষার জন্য।
ফতুল্লা রেলষ্টেশন এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতমরা হলেন, একাধিক মামলার আসামী সোরহাবের ছেলে হান্ড্রেড বাবু, মৃত আলাউদ্দিনের ছেলে নাসির শেট, মৃত সামসুল হকের ছেলে ও ক্রসফায়ারে নিহত লিপুর ভাই ডাকাত শাহিন, মৃত সেকান্দারের ছেলে লতিফ, আলাউদ্দিনের ছেলে জাবেদ, আমজাদের ছেলে সুকানী সুমন, আলী আক্কবরের ছেলে আমির হোসেন পিচ্ছি,আল্পনা, মৃত রশিদ মিস্ত্রীর ছেলে মানিক, কাদিরের ছেলে পিচ্ছি সোহেল, চোরা সুমন, হানিফ, টোকাই সেলিম, কালুসহ অনেকে জেল হাজতে থাকলেও তাদের সেলসম্যান দ্বারা মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছে অনেকে। দাপা ইদ্রাকপুর এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন ডাকাত শহিদের ছেলে এবং ডাকাত আজমীরের ছোটভাই মাদক ব্যবসায়ী ও ছিনতাইকারী মো.আসিফ। শেখ হাসিনার পলায়নের আগে ডাকাত শহিদ যুবলীগের নেতা এবং তার দুই ছেলে আজমীর ও আসিফ শ্রমিকলীগের রাজনীতি করলেও পটপরিবর্তনের সাথে সাথে আসিফ এখন যুবদলের ব্যানারে চালিয়ে যাচ্ছে মাদক বিক্রি ও ছিনতাই কার্যক্রম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার ঘটনায় মামলায় ডাকাত আজমীর জেলে থাকলেও তার পিতা সেই মামলার আসামী ডাকাত শহিদ এখনও এলাকাতে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আলীগঞ্জে শ্রমিকলীগ নেতা কাউসার আহমেদ পলাশের সাথে রাজনীতিকরা অন্যতম মাদক স¤্রাট শান্ত এখনও প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করাচ্ছেন তার সেলসম্যান দিয়ে। তবে স্থানীয়দের দাবী, পুর্বে এ সমস্ত মাদক ব্যবসায়ীরা লীগের ব্যানার ব্যবহার করে মাদক বিক্রি করলেও বর্তমানেও তা অব্যাহত রয়েছে দলের ব্যানারের মাধ্যমে।
তবে সচেতন মহল মনে করেন, শুধু ছিচঁকে মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে মাদক নির্মূল কিছুতেই সম্ভব নয়। এছাড়া থানা পুলিশের মাঠে না থাকার সুবাদে এ সকল মাদক ব্যবসায়ী অনেকটাই বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের মাদক সা¤্রাজ্য। থানা পুলিশের পাশাপাশি জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের নীরবতা পালন করাকে অনেটাই রহস্যজনক বলে মনে করছেন সচেতন সাধারন মানুষ। তারা অনেকেই বলেন,সোনারগাঁ থানা পুলিশ প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রকারের মাদকদ্রব্য উদ্ধার করছেন অভিযানের মাধ্যমে অথচ ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর মাদক উদ্ধারে কেনইবা চুপসে রয়েছে তাও রহস্যজনক।
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইতিপুর্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে যে সব মাদক ব্যবসায়ীরা গ্রেফতার হয় তার বেশীর ভাগই সেলসম্যান। অথচ মাদকের মুল গড ফাদাররা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে থাকছেন ধরা ছোয়ার বাহিরে। তাদের সেলসম্যানরা গ্রেফতার হলে মুল ব্যবসায়ীরা তাদের আদালত থেকে জামিনে মুক্ত করে আবার একই ব্যবসায় নিয়েজিত করান।
এছাড়া মাদক সম্রাটরা কখনো কখনো কোন না কোন রাজনৈতিক দলের নাম ব্যবহার করে। আবার কেউ কেউ নিজেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স পরিচয় দিয়ে জমজমাট পরিসরে মাদক ব্যবসা করছে। এ মাদকের বিষয়ে এলাকার সচেতন মানুষ যদি কোন প্রতিবাদ করে তবে গড ফাদাররা সে সব লোকজনকে কোন না কোন ভাবে ফাঁসিয়ে দিয়ে উল্টো তাদের কে হয়রানি করতে থাকেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের দাবী, থানা পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের কর্তাবাবুদের মাদক বিরোধী অভিযানের বিষয়ে চুপসে থাকাটাও যেন অনেকটা ভাবিয়ে তুলেছে আমাদের অভিভাবকদের। তাদের এ নিরবতা আমাদের সন্তানদের ধ্বংসের পাশাপাশি পুরো সমাজকে ধ্বংসের মুখোমুখি করে তুলছে। মাদক বিক্রেতাদের বিক্রিত মাদকের টাকায় তারা যে কি পরিমানে আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করছে তা ভাষায় প্রকাশ মত নয়। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় সংঘটিত মারামারিতে যে সকল দেশীয় অস্ত্রগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে তা বেশীরভাগই মাদক বিক্রেতাদের। আমাদের সন্তান ও সমাজকে রক্ষায় এবং মাদক বিক্রেতাদের গ্রেফতার করাটা অতীত জরুরী হয়ে পড়েছে।
তাই উক্ত এলাকাগুলো থানা পুলিশ,র্যাব-১১ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যদের অভিযানের মাধ্যমে দ্রুতভাবে উক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের দাবী জানান সচেতন মহল।