রাজনীতি বলতে সাধারণত নাগরিক সরকারের রাজনীতিকেই বোঝানো হয়, তবে অন্যান্য অনেক সামাজিক প্রতিষ্ঠান, যেমন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেখান মানুষের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক বিদ্যমান, সেখানে রাজনীতি চর্চা করা হয়। রাজনীতি কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার ভিত্তিতে গঠিত সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে গঠিত।
একটি রাজনৈতিক দল হচ্ছে নাগরিকদের এমন একটি দল যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এবং ক্ষমতায় গিয়ে সরকার গঠন করার উদ্দেশ্যে গোষ্ঠীবদ্ধ হয়। দলটি সমষ্টিগত কল্যাণ কিংবা তাদের সমর্থকদের চাহিদা অনুযায়ী কিছু প্রস্তাবিত নীতি ও কর্মসূচির ভিত্তিতে ঐকমত্য পোষণ করে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান হল রাজনীতির বৈজ্ঞানিক অধ্যয়ন। এটি একটি সামাজিক বিজ্ঞান যা শাসন ও ক্ষমতার ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক কার্যকলাপ, রাজনৈতিক চিন্তা, রাজনৈতিক আচরণ এবং সংশ্লিষ্ট সংবিধান ও আইনের বিশ্লেষণ করে।
কিন্তু রাজনীতির মুল ভিত্তির সাথে আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের তেমন কোন মিল নেই বললেই চলে। আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় রাজনীতি হচ্ছে অল্প সময়ে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া। দেশের আপামর জনগনকে কষ্টের মাঝে দিনানিপাত করিয়ে তাদের অধিকার নষ্ট ও ক্ষুন্ন কওে দেশের বারোটা বাজিয়ে নিজেদেও আখের গোছানোই হচ্ছে বর্তমান দেশের রাজনীতি। যেখানে আদর্শ ও নীতিহীন ছড়াছড়ি।
বাংলঅদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত যত সরকারই ক্ষমতায় ছিলো তারা কোন না কোন ভাবে রাজনীতিকে তাদের ব্যবসার হাতিয়ার বানিয়ে দেশের পরিবর্তে বিদেশে বাড়ি-গাড়ি-ব্যবসাসহ বিত্তভৈবরের মালিক হয়েছেন। দেশের প্রতি দেশপ্রেম সৃষ্টি না করে অনৈতিকভাবে অর্থ উপার্জনকেই তারা প্রাধান্য দিয়েছেন। যার ফলে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর আজও দেশকে নানা প্রতিকুলতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে আর বিদেশী কর্জের টাকার চাপ সইতে দিয়ে খেটে খাওয়া মানুষগুলো সুখ নামক শব্দটি ভুলে গিয়ে দিবারাত্র গাধার মত পরিশ্রম করেই ঠিকমত দু’বেলা খাবার জোগাড় করতে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
গত ৫ আগষ্ট হাসিনা সরকারের দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরই শোনা যাচ্ছে কিংবা দেখা যাচ্ছে দেশের রাজনীতিবিদরা কতটাই দেশপ্রেমিক ছিলেন। তারা এতটাই দেশপ্রেমিক ছিলেন যে,দেশের সাধারন মানুষের উপর ষ্টীমরোলার চালিয়ে উন্নয়ন নামক মুলা ঝুলিয়ে কয়েক লক্ষ কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তারা। আর এ কারনেই সেসকল দেশপ্রেমিকরা স্বপরিবারে চোরের মত দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে আবার অনেকে নিজেকে আত্মগোপনে রেখেছেন নিজেকে বাচাঁতে।
রাজনীতিকে যে দেশের রাজনীতিবিদরা ব্যবসা হিসেবে নিয়েছেন তার অনেক উদাহরন কিন্তু বিগত কয়েক বছরে দেশের আপামর জনতা দেখেছেন আবার বর্তমানেও দেখছেন। একটি রাজনৈতিক দলের যতগুলো সহযোগি সংগঠন রয়েছে আর সেখানে থাকা প্রতিটি মানুষই যেন রাজনীতিকে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর থাকেন। বিগত সরকারের প্রতিটি নেতাকর্মীই কোন প্রকার ব্যবসা-বানিজ্যে ছাড়া শুধুমাত্র দলের প্রভাব খাটিয়ে কোটি পতি বনে গেছে। আবার যারা রাজনীতি নামক ব্যবসায় ছিলেন না অথ্যাৎ খেটে খাওয়া মানুষগুলো কিন্তু তাদের সঞ্চয়ের টাকাগুলো ভেঙ্গেছেন শুধুমাত্র বেচেঁ থাকার তাগিদে। আবার তাদের শেষ সস্বলটুকুও কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে নিয়েছেন প্রভাবশালী ঐ রাজনীতিবিদ নামক ব্যবসায়ীরা।
আর এ সবের মুলে হচ্ছে,আমাদের দেশে রাজনীতিটা হচ্ছে প্রধান ব্যবসা। যেদিন থেকে রাজনীতিটাকে ব্যবসা হিসেবে মনে করা শুরু করেছেন দেশের রাজনীতিবিদরা ঠিক সেদিন থেকেই যেন দেশের দূর্নীতি নামক ব্যাধীটা দেশের সাধারন মানুষকে বেশী আক্রান্ত করেছে। অথ্যাৎ রাজনীতিবিদ নামক ব্যবসায়ীদের কারনে অভাবের যাতাকলে পড়তে হয়েছে দেশের মধ্য-নিন্ম মধ্য ও নিন্মবৃত্ত খেটে খাওয়া মানুষগুলোকে।
রাজনীতি নামক এ ব্যবসা থেকে কি কখনও মুক্তি মিলবে দেশের সাধারন খেটে খাওয়া মানুষগুলোর ? এমনটা লক্ষন কোনভাবে দেখা দিচ্ছেনা সাধারন মানুষের মাঝে। কারন ৫ আগষ্টের পর থেকে নব্য রাজনীতিবিদ নামক ব্যবসায়ীরা যেভাবে উঠেপড়ে লেগেছেন দখল বানিজ্যে তাতে সুস্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে এ জাতি কখনও রাজনীতি ব্যবসা থেকে মুক্তি মিলছেনা। প্রশ্ন উঠতে পারে যে,দেশের জনসংখ্যা কত আর রাজনীতিবিদের সংখ্যা কত ? উত্তর পাওয়াটা খুবই কঠিন কারন রাজনীতি এখন বংশগত হয়ে উঠেছে।
সাধারন মানুষের মতে, বিগত ১৫ বছরে আওয়ামীলীগের শাসনামলে যারা এমপি কিংবা মন্ত্রীত্বের রাজনীতি করেছেন তারা বেশীরভাগই হাজার কোটি টাকার মালিক। আবার যারা জেলা,থানা কিংবা ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা ছিলেন তারাও অনেকে শত কোটি টাকার মালিক বনে গিয়েছেন। অথচ সে সকল এমপি-মন্ত্রী কিংবা নেতাদের তেমন কোন ব্যবসা ছিলনা। শুধুমাত্র রাজনীতি করেই তারা সকলেই অর্থ ও বিত্তশালী হয়েছেন। যে কারনে কিশোর থেকে বয়স্ক সকলের মাঝে যেন রাজনীতিটা এখন গুরুত্বপুর্ন ব্যবসা। যে ব্যবসায় কোন পুজির প্রয়োজন হয়না প্রয়োজন হয় শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দলের পদ-পদবী।
দেশের রাজনীতিবিদদের এমন মন মানসিকতা থেকে আদৌ কি ফিরে আসতে পারবে নাকি ভবিষ্যতেও এর ধারা অব্যাহত থাকবে?
তবে দেশের আপামর খেটে মানুষগুলোর মতে,রাজনীতির এ কালচার থেকে সাধারন মানুষের মুক্তি পাওয়া অনেকটাই কষ্টসাধ্যকর ব্যাপার। বিগত ১৫ বছর দেখেছি রাজনৈতিক ব্যবসায়ীরা তাদের আখের গোছাতে গিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পসহ সাধারন মানুষের একখন্ড জমিও রক্ষা পায়নি। প্রয়োজনে নিজের অপরাধ ঢাকতে গিয়ে সুবিশাল ক্যাডার বাহিনী তৈরী করে প্রতিবাদীর উপর নির্যাতন চালিয়ে পরবর্তীতে তাদের রক্ষিত আইনের বাহিনী দিয়ে উক্ত প্রতিবাদীকে বিভিন্নভাবে হয়রানী ও মামলা ঠুকে দিয়ে অত্র সমাজে অপরাধী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন। অনেকে বলেন,বিগত ১৫ বছরের ন্যায় বর্তমানে প্রায় দুই মাসেও আমরা সেই আগের রুপ দেখছি একটি রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে। বিভিন্ন সেক্টর দখল,হামলা-ভাংচুর ও লুটতরাজের মত ঘটনা ঘটিয়ে সাধারন মানুষের মাঝে আতংক ছড়িয়ে দিয়ে তারাও প্রমান করে ফেলেছেন যে, আমরাও কিন্তু বিগত সময়ের রাজনৈতিক দলের ন্যায় রাজনৈতিক ব্যবসায়ী। সুতরাং এ জাতিকে রক্ষা করতে কিংবা সেবা করার মত কোন মনমানসিকতা সমৃদ্ধ কোন রাজনৈতিক দল বাংলার জমিনে নেই। কারন ৫ আগষ্টের পর থেকে দেশের অনেকস্থানে কিন্তু রাজনীতি নামক ব্যবসায়ীদের মাঝে জবর-দখল,লুটপাটসহ নানাবিধ কার্যকলাপের মাধ্যমে অনেকে কোটিপতি হয়ে গিয়েছেন। আগামী দিনগুলো তো পড়েই রয়েছে।
তবে সাধারন মানুষের মতে, যতদিন না পর্যন্ত রাজনীতিবিদদের মাঝে রাজনীতি মানে সাধারন মানুষের সেবা করা,রাজনীতি মানে ব্যবসা নয় এমন পরিবর্তন না হবে ততদিন পর্যন্ত সাধারন মানুষকে রাজনীতি নামক ব্যবসার যাতাকল থেকে মুক্তি পাবার সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীন।
লেখক
এম.রফিকুল্লাহ রিপন:
সভাপতি
ফতুল্লা মডেল রিপোর্টার্স ক্লাব