ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী আবারও তাদের সক্ষমতার এক প্রমাণ দিলো। মঙ্গলবার তাবরিজ শহরের আকাশে ভূপাতিত হয়েছে আরও একটি ইসরাইলি এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান। বিশ্বের সর্বাধুনিক ও স্টেলথ প্রযুক্তিসম্পন্ন এ যুদ্ধবিমানকে গর্ব করে ‘অদৃশ্য ঘাতক’ বলে থাকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল।
এটি ছিল ইরানের হাতে ধ্বংস হওয়া চতুর্থ এফ–৩৫, যা এক নতুন সামরিক বাস্তবতার দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। খবর মেহের নিউজ।
কেবল কৌশল নয়, প্রযুক্তিরও জয়
তাবরিজে এফ–৩৫ ভূপাতিত হওয়ার অর্থ হচ্ছে– ইরান এখন শুধু কৌশলগতভাবেই নয়, প্রযুক্তিগতভাবেও যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে একই স্তরে প্রতিযোগিতা করছে।
রাশিয়ান এস–৩০০ ও দেশীয়ভাবে উন্নত বোয়ার্দ–৩৭৩ সিস্টেমের পাশাপাশি ‘খোরামশাহর’ ও ‘সাইয়েদ আল–শোহাদা’ রাডার সিস্টেম ইরানকে এমন এক প্রতিরক্ষা ব্যূহ দিয়েছে, যা ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘নো–ফ্লাই’ ভাবমূর্তিকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।
ইসরাইলের জন্য বার্তা
যুদ্ধবাজ ইসরাইল দীর্ঘদিন ধরে এফ–৩৫–কে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের ফাইটার জেট শক্তির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এ যুদ্ধবিমানগুলো মূলত মার্কিন প্রযুক্তির নির্যাস। যার মূল্য ইউনিট প্রতি ৮০–১০০ মিলিয়ন ডলার।
এমনই শক্তিশালী স্টেলথ জেট ভূপাতিত হওয়া মানেই শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, কৌশলগত এক কঠিন বার্তাও।
ইরানের তরফ থেকে এমন সুনির্দিষ্টভাবে এফ–৩৫ টার্গেট করা একটি সামরিক আত্মবিশ্বাসেরও পরিচায়ক, যা আগে এতটা স্পষ্ট ছিল না। এটি একটি অঘোষিত বার্তা— ইরান যদি চায়, ইসরাইলের আকাশও নিরাপদ নয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের প্রতিক্রিয়া
এদিকে এখন পর্যন্ত এই চতুর্থ এফ–৩৫ ধ্বংসের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরাইলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এ ধরনের ঘটনাগুলোতে প্রথমে অস্বীকার, পরে ধীরে ধীরে ‘গোয়েন্দা তথ্য ভুল’ বা ‘দুর্ঘটনা’ বলে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।
তবে বাস্তবতা হচ্ছে– যুদ্ধক্ষেত্রে ইরান এখন শুধু প্রতিরক্ষা নয়, আক্রমণ–প্রতিরোধের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছে। এর অর্থ দাঁড়ায়– মধ্যপ্রাচ্যে এক নতুন সামরিক ভারসাম্য গড়ে উঠছে, যার নিয়ন্ত্রণ আর কেবল ওয়াশিংটন বা তেলআবিবের হাতে থাকবে না।
অন্ধকার পূর্বাভাস
এই যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার ঘটনাটি ইরানের সাময়িক একটি সফলতা নয়; এটি এক কূটনৈতিক প্রতিচ্ছবিও বটে। এটি বোঝায় যে, মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে ইরানের নিয়ন্ত্রণ যতটা বাস্তব, ততটাই প্রতীকী। আর ইসরাইলের জন্য এটি ভবিষ্যতের এক অন্ধকার পূর্বাভাস।