নারায়ণগঞ্জ বৃহস্পতিবার | ১০ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১২ই শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
  সর্বশেষঃ
প্রকাশিত সংবাদের আংশিক প্রতিবাদ
সোনারগাঁয়ে আরিফের হাত ভেঙ্গে দিলো কিশোরগাং সদস্যরা!
বিএনপি নেতা শাওনের মায়ের কুলখানিতে সাবেক এমপি গিয়াস সহ বিএনপি নেতাকর্মীরা
বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করল ভারত
বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক কার্যকর, এশিয়ায় শেয়ারবাজারে পতন
নানা আয়োজনে নারায়ণগঞ্জে বাংলাদেশ স্কাউট দিবস পালিত
যেভাবে রাজউকের ১০ কাঠার প্লট বাগিয়ে নেন পুতুল
আড়াইহাজারে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা
ভোল পালটে হাসিনাকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বললেন তুরিন আফরোজ
রুপগঞ্জের তারাবো’তে বিএনপি নেতার শেল্টার ডেভিল রুবেল ভূইয়া বাহিনী বেপরোয়া!
আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ভালবাসতে হবে – ইউএনও ফারজানা  
গাজায় ফিলিস্তিনীদের উপর হামলার প্রতিবাদে জামালপুরে মুখে কালো কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ
গাজায় ফিলিস্তিনে গনহত্যার প্রতিবাদে ইসলামপুরে বিক্ষোভ
ফতুল্লা রিপোর্টার্স ক্লাবের আহবায়ক কমিটি গঠন
ফতুল্লায় পুকুর থেকে অজ্ঞাত কিশোরের লাশ উদ্ধার
আমতলীতে সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষক নিহত
ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে বকশীগঞ্জে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল
গাজায় ইসরাইলের গণহত্যা বন্ধের দাবিতে দেশে দেশে বিক্ষোভ
রেস্টুরেন্টের সাইনবোর্ডে কোকাকোলার নাম থাকায় ভাংচুর
পুকুরে গোসল করতে নেমে প্রাণ গেল শিশুর
সোনারগাঁয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মিস্ত্রির মৃত্যু, আহত ১
না ফেরার দেশে সাবেক মেয়রের ভাই রিপন
আজানের সময় আল্লাহু আকবার বলার সাথে সাথে বর্বর ইজরাইল বোমা হামলা করে – মাসুম বিল্লাহ
“আমরা আমতলীবাসী” সংগঠনের কমিটি গঠন
আমতলীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালিত
গাজায় ইসরায়েলের নৃশংস গনহত্যার প্রতিবাদে উলামা পরিষদের বিক্ষোভ মিছিল
জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরাম জেলা কমিটির ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন!
দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন বক্তাবলী ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ আহম্মেদ
কাবাদ ও দেলোয়ারের নেতৃত্বে রশিদ চেয়ারম্যানকে ফুলেল শুভেচ্ছা
আমরা এই হত্যার নীতি থেকে পরিত্রাণ চাই – ফারহানা মানিক মুনা
Next
Prev
প্রচ্ছদ
আবারও মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই চক্কর

আবারও মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই চক্কর

প্রকাশিতঃ

মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় অনুসন্ধান

স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এসে সপ্তম দফায় যাচাইবাছাই করে বীর মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিতর্কমুক্ত গ্রহণযোগ্য তালিকা প্রণয়নই এর লক্ষ্য। জন্য মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা স্বীকৃতি প্রদানের বয়সসীমা পর্যালোচনাসহ সংশ্লিষ্ট আইন এবং নির্দেশিকাও সংশোধন করা হবে। ইতোমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি চাকরি পাওয়া কর্মকর্তাকর্মচারীর ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার (পিতামহ/পিতা/মাতা ইত্যাদি) গেজেট যাচাইবাছাই শুরু হয়েছে। তৈরি হয়েছেঅমুক্তিযোদ্ধা শনাক্তকরণ অভিযোগ ফরম এতে সারাদেশে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। 

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এই উদ্যোগ নেওয়ায় গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানির আশঙ্কা করছেন। আবার কেউ কেউ অভিযোগ তুলেছেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় বিগত সময়ে তারা গেজেটভুক্ত হতে পারেননি। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি প্রদানে সিদ্ধান্ত না নিলেও প্রায় দেড় হাজার আবেদন জমা হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চাচ্ছেন। আবার মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা সংশোধন নিয়েও মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ছাড়া অন্যান্য সেক্টরে ভূমিকা রাখায় যারা স্বীকৃতি পেয়েছেন, তাদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। কারণ নতুন সংজ্ঞায় তাদের সহমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে। তবে তাদের মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা অপরিবর্তিত থাকবে।

মুক্তিযোদ্ধার তালিকা নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সরকারের আমলে ছয়বার এ তালিকা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৪ সালে নতুন করে চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। এ জন্য অনলাইনের মাধ্যমে ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত গ্রহণ করা হয় প্রায় দেড় লাখ ব্যক্তির আবেদন। ২০১৭ সালের ২২ জানুয়ারি উপজেলা পর্যায়ে আবেদনকারীদের যাচাই-বাছাই শুরু হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে আরও যে ৫ দফা মুক্তিযোদ্ধার তালিকা হয়েছিল, সেই তালিকাও তখন যাচাই করা হয়।

দীর্ঘ যাচাই-বাছাই শেষে ২০২৩ সালের মার্চে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে মন্ত্রণালয়। তবে গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নতুন করে তালিকা যাচাই-বাছাই করে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক সমকালকে বলেন, অনেক তুঘলকি ব্যাপার হয়েছে। নিয়মের মধ্যে যদি হতো তাহলে এত কন্ট্রোভার্সি (বিতর্ক) হতো না। জনমনে অনেক প্রশ্ন আছে। তাই মুক্তিযোদ্ধার তালিকাটা ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত যাচাই-বাছাই করা হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণ তথ্যউপাত্তের ভিত্তিতে যে কোনো অমুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে পারবে। এ জন্য অভিযোগ ফরমও তৈরি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য তালিকা প্রণয়নই লক্ষ্য।

বর্তমান অবস্থা
আওয়ামী লীগ সরকার ষষ্ঠ দফায় যে চূড়ান্ত (সমন্বিত) তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৫৫। খেতাবপ্রাপ্ত, শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন আরও ১০ হাজার ৯৯৬ জন। এর মধ্যে ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধা ১ লাখ ৯৬ হাজার ৪৫৪ জন। তাদের মধ্যে জীবিত ৯১ হাজার ৫৫ জন।

সংখ্যা কেবলই বাড়ছে
স্বাধীনতার পর ১৯৮৬ সালে প্রথম জাতীয় কমিটি প্রণীত তালিকায় ১ লাখ ২ হাজার ৪৫৮ মুক্তিযোদ্ধার নাম পাঁচটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ করা হয়। তবে ওই তালিকা নিয়ে গেজেট হয়নি। ১৯৮৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ৭০ হাজার ৮৯২। ১৯৯৪ সালে বিএনপির আমলে করা তৃতীয় তালিকায় ৮৬ হাজার জন তালিকাভুক্ত হন। ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ১ লাখ ৮৬ হাজার ৭৯০ জনের নামের খসড়া প্রকাশ করে। এরপর যাচাই-বাছাই করে মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল থেকে প্রকাশিত চতুর্থ তালিকায় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৪৫২ জনের নাম মুক্তিবার্তায় প্রকাশ করা হয়। ২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের আমলে গেজেটে প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ৯৮ হাজার ৮৮৯। ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের ষষ্ঠ তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়ায় ২ লাখ ৮ হাজার ৪৫৮। এতে রাজনৈতিক বিবেচনায় আগের তালিকার হাজারও মুক্তিযোদ্ধাকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা বয়সসীমা 
১৯৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট গঠনের সময় মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘মুক্তিযোদ্ধা বলতে যে কোনো ব্যক্তি যিনি মুক্তিযুদ্ধে নিয়োজিত মুক্তিবাহিনীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।’ কিন্তু ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর এক গেজেটের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা করা হলে এর পরিধি বিস্তৃত হয়। ওই গেজেট অনুযায়ী ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ‘মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন’ যুগোপযোগী করে তা জাতীয় সংসদে পাস করে তৎকালীন সরকার। সংজ্ঞায় বলা হয়, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ হতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যে সকল ব্যক্তি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তাঁরাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন।’

সংজ্ঞায় রণাঙ্গনের সশস্ত্র বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল, স্বাধীন বাংলা বেতার কর্মী, মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রবাসে পেশাজীবী সংগঠক, ভারতে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেওয়া ব্যক্তি, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য, পাকিস্তান বাহিনীর হাতে নির্যাতিত নারী (বীরাঙ্গনা), মুক্তিযুদ্ধে চিকিৎসা প্রদানকারী চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্টদেরও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। পরে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রে অবদান রাখা ব্যক্তিদেরও মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভুক্ত করে মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার এবার সেই সংজ্ঞা পরিবর্তন করে রণাঙ্গনের বাইরে স্বীকৃতি পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পৃথক ধাপ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইন অনুযায়ী যাচাই-বাছাইসহ গেজেটভুক্তির কার্যক্রম সম্পন্ন করে। কাঠামো অনুযায়ী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আইন অনুযায়ী জামুকারও প্রধান উপদেষ্টা।

জামুকার ৯০তম সভায় গত ২ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা, বয়সসীমাসহ সংশ্লিষ্ট আইন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটভুক্তি-সংক্রান্ত নির্দেশিকা সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি এক পরিপত্রের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর যেসব মুক্তিযোদ্ধার বয়স ন্যূনতম ১২ বছর ৬ মাস ছিল, তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিশেষ প্রাধিকারের আওতায় জামুকার ৭৪, ৭৫, ৮৪তমসহ বিভিন্ন সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অন্তত দুই শতাধিক ব্যক্তিকে বয়সসীমা কমিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত করা হয়েছে। এতে বিগত সরকারের মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যও রয়েছেন।

পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বয়সসীমা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যদি বিদ্যমান বয়সসীমা বহাল থাকে, তাহলে এর চেয়ে কম বয়সী যাদের গেজেটভুক্ত করা হয়েছে তাদের গেজেট বাতিল হতে পারে। তবে বয়সসীমা নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট বিচারাধীন আছে। তাই সেটি নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে।

চাকরির কোটা
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম গত ১৪ আগস্ট সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কর্মরতদের তালিকা প্রণয়নের নির্দেশ দেন। তখন সরকারের ৬২ প্রতিষ্ঠানকে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তালিকা দিতে বলা হলেও চারটি প্রতিষ্ঠান এখনও দেয়নি। তবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিরত প্রায় ৮৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর তথ্য পাওয়া গেছে। এখন মন্ত্রণালয় থেকে তারা যে মুক্তিযোদ্ধার নামের বিপরীতে কোটা সুবিধা নিয়েছেন, তাদের সেই নামে থাকা গেজেট চূড়ান্ত (সমন্বিত) তালিকায় আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সবচেয়ে বেশি চাকরি হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে। যাচাই-বাছাই হওয়া তথ্যাদির মধ্যে ব্যাংকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে অমুক্তিযোদ্ধার সনদে চাকরি নেওয়ার হার অনেক বেশি। একটি ব্যাংকে ১৭৭ জনের মধ্যে তিনজন ব্যতীত ১৭৪ জনেরই জাল সনদ দিয়ে চাকরি নেওয়ার তথ্য মিলেছে। সব মিলিয়ে এমন প্রায় তিন হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর তথ্য রয়েছে। বিষয়টি চূড়ান্ত না হওয়ায় অধিকতর তদন্ত চলছে।

আবেদনের হিড়িক
মন্ত্রণালয় ও জামুকায় নতুন করে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে আবেদনকারীর সংখ্যা বাড়ছে। বিভিন্ন সময়ে প্রায় দেড় হাজার আবেদন জমা হয়েছে। অধিকাংশ আবেদনই অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর জমা হয়। তবে এসব আবেদনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। উপদেষ্টা ফারুক-ই আজম বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে জামুকায় আলোচনা হবে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে স্বীকৃতি পাননি। আবার ভাতা বন্ধ করে দিলে এসব আবেদন হতো না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মামলার কারণে কার্যক্রম বিঘ্নিত
প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও অমুক্তিযোদ্ধা প্রশ্নে বিরোধ গড়িয়েছে আদালতেও। মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে শুধু আদালতেই ৩,৬৭১টি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধাদের মামলাই বেশি, এর সংখ্যা ৭৪২। উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির বিরুদ্ধেও হাইকোর্টে ৬২৩টি রিট বিচারাধীন। আছে নতুন মুক্তিযোদ্ধা হওয়া থেকে বঞ্চিতদের ৬০৮টি রিটও। এসব মামলার কারণে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই এবং মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে।

তৈরি হয়েছে অমুক্তিযোদ্ধা ফরম
গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ যদি অমুক্তিযোদ্ধা হন, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের ফরম তৈরি করা হয়েছে। এটি জেলা ও উপজেলায় পাঠানোর কথা। দুই পৃষ্ঠার ফরমে সাক্ষী হিসেবে দু’জন মুক্তিযোদ্ধার তথ্যাদিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে তথ্য-উপাত্তসহ অভিযোগ দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। মন্ত্রণালয় বলছে, সাধারণ ব্যক্তিও অভিযোগ দিলে যাচাই করা হবে।

আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষা
জামুকার তথ্য অনুযায়ী, ১৬ হাজার ৯৬০ জনের আবেদন আপিল কমিটিসহ বিভিন্ন শাখায় নিষ্পত্তি বা শুনানি পর্যায়ে রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তারা বাদ পড়েছেন। কেউ কেউ গেজেটভুক্ত হলেও রাজনৈতিক কারণে বাদ পড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না
রাজনৈতিক বিবেচনার বাইরে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়নের কথা থাকলেও গত সরকারের আমলে সেটি হয়নি। স্বীকৃতি প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও রাজনৈতিক বিবেচনাকেই নানাভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়। গত সরকারের আমলে সাড়ে ১২ হাজার ব্যক্তিকে গেজেটভুক্ত করেছে মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক সচিবসহ রাজনীতিক রয়েছেন। এ ছাড়া প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগের ভিত্তিতে গত সরকারের আমলে ১১ হাজারের বেশি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল হলেও তাদের ‘মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা’ প্রত্যাহার করা হয়নি।

সমকালের অনুসন্ধানে গত এক দশকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হওয়ার পর ফের অমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন এমন তথ্যও রয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় সাড়ে চারশ।

স্বীকৃতির বাইরে অনেকেই
বিগত সরকারের আমলে প্রবাসী সংগঠক ও শব্দসৈনিক, বীরাঙ্গনা, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়ন করা হলেও তা অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। জানা গেছে ৫১৯ জন বীরাঙ্গনা, ১৭ জন প্রবাসী সংগঠক, ৩০০ জন শব্দসৈনিকসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছেন। এর বাইরে বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে অন্তত আরও দুই হাজার ব্যক্তি স্বীকৃতি পাননি।

স্বাধীন বাংলা বেতার কর্মী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন খান সমকালকে বলেন, বেতার কর্মীসহ বিভিন্ন ক্যাটেগরির অনেকেই এখনও স্বীকৃতির বাইরে রয়েছেন। তাদেরও স্বীকৃতি পাওয়া প্রয়োজন। সবার স্বীকৃতি না হলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিনির্মাণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে এখন পর্যন্ত ৫৬১ জনকে গেজেটের মাধ্যমে স্বীকৃতি দিয়েছে বিগত সরকার। যাদের নামে গেজেট হয়েছে, সেই পরিবারগুলোকে কোনো রাষ্ট্রীয় সহায়তা দেওয়া হয়নি। নির্ধারিত হয়নি তাদের মর্যাদাক্রমও। স্বীকৃতি পাননি দেশের অভ্যন্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা সংগঠক হিসেবে বা যুদ্ধ করেছেন। এ ক্ষেত্রে আইন বাধা হয়ে আছে।

বিশিষ্ট মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব সমকালকে বলেন, ৫৩ বছরেও বীর মুক্তিযোদ্ধার গ্রহণযোগ্য তালিকা হয়নি, এটি জাতীয় ব্যর্থতা। এবার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটি সফল হলে জাতির জন্য মঙ্গলজনক হবে। মুক্তিযোদ্ধারা প্রায় সবাই সত্তরোর্ধ্ব। কাজেই শেষ বয়সে নতুন করে যাচাই-বাছাইয়ের নামে কেউ যেন হয়রানি না হন, সেটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

 

সমকাল

 

এ সম্পর্কিত আরো খবর

উপদেষ্টা মন্ডলীঃ

ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম

সম্পাদক মন্ডলীঃ

মোঃ শহীদুল্লাহ রাসেল

প্রধান নির্বাহীঃ

মোঃ রফিকুল্লাহ রিপন

সতর্কীকরণঃ

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি
অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও
প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
সকল স্বত্ব
www.jagonarayanganj24.com
কর্তৃক সংরক্ষিত
Copyright © 2024

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ

বনানী সিনেমা হল মার্কেট
পঞ্চবটী ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ
ফোন নম্বরঃ ০১৯২১৩৮৮৭৯১, ০১৯৭৬৫৪১৩১৮
ইমেইলঃ jagonarayanganj24@gmail.com

Website Design & Developed By
MD Fahim Haque
<Power Coder/>
www.mdfahim.com
Web Solution – Since 2009

error: Content is protected !!