মাইনুল ইসলাম রাজু
আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
আমতলীর গুলিশাখালীর ইউনিয়নের কলাগাছিয়া গ্রামের বিকাশ ব্যবসায়ী কাসেম (২২) হত্যা মামলার ৩ মাস অতিবিাহিত হলেও কোন কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। এঘটনায় স্বজনদের কান্না থামছে না এখনো। বিচার না পেলে আগামী ঈদের আগে মা রাহিমা বেগম ছেলের কবরের পাশে গলায় দড়ি পেচিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন। কাসেম কলাগাছিয়া গ্রামের নুর উদ্দিন মোল্লার ছোট ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২৬ সেপ্টম্বর রাত সোয়া ৯টার সময় খুনের শিকার হন কাসেম। লাশ পরেছিল বাড়ির পাশের দোয়াচারা খালের পারের ধানক্ষেতে।
কাসেম বিকাশ ব্যবসার পাশাপাশি ছিল পটুয়াখালী সরকারী কলেজের বোটানির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। একই কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী লিজা বেগম নামের এক মেয়ের সাথে ছিল তার বন্ধুত্ব। ঘটনার দিন রাতে কাসেম তার দোকান বন্ধ করে বান্ধবী লিজার সাথে কথা বলতে বলতে বাড়ি রওয়ানা হন। এসময় আকস্মিক রাত ৯টা থেকে সোয়া ৯টার সময় লিজার সাথে আকস্মিক কাসেমের ফোনালাপ বন্ধ হয়ে গেলে লিজার সন্দেহ হয়। তাৎক্ষনিক লিজা এ বিষয়টি কাসেমের মা রাহিমা বেগমকে জানায়। মা রিজিয়া বেগম বাড়ির অন্য লোকদের নিয়ে তখন খেঁাজ করতে বাড়ির সামনে আসেন। এসময় দোয়াচারা খালের ধানক্ষেতে সীমানার পাশে মোবাইল ফোনের আলো জ্বলতে দেখে সেখানে গিয়ে দেখেন রক্তাত্ব অবস্থায় কাসেমের নিথর দেহ পরে আছে। স্বজন এবং এলাকাবাসী কাসেমকে রক্তাত্ব অবস্থায় উদ্ধার করে ওই রাতেই পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। এসময় হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিাকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে ২৮ সেপ্টেম্বর কাসেমের লাশ দাফন করা করা হয় নিজ বাড়িতে।
হাসপাতালে নেওয়া আগে গুরুতর আহত কাসেমকে দেখা নূরমহম্মদ মোল্লা বলেন, কাসেমের ঘাড়ে পিছন থেকে কোপ দেওয়া হয়। এতে তার ঘার প্রায় সব কেটে গেছে। মাথায় এবং হাতে ও পিঠে একাধিক কোপের চিহ্ন ছিল। যা একজন সুস্থ মানুষের পক্ষে দেখা সম্ভব না। এভাবে পাষন্ডরা নির্দয় ভাবে খুন করেছে।
কাসেম হত্যা কান্ডের পর তার বাবা নুর উদ্দিন মোল্লা অজ্ঞাত আসামী করে ২৮ সেপ্টেম্বর আমতলী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার ৩ মাস অতিবাহিত হলেও পুলিশ কোন কিনারা করতে পারেনি। তবে ঘটনার পর সন্দেহ জনক রিজু ও কামাল নামে দুজনকে আটক করে জেল হাজতে পাঠালেও তাদের নিকট থেকে কোন তথ্য পায়নি পুলিশ। আটক দু’জন চলতি মাসের ১৯ তারিখ আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে আসে।
কাসেম হত্যান্ডের সাথে জড়িতদের বিচার দাবীতে এলাকাবী সোচ্ছার। গত ৩০ নভেম্বর শত শত এলাকাবাসী কলাগাছিয়া বাজারে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে। মানববন্ধন থেকে তারা কাসেম হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত খুনিদের কঠিন বিচার দাবী করেন।
কাসেমের সহপাঠী এবং বান্ধবী পটুয়াখালী সরকারী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষেও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষাথর্ী লিজা বেগম বলেন, ঘটনার দিন রাত ৯টা থেকে সোয়া নয়টার মধ্যে কাসেমের সাথে আমার কথা চলছিল। আকস্মিক কথা বলা অবস্থায় কাসেমের মোবাই ফোন বন্ধ হয়ে যায় এবং কিছু শব্দ পাই। সাথে সাথে আমি কাসেমের মাকে জানাই এবং কাসেমের খেঁাজ নেওয়ার জন্য বলি। খুজতে গিয়ে তার হত্যাকান্ডের ঘটনা জানতে পাওে পরিবার। এঘটনায় আমি নির্বাক। কাসেম ছিলো আমার একজন ভালো বন্ধু। আমি এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের ফঁাসি দাবী করছি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এলাকায় নিহত কাসেমের কোন শক্র ছিল না। টাকার জন্য খুন হতে পারে বলে ধারনা। এ বিষয়ে আমাদের পুলিশী তদন্ত অব্যাহত আছে। তিনি আরো বলেন, ঘটনার পর পরই এলাকা থেকে সাবেক ইউপি সদস্য পলাতক রয়েছে। সেও আমাদের সন্দেহের তালিকায় রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলাগাছিয়া গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, কলাগাছিয়া গ্রামের দুলাল মোল্লা, তার বাবা শাহ আলম মোল্লা, সাবেক ইউপি সদস্য শানু চৌকিদার ও পশ্চিম কলাগাছিয়া গ্রামের আব্বাস মৃধা খুনের সাথে জড়িত থাকতে পারে। কাসেম হত্যা কান্ডের পর শানু ও আব্বাস মৃধা া পলাতক রয়েছে। টাকার জন্য তারা কাসেমকে হত্যা করেছে। ঘটনার দিন কাসেমের সাথে প্রায় ৫-৬ লক্ষ টাকা ছিল। কাসেমকে খুন করে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় খুনিরা।
কলাগাছিয়া বাজারের ব্যবসায়ী ছালাম মৃধা বলেন, কাসেম খুব ভালো ছেলে ছিল। লেখাপড়ার পাশাপাশি বাজারে সে বিকাশ ব্যবসা, মোবাইল সেট, খাতা কলম বই এবং ইলেকট্রনিক্স মালামাল বিক্রি করতো। তার মত একটি ভালো ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করেছে খুনীরা এটা কোন ভাবে মানা জায় না। আমি এ হত্যাকান্ডের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই।
নিহত কাসেমের বড় ভাই হাসান জানান, আমি ঢাকার কেরানিগঞ্জে রেনেটা কোম্পানিতে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে চাকুরি করতাম। ছোট ভঅই কাসেম বাড়িতে পরাশুনার পাশপাশি কলাগাছিয়া বাজাওে বিকাশ ব্যবসাসহ বিভিন্ন মালামাল বিক্রি করতো। ঘটনার দিন রাতে ৫-৬ লক্ষ টাকা নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছিল। টাকার জন্য খুনীরা আমার ভাই কাসেমকে হত্যা করে তার সাথে থাকা সকল টাকা পয়সা নিয়ে খুনিরা পালিয়ে যায়। এহত্যাকান্ডের সাথে জড়িত খুনিদেও পুলিশ এখনো চিহ্নিত করতে না পারায় আমরা হতাশ। আমার ভাই কাসেম হত্যার সাথে জড়িতদের খুজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক ফাসি চাই।
নিহত কাসেমের মা রাহিমা বেগম বলেন কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, মোর পোলাডাওে মাইর্যা খুনিরা ব্যামালা টাহা নিয়া গ্যাছে। পোলাডাওে ক্যারা মারছে এহনো মোরা জানতে পারি নাই। অওে যারা মারছে হেগো বাইর কইর্যা ফাসির দাবী জানাই। তিনি আরো বলেন, মোর পোলার খুনিদের বাইর করতে না পারলে এবং বিচার না হলে মুই আগামী ঈদেও আগে মোর পোলার কবরের পাশে গলায় দড়ি দিয়া মইর্যা যামু।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, কাসেম হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। আশা করি আমরা দ্রুত এ হত্যাকান্ডের সাথে যারা জড়িত খুজে বের করতে পারবো।