মানববন্ধনসহ পালন করেছেন নানা কর্মসূচি, কমপ্লিট সার্টডাউনের হুশিয়ারী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র নেতৃবৃন্দের!
মাইনুল ইসলাম রাজু আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি।
বরগুনার আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসান মুহাম্মদ আশরাফুল আলমের বদলি আদেশ প্রত্যাহার ও তাকে কর্মস্থলে পুনঃবহালের দাবিতে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। পালন করছেন মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি। বদলীর আদেশ প্রত্যাহার না হলে আমতলীকে কমপ্লিট সার্টডাউনের হুশিয়ারী দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র নেতৃবৃন্দ।
বদলি আদেশ প্রত্যাহার ও তাকে কর্মস্থলে পুনঃবহালের দাবিতে ইতিমধ্যে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে ঈমাম কল্যাণ ফাউন্ডেশন, ওলামা মাশায়েক আইম্মা পরিষদ, হাফেজ ফোরাম, ক্বওমী মাদ্রাসা ঐক্য পরিষদ, হুফফাজুল কুরআন ফাউন্ডেশন, ইসলামী আন্দোলন, বিএনপি, যুবদল, মুক্তিযোদ্ধা দল, ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রসহ ২০ থেকে ২৫টি ব্যনারে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। ওই সকল মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, আলেম ওলামাসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ বক্তব্য রাখেন। প্রতিটি মানববন্ধনে শহর থেকে গ্রামের হাজার হাজার সাধারণ মানুষ অংশ নিয়েছে।
ইসলামী আন্দোলন বরগুনা জেলার সভাপতি মুফতি মাওলানা ওমর ফারুক জিহাদী বলেন, আমতলী উপজেলায় ভালো কোন অফিসার বেশিদিন থাকে না। মুহাম্মদ আশরাফুল আলমের মতো সৎ ও দক্ষ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমতলীতে আরো অন্তত এক থেকে দের বছর থাকা দরকার। আমি সরকারের কাছে তার বদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানাই। উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব মোঃ তুহিন মৃধা বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে। তিনি তার যোগ্য নেতৃত্বে ওই সকল দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর করতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। এই মুহুর্তে ওই কাজগুলো সম্পন্ন করতে ইউএনও মুহাম্মদ আশরাফুল আলম এর কোনো বিকল্প নেই। এখন তার বদলীর আদেশ মেনে নেওয়া যায় না। তার বদলীর আদেশ প্রত্যাহার করা না হলে মহাসড়ক অবরোধ, হরতালসহ আরো কঠিন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। ব্যবসায়ী আলহাজ¦ মোঃ নুরুল ইসলাম, পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আবুল বাশার রুমি, সরকারী কলেজ মসজিদের ঈমাম মুফতী মাওলানা মোঃ সাইদুর রহমান বলেন, তারমতো একজন সৎ, জনবান্ধব ও আল্লাহওয়ালা মানুষ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে আমতলীতে আর আসেনি। তার কারনে আমতলীর প্রতিটি সরকারী অফিস এখন দুর্নিতীমুক্ত ও জনবান্ধব হয়েছে। এখন আমাদের সরকারী সেবা পেতে কোন ভোগান্তি পোহাতে হয় না। আমরা তাকে আরো দুইটি বছর আমতলীতে রাখতে মাঠে নেমেছি। আমরা তার বদলীর আদেশ প্রত্যাহার চাই।
বরগুনা জেলা জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ মনিরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, একজন সৎ, জনবান্ধব ও দক্ষ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম। তার বদলীর কথা শুনে সাধারণ মানুষ চোঁখের পানি ফেলে, নামাজ পড়ে দোয়া করে। তারমত একজন দক্ষ লোককে আমরা হারাতে চাই না। তাকে আমরা আরো অন্তত দুটি বছর আমতলীতেই রাখতে চাই। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারের কাছে তার বদলীর আদেশ প্রত্যাহার করে আমতলীতে রাখার জোর দাবী জানাই।
সত্তোরউর্ধ্ব বৃদ্ধা জয়নব বিবি বলেন, স্যারে খুব ভালো মনের মানুষ। মোগমত খয়রাতিগো অনেক সাহায্য সহযোগিতা হরেন। হুনছি স্যারে বোলে আরাকখানে জাইবেইক্কা। স্যারে চউল্লা গেলে মোগমত খয়রাতিগো কেডা সাহায্য সহযোগিতা হরবে। স্যারেরে মোরা আমতলী দিয়া জাইতে দিমু না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি মো. আবদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে প্রশাসনে তার মতো সৎ, নিষ্ঠাবান ও জনবান্ধব কর্মকর্তা ভীষণ প্রয়োজন। তার অসাধারণ সততা, বিচক্ষণতা ও দায়িত্বশীলতার মধ্য দিয়ে আমতলী উপজেলাকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে তার মত দক্ষ ইউএনও আমতলীতে খুবই প্রয়োজন। তাই সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের ছাত্র সমাজের আবেদন তাকে আমতলীতে পূণঃবহাল করা হউক। অন্যথায় আমতলী উপজেলাকে কমপ্লিট সার্টডাউন করে দেওয়া হবে তিনি হুশিয়ারী দেন।
উল্লেখ্য, গত ১৮ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আমিনুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলমকে কুমিল্লায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। এরপর থেকেই ইউএনওর বদলির আদেশ প্রত্যাহার ও বদলী ঠেকাতে মাঠে নেমে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ দফায় দফায় মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন।