ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গের কাছে পৌঁছাবে ‘ডানা’। বুধবার থেকেই আবহাওয়ার পরিবর্তন হতে শুরু করবে। তবে ঝড়টি কোথায় আছড়ে পড়বে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
ভারতের আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, প্রতি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিবেগে বইতে পারে ঝড়। ফলে সমুদ্র হবে উত্তাল। ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার গতিবেগও ছিল প্রতি ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার। তাই আবারও ঝড়ের প্রভাবে সব তছনছ হয়ে যেতে পারে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রাত কাটাচ্ছেন উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।
এছাড়া ২২ থেকে ২৪ অক্টোবর মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং ২৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত উত্তর বঙ্গোপসাগরে জেলেদের মাছ ধরতে না যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ।
এদিকে বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন আন্দামান সাগর এলাকায় সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে ২৩ অক্টোবর কিংবা ২৪ অক্টোবর আঘাত হানতে পারে।
এর প্রভাবে রাজধানী ঢাকাসহ, খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সে: বাড়তে পারে।
মঙ্গলবার পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ কথা বলা হয়েছে।
এদিকে সোমবার আবহাওয়া অফিসের এক সতর্কবার্তায় জানানো হয়েছে, লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম হবে ‘ডানা’। এ নামটি কাতারের দেওয়া।
সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। যেন স্বল্প সময়ের নোটিশে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে।
আবহাওয়া সংস্থার ঘূর্ণিঝড় অ্যালার্ট অনুসারে, আগামী ২৩ অক্টোবর সাগরে নিম্নচাপ তৈরি হবে। সেটি ২৩ বা ২৪ অক্টোবর নাগাদ একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে।
সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক ও আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্টে বলেছেন, বঙ্গোপসাগরে ‘ডানা’ নামে যে ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে তা আজ মঙ্গলবার নিম্নচাপ অবস্থায় উন্নীত হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে আজ মধ্য গভীর নিম্নচাপ ও আগামীকাল দুপুরের মধ্যে এটি পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘ডানার’ চলার পথও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের মতো হবে।
তিনি আরেকটি ফেসবুক পোস্টে বলেন, মঙ্গলবার সকাল ১১টায় ঘূর্ণিঝড়টি আন্দামান-নিকোবার দ্বীপপুঞ্জের ২০০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে নিম্নচাপ কেন্দ্রে অবস্থান করছে। নিম্নচাপের কারণে মেঘের সৃষ্টি হচ্ছে তা ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। আজ রাতেই চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি জেলার ওপরে বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এর আগে গত শনিবার আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ এক ফেসবুকে পোস্টে দেশের আলু চাষীদের পরামর্শ দেন। সেখানে তিনি বলেন, আগামী ২০ অক্টোবরের পরে জমিতে নতুন করে কৃত্রিম সেচ না দেওয়ার জন্য। বিশেষ করে খুলনা, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের আলু চাষীদের তিনি এ পরামর্শ দেন।
তিনি আরও বলেন, ‘সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় ডানা যে সময়ে বাংলাদেশে আঘাত করতে যাচ্ছে, সেই সময় বাংলাদেশের কৃষকরা আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। তাই, ২২ অক্টোবরের মধ্যে জমিতে পাকা ধান থাকলে, তা কেটে মাড়াই করে গোলায় উঠাতে হবে। নাইলে, এগুলো নষ্ট হবে।’
এই আবহাওয়াবিদ আরও বলেন, ‘কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে যে, শাক-সবজির জমি থেকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জমা বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে রাখার জন্য। বিশেষ করে খুলনা বিভাগের জেলাগুলোর উপরে খুবই ভারি বৃষ্টির আশঙ্কা করা যাচ্ছে।’