নারায়ণগঞ্জ বৃহস্পতিবার | ১০ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১২ই শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
  সর্বশেষঃ
প্রকাশিত সংবাদের আংশিক প্রতিবাদ
সোনারগাঁয়ে আরিফের হাত ভেঙ্গে দিলো কিশোরগাং সদস্যরা!
বিএনপি নেতা শাওনের মায়ের কুলখানিতে সাবেক এমপি গিয়াস সহ বিএনপি নেতাকর্মীরা
বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করল ভারত
বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক কার্যকর, এশিয়ায় শেয়ারবাজারে পতন
নানা আয়োজনে নারায়ণগঞ্জে বাংলাদেশ স্কাউট দিবস পালিত
যেভাবে রাজউকের ১০ কাঠার প্লট বাগিয়ে নেন পুতুল
আড়াইহাজারে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা
ভোল পালটে হাসিনাকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বললেন তুরিন আফরোজ
রুপগঞ্জের তারাবো’তে বিএনপি নেতার শেল্টার ডেভিল রুবেল ভূইয়া বাহিনী বেপরোয়া!
আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ভালবাসতে হবে – ইউএনও ফারজানা  
গাজায় ফিলিস্তিনীদের উপর হামলার প্রতিবাদে জামালপুরে মুখে কালো কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ
গাজায় ফিলিস্তিনে গনহত্যার প্রতিবাদে ইসলামপুরে বিক্ষোভ
ফতুল্লা রিপোর্টার্স ক্লাবের আহবায়ক কমিটি গঠন
ফতুল্লায় পুকুর থেকে অজ্ঞাত কিশোরের লাশ উদ্ধার
আমতলীতে সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষক নিহত
ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে বকশীগঞ্জে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল
গাজায় ইসরাইলের গণহত্যা বন্ধের দাবিতে দেশে দেশে বিক্ষোভ
রেস্টুরেন্টের সাইনবোর্ডে কোকাকোলার নাম থাকায় ভাংচুর
পুকুরে গোসল করতে নেমে প্রাণ গেল শিশুর
সোনারগাঁয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মিস্ত্রির মৃত্যু, আহত ১
না ফেরার দেশে সাবেক মেয়রের ভাই রিপন
আজানের সময় আল্লাহু আকবার বলার সাথে সাথে বর্বর ইজরাইল বোমা হামলা করে – মাসুম বিল্লাহ
“আমরা আমতলীবাসী” সংগঠনের কমিটি গঠন
আমতলীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালিত
গাজায় ইসরায়েলের নৃশংস গনহত্যার প্রতিবাদে উলামা পরিষদের বিক্ষোভ মিছিল
জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরাম জেলা কমিটির ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন!
দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন বক্তাবলী ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ আহম্মেদ
কাবাদ ও দেলোয়ারের নেতৃত্বে রশিদ চেয়ারম্যানকে ফুলেল শুভেচ্ছা
আমরা এই হত্যার নীতি থেকে পরিত্রাণ চাই – ফারহানা মানিক মুনা
Next
Prev
প্রচ্ছদ
দুর্নীতি-অনিয়মেও শাস্তির নজির নেই

দুর্নীতি-অনিয়মেও শাস্তির নজির নেই

প্রকাশিতঃ

অসত্য তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তি ঠেকানোর পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না সরকার। বরং অসৎ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর তৎপরতায় অমুক্তিযোদ্ধাদের দৌরাত্ম্য বাড়ছেই।

গত ১৪ বছরে প্রায় ছয় হাজার ব্যক্তি জালিয়াতি, প্রতারণা ও অসত্য তথ্য দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাবেক সচিবসহ প্রায় চারশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। অনিয়ম শনাক্ত হওয়ার পর তাদের গেজেট বাতিল হলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এমনকি তাদের থেকে ‘মুক্তিযোদ্ধা ভাতা’ বাবদ নেওয়া টাকা ফেরত নিতেও হয়নি কোনো উদ্যোগ।

কয়েকটি ঘটনায় অভিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার মধ্য দিয়ে ‘দায়’ সেরেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। থমকে আছে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় বিদেশি বন্ধু ও সংগঠনকে দেওয়া সম্মাননা ক্রেস্ট জালিয়াতির তদন্ত প্রক্রিয়াও।

দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা), মুক্তিযুদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্ট ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের বিরুদ্ধেও। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা সংসদে ৭৪ কোটি টাকা অনিয়মের ঘটনা দেড় যুগেও নিষ্পত্তি হয়নি।

এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে। প্রতারণার মাধ্যমে অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছেন– এটি সাধারণ কোনো অপরাধ নয়। এসব কর্মকাণ্ডের ফলে মুক্তিযুদ্ধের ভাবমূর্তি, যেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। এ জন্য কমিটি গঠন করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। কমিটির মতামতের ভিত্তিতেই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ
করতে হবে।’

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘অমুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটভুক্তির ক্ষেত্রে দুই রকম অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। প্রথমত, সুবিধাভোগী, যারা ভাতা পেয়েছেন। দ্বিতীয়ত, যারা এই অপরাধগুলোতে সহায়তা করেছেন। রাজনৈতিক প্রভাবে এসব অপরাধ হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের বিগত সরকারের মন্ত্রী, সচিব, মহাপরিচালক– কেউ এর দায় এড়াতে পারেন না। এ জন্য পুরো বিষয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

ভাতা ফেরত দেননি ‘জালিয়াতরা’
মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের স্বীকৃতি দিতে ২০০২ সালে গঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। বিধি অনুসারে মন্ত্রণালয়ের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী গেজেটভুক্তির সংশ্লিষ্ট আবেদন গ্রহণের জন্য অনুমোদন করলে সেটি জামুকায় নথিভুক্ত হয়। এরপর জামুকার বৈঠকের সুপারিশ অনুসারে সংশ্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধার আবেদন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গেজেট আকারে প্রকাশ করে বিজি প্রেস। তবে ভারতীয় তালিকায় উল্লিখিত মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটভুক্তির জন্য জামুকার সুপারিশের প্রয়োজন নেই। মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশ করে থাকে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর গত ১৪ বছরে মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটভুক্তির যাবতীয় নথি ও তথ্য পর্যালোচনা করেছে জামুকার নতুন পর্ষদ। এরপর এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার পর জামুকা থেকে তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১০ সালে জামুকা গঠনের পর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৫ হাজার ৯৮৭ জন অমুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিল করা হয়েছে। তবে তাদের কারও বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও ফেরত দেননি তারা।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী, গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধারা প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া চাকরি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন। গেজেট বাতিল হওয়া অমুক্তিযোদ্ধারাও এসব সুবিধা নিয়েছেন।

ক্রেস্ট জালিয়াতি
২০১৪ সালের ৬ এপ্রিল বিদেশি বন্ধু ও সংগঠনকে দেওয়া সম্মাননা ক্রেস্টে জালিয়াতির বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। পরে ওই বছরের বিভিন্ন সময়ে প্রথমে তদন্ত কমিটি, পরে অধিকতর তদন্ত কমিটি এবং সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে তৎকালীন সরকার। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকেও একই বছরের ১০ জুন থানায় মামলা ও হাইকোর্টে জনস্বার্থে এক আইনজীবীর পক্ষ থেকে একটি রিট করা হয়। তবে এর কোনোকিছুই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে পারেনি; বরং একের পর এক আইনি জট তৈরি করে তদন্ত বিলম্বিত করা হয়েছে।

ক্রেস্ট তৈরির নীতিমালা অনুযায়ী, এক ভরি সোনা ও ৩০ ভরি রুপার সংমিশ্রণে ক্রেস্ট তৈরির কথা। কিন্তু ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ ৩৪০ জন বিদেশিকে দেওয়া সম্মাননা ক্রেস্টে মাত্র ৩ আনা সোনা, রুপার বদলে ৩০ ভরি পিতলসহ তামা ও দস্তার মিশ্রণ দেওয়া হয়। ক্রেস্ট রাখার বক্স তৈরির জন্য ওক গাছের কাঠ ব্যবহারের কথা বলা হলেও তা হয়নি। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় এ জালিয়াতি ধরা পড়ে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জালিয়াতির ঘটনায় অন্য কোনো কমিটি প্রতিবেদন না দিলেও দীর্ঘ অপেক্ষার পর সংসদীয় কমিটি ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী, যুগ্ম সচিব আবুল কাশেম তালুকদার, উপসচিব ও জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব এস এম এনামুল কবির এবং ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা (শাখা সহকারী) আবুল কাশেমকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

একই ঘটনায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ বি এম তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অনিয়মের অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করে সংসদীয় তদন্ত কমিটি। এ প্রতিবেদন পাওয়ার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে একই ঘটনায় একাধিক তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া যায় কিনা, সে বিষয়ে আইনগত ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। এরপর ওই তদন্তের আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।

এদিকে, জালিয়াতির ঘটনায় ২০১৪ সালের ১০ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলাটি এখনও ঢাকার আদালতে বিচারাধীন। অন্যদিকে, হাইকোর্টেও এ বিষয়ে তদন্তসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে একটি রিট দায়ের করা হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সমকালকে বলেন, হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ তখন রিটের শুনানিতে বিব্রত হয়েছিলেন। রিটটি এখনও ফাইল হিসেবে আছে। আদালত কার্যতালিকাভুক্ত করলে এর শুনানি হতে পারে।

সরকারি কর্মকর্তা-র্কমচারীদের সনদ জালিয়াতি
মিথ্যা তথ্য দিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেওয়ায় ২০১৪ সালের জুন ও জুলাই মাসের বিভিন্ন সময়ে সাবেক স্বাস্থ্য সচিব নিয়াজ উদ্দিন মিয়া, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সাবেক সচিব এ কে এম আমির হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামানসহ ৪০ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সনদ বাতিল করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। পরে স্বাস্থ্য সচিব নিয়াজ উদ্দিন মিয়া, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সাবেক সচিব এ কে এম আমির হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। কিন্তু গত এক দশকেও এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিভিন্ন সময়ে আরও সাড়ে তিনশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু তাদের অনেকে এখনও দায়িত্বে রয়েছেন। অনেকে অবসরে গিয়েও সব সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন।

২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাকরির বয়স ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হয়। পরে ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়সসীমা এক বছর বাড়িয়ে ৬০ বছর করে সরকার। মূলত এর পর থেকেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে জালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধা সনদ গ্রহণের হিড়িক পড়ে। আর এতে সহযোগিতা করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মাসুদ সিদ্দিকী। যিনি নিজেও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়েছিলেন। তবে ২০১৪ সালে তাঁর ওই সনদ বাতিল করা হয়েছে।

জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম সমকালকে বলেন, ‘আমরা এগুলো খতিয়ে দেখব। ইতোমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নিয়ে অনিয়ম হয়েছে কিনা, সেগুলো খতিয়ে দেখার জন্য কমিটি করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া গেলে সরকারি চাকরি বিধি ও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ১৮টি লাভজনক প্রতিষ্ঠান নিয়ে ১৯৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করে বঙ্গবন্ধু সরকার। পরে জিয়া ও এরশাদ সরকার আরও ১৪টি প্রতিষ্ঠান যুক্ত করে। ট্রাস্টের উদ্যোগে আরও চারটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হলে মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৬টিতে। সব প্রতিষ্ঠানই বিভিন্ন সময়ে লাভজনক ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এসে ট্রাস্টের ৩১টি প্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে গেছে। যার মধ্যে রয়েছে– দেশে কোমল পানীয় কোকা-কোলা উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান তাবানি বেভারেজও। বর্তমানে ট্রাস্টের আওতায় থাকা ৩৬টি প্রতিষ্ঠানের ৭২.৩৮ একর সম্পত্তি রয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা।

বিভিন্ন সরকারের আমলে ট্রাস্টে দুর্নীতির কারণে বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইফতেখারুল ইসলাম খানসহ একই পদের অন্তত সাতজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে ওঠে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব ঘটনায় তদন্ত করলেও কারও বিচার নিশ্চিত করা যায়নি। জানা গেছে, ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় এর যন্ত্রপাতি ও বিভিন্ন সম্পদ নানাভাবে বিক্রি করা হয়েছে। সম্পত্তি বিক্রি ও ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রেও দুর্নীতি হয়।

মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন সমকালকে বলেন, ‘ট্রাস্টের যাবতীয় সম্পদ নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এটি সম্পন্ন হলে ট্রাস্টের আওতায় প্রতিষ্ঠানগুলো কোন পর্যায়ে আছে, কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে– তার একটি চিত্র পাওয়া যাবে। এর আলোকে পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

মুক্তিযোদ্ধা সংসদে ৭৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলে ১৯৭২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ৪৬টি খাতে ৭৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছে রাজস্ব অধিদপ্তর। সংস্থাটির নিরীক্ষায় এ অভিযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০০৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ৪০ বছরপূর্তি ও মুজিবনগর দিবস উদযাপন উপলক্ষে প্রায় ১০ কোটি ১০ লাখ টাকা বিভিন্ন খাতে অনিয়মতান্ত্রিক উপায়ে খরচ করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদকে) অভিযোগ করার পরও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় গত ২০১৬ সালের জুনে হাইকোর্টে দুটি পৃথক রিট করেন টাঙ্গাইলের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রবিউল আলম। পরে ওই বছরের ১৭ জুন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের দুর্নীতি ও লুটপাটের বিষয়টি তদন্ত করতে দুদককে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। রিটকারী মারা যাওয়ার পর এ বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক মহাসচিব ও মুক্তিযোদ্ধা মহাজোটের চেয়ারম্যান মো. মনিরুল হক সমকালকে বলেন, দুর্নীতি-অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিষ্ঠান দুটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি হওয়া দরকার। বাদীর অবর্তমানে হাইকোর্টে রিট দুটি পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের উদ্যোগ প্রত্যাশা করেন তিনি।

সার্বিক বিষয়ে উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম সমকালকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার মামলা চলছে। একেকটি মামলার একেক রকম পরিস্থিতি। আমরা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির বিষয়ে কাজ শুরু করেছি। আর ট্রাস্টের বিরুদ্ধে যে মামলা রয়েছে, সেটিও খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। যদি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকে, তাহলে সেটি করা হবে।’

সমকাল

এ সম্পর্কিত আরো খবর

উপদেষ্টা মন্ডলীঃ

ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম

সম্পাদক মন্ডলীঃ

মোঃ শহীদুল্লাহ রাসেল

প্রধান নির্বাহীঃ

মোঃ রফিকুল্লাহ রিপন

সতর্কীকরণঃ

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি
অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও
প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
সকল স্বত্ব
www.jagonarayanganj24.com
কর্তৃক সংরক্ষিত
Copyright © 2024

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ

বনানী সিনেমা হল মার্কেট
পঞ্চবটী ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ
ফোন নম্বরঃ ০১৯২১৩৮৮৭৯১, ০১৯৭৬৫৪১৩১৮
ইমেইলঃ jagonarayanganj24@gmail.com

Website Design & Developed By
MD Fahim Haque
<Power Coder/>
www.mdfahim.com
Web Solution – Since 2009

error: Content is protected !!