রাশেদুল ইসলাম রনি
জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যার দুই বছর আজ। ২০২৩ সালের ১৪ জুন রাতে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জের পাটহাটি মোড়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন সাহসী সাংবাদিক নাদিম। আহত অবস্থায় ১৫ জুন ময়মনসিংহ মেডিকেলে মারা যান তিনি। পরে ১৬ জুন বকশীগঞ্জের গুমেরচর গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় নাদিমকে। ১৭ জুন নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম সেই সময়ের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম বাবুসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ২০-২৫ জনকে আসামি করে বকশীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
সাংবাদিক নাদিম হত্যার দুই বছর পার হতে চললেও এখনো শোক কাটেনি নিহতের পরিবারে। দোষীদের শাস্তির দাবিতে দিন পার করছে নিহত নাদিমের পরিবার।
নিহত নাদিমের মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত বলেন-প্রতিটি মুহুর্ত আমার বাবার কথা মনে হয়। বাবা ছাড়া বেচে থাকাটা যে কত কষ্টের তা আমাদের চলা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আমার মা একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার স্বল্প আয়ে কোন রকম সংসার চলছে। বাবা মারা যাওয়ার পরে আমাদের অনেকেই আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু এখন কেউ আর খোঁজও নেই না।
রাব্বিলা তার বাবার হত্যার সঠিক বিচার দাবি চেয়ে বলেন, আসামিরা জামিনে এসে মুক্ত ভাবে ঘুরাঘুরি করছে।
তিনি আরে বলেন, আমার বাবার হত্যার এক নাম্বার আসামি মাহমুদুল আলম বাবু আ:লীগের নেতা ও তার ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাত নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা। তাদের নামে নাশকতা মামলাসহ কয়েকটি মামলার আসামি। তবুও তারা মুক্ত আকাশে ঘুরাঘুরি করছে।
নিহত নাদিমের বৃদ্ধা মা আলিয়া বেগম ছেলে নাদিম হত্যার বিচার চেয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন- আমার একমাত্র ছেলে ছিল নাদিম। ছেলে হারা যে মায়ের জন্য কত কষ্টের তা আমি বুঝতেছি। যারা আমার সন্তানকে হত্যা করেছে তাদের কঠিন শাস্তির দাবি জানাই।
নাদিম হত্যার পর শুরুতে থানা পুলিশ, পরে জেলা গোয়েন্দা শাখা, সিআইডি ঘুরে মামলার তদন্ত এখন র্যাবের হাতে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাবুসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় সিআইডি। বাদ পড়ে বাবুর ছেলে রিফাতসহ ২৭ জন। নারাজির পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী থেকে হত্যা মামলাটি তদন্ত করছে র্যাব।
তবে বাদী ও স্বজনদের অভিযোগ- চার্জশিটভুক্ত আসামী শাহজালাল ও শফিকুল গ্রেপ্তার হয়নি দুই বছরেও। এই মামলা যেন সাগর-রুনি হত্যা মামলার মতো আলোর মুখ না দেখে- এমন আশঙ্কা সাংবাদিক নেতাদের।
নিহত নাদিমের স্ত্রী ও মামলার বাদী মনিরা বেগম বলেন-দুই বছর হলো এখনো মামলা তদন্ত চলছে। সিআইডির তদন্তে যে নয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে দুইজন আজ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়নি। মামলাটি এখন র্যাবের কাছে আছে। আমার র্যাবের প্রতি আস্থা আছে। আশা করি র্যাব খুব কম সময়ের মধ্যেই সঠিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবে।
সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার প্রথম স্বাক্ষী আল মুজাহিদ বাবু বলেন- এই দুই চোখ দিয়ে যাদেরকে হত্যা করতে দেখলাম। তারা আজ জামিনে মুক্ত। একটি আসামীও জেলে নেই। আর মামলাটি চলছে ধীরগতিতে। হতাশার মধ্যে দিন পারকরছে নিহত নাদিমের পরিবার। এমন হতে থাকলে এই মামলাটি এক সময় আলোর মুখ দেখবে না বলে আমার আশঙ্কা।
জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি ও মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন-আমরা আশঙ্কায় আছি এই মামলাটি যাতে সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনি হত্যা মামলার মতো না হয়। প্রশাসনের কাছে আমাদের সাংবাদিক সমাজের আশা থাকবে- সাংবাদিক নাদিম হত্যা কারীদের বিচার যেনো খুব কম সময়ের মধ্যেই হয়।
তদন্ত চলমান ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকায় সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি র্যাব।