নারায়ণগঞ্জ সোমবার | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
  সর্বশেষঃ
রেলওয়ের জায়গা দখল করে শ্রমিকদল নেতা সফির ঘর নির্মাণ!
অসুস্থ বিএনপি নেতা অধ্যাপক মনিরুল ইসলামকে দেখতে গেলেন মুহাম্মদ সাদরিল
ইসলামপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার বিক্ষোভ সমাবেশ
নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে মানেই চাঁদাবাজীর অভয়ারন্য!
বকশীগঞ্জে রফিক ফাউন্ডেশনের শীতবস্ত্র বিতরণ
বাংলাদেশে হিন্দুদের জন্য কতদূর কী করার আছে ভারতের?
“সারাদেশে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ কলেজ শাখার মানববন্ধন”
আমতলীর ইউএনওর বদলীর আদেশ প্রত্যাহারের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন!
আমতলীতে স্ত্রী হত্যার অভিযোগ, গলায় ফাঁস লাগিয়ে স্বামীর আত্মহত্যার নাটক!
জনগণের রক্ত নিয়ে যারা হোলি খেলেছে তাদেরকে ক্ষমতায় দেখতে চাই না -মুফতি মাসুম বিল্লাহ
ইসলামপুর মোটর সাইকেল সংঘর্ষে কিশোরের মৃত্যু আহত দুই
সোনারগাঁয়ে ফেন্সিডিলসহ আটক-১
সোনারগাঁয়ে ৪ কেজি গাঁজাসহ গ্রেফতার-১ 
আমতলীতে খাবারের লোভ দেখিয়ে প্রতিবন্ধি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ!
ফতুল্লায় গাড়ী চোর চক্রের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার
হাসিনা-টিউলিপের রাশিয়া সফর ও ৪ বিলিয়ন পাউন্ড ঘুস
বিডিআর হত্যাকাণ্ড: ট্রাইবুনালে হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের
ভয়ংকর যেসব মাদকে আসক্ত তিশা টয়া সাফা ও সুনিধি
বিজয় দিবস উপলক্ষে জাগরনী ক্রীড়াচক্র ক্লাবের আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরন
নারায়ণগঞ্জ বধির উন্নয়ন সংস্থার পক্ষে বিজয় দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি
আমতলীতে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পালিত
আমতলীতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এতিম শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা
আমতলিতে বিক্রি কালে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে টিয়াপাখী ও সাপ অবমুক্ত
সোনারগাঁয়ে মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ২ দিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালা
সোনারগাঁয়ে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার-৬
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সীমান্ত হত‌্যাকান্ডে ছিনতাইকারী অ‌নিক গ্রেপ্তার
আলীরটেক ইউনিয়নের ডিক্রিরচর গুদারাঘাটে আরসিসি র‌্যাম নির্মাণ কাজ সম্পন্ন
নিষিদ্ধ সংগঠন রাতের আধারে ঝটিকা মিছিলের প্রতিবাদে ইসলামপুরে বিএনপির বিক্ষোভ
কুতুব আইল শতদল সমাজ কল্যাণ সংঘের উদ্যোগে বিজয় দিবস পালন
রূপগঞ্জে পূর্বাচল লেকে সুজানার পর মিলল শাহিনুরের লাশ
Next
Prev
প্রচ্ছদ
বায়ুদূষণ এবারও মাত্রাছাড়া, সব সংস্থা হাত গুটিয়ে

বায়ুদূষণ এবারও মাত্রাছাড়া, সব সংস্থা হাত গুটিয়ে

প্রকাশিতঃ

ঘাসের ডগায় জমছে শিশির, সন্ধ্যাটা কুয়াশামাখা। প্রকৃতির শীতল পরশ বলছে, তাপমাত্রা নামছে। শীতের মৃদু হিমেল বাতাসেই দূষণের ঘনঘটা। এরই মধ্যে ঢাকার বায়ুতে দূষিত বস্তুকণার পরিমাণ এতটাই বেড়েছে, যা অস্বাস্থ্যকর, উদ্বেগজনক।

রাজধানীর আকাশ আচ্ছন্ন হচ্ছে বিষবাষ্প, ধুলার আস্তরণ আর ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে। ধোঁয়াশাময় তিলোত্তমা এই নগরে এখন বুকভরে শ্বাস নেওয়াই কঠিন। থেমে থেমে মেগাসিটি ঢাকা বায়ুদূষণে বিশ্বসেরার তকমা লাগাচ্ছে। আড়াই কোটি মানুষের এই নগরে সামনে মহাবিপদ! পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ডামাডোলসহ নানা চাপা উত্তেজনায় পরিবেশগত উদ্বেগজনক এ ইস্যু গুরুত্বই পাচ্ছে না।

দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রের অনুপস্থিতিতে দূষণ রোধে মাঠে নেই কেউ। আগের মতো আর রাস্তায় ছিটানো হচ্ছে না পানি। দূষণে দায়ী যানবাহন কিংবা ইটভাটা চলছে দেদার। পরিবেশবিষয়ক সেমিনারে আলোচকরা অবিরাম গলা ফাটালেও কানে তুলছে না কেউ। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারি দপ্তরগুলোর দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ এখনও নেই। বায়ুদূষণ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষ্য, সবাই সমস্যার কারণ জানেন, সমাধানের পথও জানা। তবু সমাধান নেই। বায়ুদূষণের সংকট যে মাত্রায় সংক্রমিত হয়েছে, এখনই রাশ না টানলে বিপর্যয় অনিবার্য।

তালিকার ওপরের দিকে ঢাকা

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ঢাকার বায়ু শীতের শুরুতেই অস্বাস্থ্যকর ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ফলে সামনে শীত বাড়লে দূষণের তীব্রতা আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। সুবাতাস হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম ২.৫) যে সর্বাধিক সহনসীমা স্থির করেছে, ঢাকার বাসিন্দারা তা থেকে স্পষ্টতই বঞ্চিত। ওই মানদণ্ড অনুযায়ী, ঢাকাবাসী মাত্রাতিরিক্ত দূষণের মুখোমুখি। গতকাল বুধবার রাজধানীতে পিএম ২.৫-এর উপস্থিতি ডব্লিউএইচওর মানমাত্রার চেয়ে ৪৩ শতাংশ বেশি ছিল। দৈনিক ভিত্তিতে বিশ্বজুড়ে বায়ুদূষণ পরিস্থিতির হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরা সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের প্রতিবেদন বলছে, নভেম্বরজুড়ে দূষণে ঢাকা শীর্ষ দুই-তিনের মধ্যেই ছিল। গত ২৪ নভেম্বর বিশ্বের ১২০ শহরের মধ্যে বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। প্রতিষ্ঠানটির বায়ুদূষণ স্কেলে ঢাকার স্কোর ছিল ২৯১। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকার মাত্রা ছিল ১৮২, দূষিত শহরের তালিকায় তৃতীয়। আগের দিন মঙ্গলবার সকালে এই মাত্রা ছিল আরও বেশি, ঢাকায় ছিল ২৩৪, তবে অবস্থান ছিল চতুর্থ।

ঢাকার আমেরিকান দূতাবাস থেকে পাওয়া ২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত রাজধানীর ৯ বছরের বায়ুমান সূচকের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। সংস্থাটি বলছে, ৯ বছরের হিসাবে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির বায়ু সবচেয়ে বেশি অস্বাস্থ্যকর থাকে। গত ১৬ নভেম্বর ঢাকার বাতাসের মান বা একিউআই ২৬৯-তে উঠেছে, সারা বছরের গড় বায়ুমান সূচকে গত জানুয়ারিতে যা ছিল ২৬০।

বাতাসের এই অবস্থা কেন– এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, নভেম্বরে প্রায় বৃষ্টিশূন্য ছিল। বৃষ্টি না হওয়ায় রুক্ষতা বেড়েছে। গাছের পাতা ঝরাও এই সময়ে শুরু হয়েছে। ফলে গাছের যে পাতা ধুলা ধরে রাখত তার হার কমে যাওয়ায় বাতাসে ধুলার মাত্রা বেড়েছে। অন্যদিকে, শীত শুরু হওয়ায় নির্মাণকাজের গতি বাড়ছে।

ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, বায়ুদূষণ রোধে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে তা কার্যকর করতে হবে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ডিসেম্বরে দূষণের মাত্রা আরও বাড়তে পারে।

ধুলা বাড়াচ্ছে রাতের ট্রাক

বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, ঢাকার আশপাশের এলাকায় প্রায় ২০ হাজার ট্রাক বালু, ইট, সিমেন্ট, নির্মাণ এলাকার মাটি, পাইলিংয়ের কাদামাটি, রেডিমিক্স কংক্রিট পরিবহন করে। এসব ট্রাক গাবতলী, আমিনবাজার, মোহাম্মদপুর, বছিলা, আবদুল্লাহপুর, শ্যামপুর, পোস্তগোলা, পাগলা, ডেমরা, সারুলিয়া, কাঁচপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বালু ও অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চলাচল করে।

শনি ও রোববার রাতে রাজধানীর গাবতলী, যাত্রাবাড়ীসহ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে নির্মাণসামগ্রীবাহী ট্রাকের অবাধ চলাচল। গাবতলীতে দেখা যায়, সিমেন্টবাহী একটি খালি ট্রাক গাবতলীর দিকে যাচ্ছে। ট্রাকের কেবিনে পড়ে থাকা সিমেন্টের গুঁড়া বাতাসে উড়ছে।

গাবতলী ব্রিজঘাট এলাকায় তিন ঘণ্টা অবস্থান করে দেখা গেছে, কোনো ট্রাকের মালপত্রই ত্রিপল দিয়ে ঢাকা হয় না। এর কারণ জানতে চাইলে বালু ব্যবসায়ী আবদুর রহমান বলেন, ‘আমরা মালিকরা প্রতিটি গাড়িতে ত্রিপল কিনে দিছি। মাল লোড করার পরেই ত্রিপল দিতে হয়। দেখা যাচ্ছে, লেবাররা গাফিলতি করে ত্রিপল দিয়া ঢাকে না।’

রাজধানীতে নির্মাণ এলাকার অপসারণ করা মাটি ও পাইলিংয়ের কাদামাটি বহনকারী ট্রাক থেকেও অনেক কাদা চুইয়ে সড়কে পড়ে। এ ছাড়া নির্মাণ এলাকা ছেড়ে যাওয়ার সময় যানবাহনের চাকায় লেগে থাকা মাটি লেপ্টে সড়কের অনেকদূর পর্যন্ত যায়। এসব কাদা ও মাটি যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে সড়কে লেপ্টে থাকে। শুকিয়ে ধুলা তৈরি করে।

২০২১-২২ সালে বিশ্বব্যাংক পরিচালিত এক গবেষণার বরাত দিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা শাখার পরিচালক মো. জিয়াউল হক বলেন, আন্তঃমহাদেশীয় বায়ুদূষণ (ট্রান্সবাউন্ডারি এয়ার পলিউশন) ৩০ শতাংশ, রান্নার লাকড়ি ২৮ শতাংশ, বিদ্যুৎকেন্দ্র ২৪ শতাংশ, ইটভাটা ১৩-১৫ শতাংশ, নির্মাণকাজ ১১ শতাংশ, বর্জ্য পোড়ানো ১১ শতাংশ এবং যানবাহন ৫ শতাংশ দূষিত করছে বাংলাদেশের বাতাস। তবে আমরা এর সঙ্গে পুরোপুরি একমত নই। যানবাহনের দূষণ আমার মনে হয় আরও বেশি হবে। আর শীতে নির্মাণ কার্যক্রম বেশি হয়, ইটভাটা ও কলকারখানা চলে, বর্জ্য পোড়ানো হয়, নির্মাণসামগ্রী খোলা রাখা হয়, বালু রাস্তায় থাকায় গাড়ি গেলে তা উড়তে থাকে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান মনে করেন, অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণকাজ, ফিটনেসহীন পরিবহন আর ইটভাটা ঢাকার বাতাসকে দূষিত করছে।

হাইকোর্টের নির্দেশনার বাস্তবায়ন নেই

২০২০ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্ট বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে যে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তার মধ্যে নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, পানি ছিটানো এবং খোঁড়াখুঁড়ির ক্ষেত্রে দরপত্রের শর্ত মানার বিষয়গুলো ছিল। তবে সেগুলো মানা হয় না। মানাতে তেমন কোনো পদক্ষেপও দেখা যায় না। নির্দেশনা দেওয়ার পর ২০২০ সালের নভেম্বরে আদালত তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন। চার বছর পেরিয়ে গেলেও মাঝে মাঝে সড়কে পানি ছিটানো ও সভা-সেমিনার ছাড়া আর কোনো কিছু করতে দেখা যায়নি। গত দুই বছরে দূষণ দূর করতে আদালত ২০ বারের বেশি রুল জারি, তলবসহ নানা নির্দেশনা দেন। গত ১৮ জানুয়ারি পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। সর্বশেষ গত ৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অস্বাস্থ্যকর, অতি অস্বাস্থ্যকর ও বিপজ্জনক বায়ু সেবন থেকে জনসাধারণকে রক্ষায় অ্যালার্ট সিস্টেম চালুর মাধ্যমে জরুরি সতর্কবার্তা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে বায়ুদূষণের প্রধান কারণ চিহ্নিত করতে এবং বায়ুদূষণ কমাতে কর্মপরিকল্পনাও প্রণয়নের নির্দেশ দেওয়া হয়।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ৫ নভেম্বর বায়ুদূষণের উৎস নিয়ন্ত্রণ, বায়ুমান মনিটরিং ব্যবস্থা উন্নত করা এবং আইন প্রয়োগের প্রক্রিয়া শক্তিশালী করতে জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এটি কঠোর নিয়ম বাস্তবায়ন এবং শিল্প, পরিবহন ও নগরায়ণে পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তির প্রসারে একটি পথনকশা হিসেবে কাজ করবে। এ ছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে লাইভ বায়ুমান দেওয়া হয়েছে। মান অনুযায়ী ওয়েবসাইটে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বার্তা থাকলেও এটি বড় পরিসরে প্রচার হচ্ছে না।

মোটরযান মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকায় পুরোনো মোটরযান নিষিদ্ধ করতে গত ২৪ অক্টোবর ছয় মাস সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ২০২৫ সাল নাগাদ সব সরকারি নির্মাণে পোড়ানো ইটের ব্যবহার বন্ধ করতে এরই মধ্যে সরকারি অফিসে চিঠি দিয়েছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া ইটভাটাজনিত বায়ুদূষণ রোধে দেশে আর কোনো নতুন ইটভাটার ছাড়পত্র দেওয়া হবে না। পাশাপাশি পরিবেশ ছাড়পত্র না থাকা ৩ হাজার ৪৯১ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এত দিন রাস্তায় পানি ছিটালেও গত ৫ আগস্টের পর থেকে তা বন্ধ আছে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মেয়র, কমিশনারসহ অনেক কর্মকর্তা অনুপস্থিত। ফলে পানি ছিটানোর নতুন কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

টাকা উড়লেও দূষণ কমে না

ঢাকার বায়ুদূষণ কমাতে সরকার বড় অঙ্কের টাকা খরচ করেও নগরবাসীকে নির্মল বায়ুতে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ দিতে পারেনি। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বায়ুদূষণ রোধে সরকার ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দুটি প্রকল্পে অন্তত সাড়ে ছয় কোটি মার্কিন ডলার খরচ করেছে, যা বর্তমানে প্রায় ৭২০ কোটি টাকার সমান। এর বাইরে ছোট ছোট কিছু প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। বিশ্বের প্রভাবশালী সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এ ধরনের প্রকল্পে প্রায় ২০০ কোটি (দুই বিলিয়ন) ডলারের অর্থায়ন পেয়েছে বাংলাদেশ, যা বর্তমান বিনিময় মূল্যে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার সমান। প্রকল্প নেওয়ার আগে বলা হয়েছিল, ‘দেশের বায়ুমান খারাপ।’ প্রকল্পের মাধ্যমে বায়ুকে ‘নির্মল’ করা হবে। অথচ বিশ্বের শীর্ষ দূষিত বায়ুর শহরগুলোর তালিকায় ওপরের দিকেই থাকে ঢাকা।

মরছে মানুষ

মহাখালীর জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে সম্প্রতি চিকিৎসা নিতে আসা লোকজনের ভিড় দেখা যায়। টিকিট কিনে চিকিৎসকের সাক্ষাতের অপেক্ষায় থাকা মিরপুরের বাসিন্দা মরিয়ম বেগম বলেন, শীত আসার পর সর্দি-কাশি বেড়ে গেছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে শ্বাসকষ্ট।

জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, অক্টোবরের চেয়ে নভেম্বরে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যাজনিত রোগের চিকিৎসা নিতে এ হাসপাতালে রোগী বেশি এসেছে। নভেম্বরের প্রথম ২০ দিনের হিসাব বলছে, ৭ হাজার ৯১৬ রোগী এ হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যার চিকিৎসা নিয়েছেন। রোগীরা ক্রমাগত কাশি, বুক ও ফুসফুসের সমস্যা নিয়ে আসছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৮০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, বায়ুদূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি বিষণ্নতায় ভুগছেন ৬৫ বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি বয়সীরা। বায়ুদূষণ ছিল বাংলাদেশে মৃত্যু ও অক্ষমতার দ্বিতীয় বড় কারণ। ওই বছর প্রায় ৮৮ হাজার মৃত্যুর জন্য বায়ুদূষণকে দায়ী করা হয়। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, বাংলাদেশে ২০১৯ সালে বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় ৭৮ থেকে ৮৮ হাজার মানুষ মারা গেছে।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, বায়ুদূষণে তাৎক্ষণিক শ্বাসতন্ত্রীয় রোগ দেখা দেয়। যেমন– যাদের হাঁচি-কাশি-হাঁপানি আছে, তা বেড়ে যায়। অ্যালার্জি, ফাঙ্গাল ইনফেকশন জাতীয় রোগ, ফুসফুসের প্রদাহ, নিউমোনিয়া ও যক্ষ্মা বাড়ে।

ধরিত্রী রক্ষায় আমরার (ধরা) সদস্য সচিব শরীফ জামিল বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এই নগরের রাস্তাঘাটের ভগ্নদশা মেরামতের দায়িত্ব কারও আছে বলে মনে হচ্ছে না। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত পদক্ষেপের সব সম্ভাবনা গত সরকার খসড়া নির্মল বায়ু আইনকে পাশ কাটিয়ে একটি অধ্যাদেশ প্রণয়নের মাধ্যমে আগেই হিমঘরে পাঠিয়েছে। বর্তমান সরকার দূষণ নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত প্রচারসর্বস্ব অকার্যকর কিছু খণ্ডিত উদ্যোগ নেওয়া ছাড়া আর কিছু করতে পেরেছে বলেও প্রতীয়মান নয়।

এ ব্যাপারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বায়ুদূষণ রোধে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনেক কাজ সরাসরি বাস্তবায়ন করার সুযোগ নেই। তবে আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশনগুলোকে চিঠি দিয়েছি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে বিভিন্ন রাস্তায় পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে বলেছি। সবুজায়নের পরিকল্পনা নিতে বলেছি। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দিয়েছি, নির্মাণসামগ্রী যাতে ঢেকে রাখা হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি, বালু-সিমেন্টসহ নানা নির্মাণসামগ্রী নিয়ে ঢাকায় আসা যানবাহনগুলোকে যেন আচ্ছাদন করে আনার ব্যবস্থা করা হয়, যাতে বালু না ছিটায়। বায়ুমান ঠিক রাখতে যে যে সংস্থার যা যা করণীয়, তা পালন করতে আমরা সবাইকে চিঠি দিয়েছি।

 

এ সম্পর্কিত আরো খবর

উপদেষ্টা মন্ডলীঃ

ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম

সম্পাদক মন্ডলীঃ

মোঃ শহীদুল্লাহ রাসেল

প্রধান নির্বাহীঃ

মোঃ রফিকুল্লাহ রিপন

সতর্কীকরণঃ

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি
অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও
প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
সকল স্বত্ব
www.jagonarayanganj24.com
কর্তৃক সংরক্ষিত
Copyright © 2024

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ

বনানী সিনেমা হল মার্কেট
পঞ্চবটী ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ
ফোন নম্বরঃ ০১৯২১৩৮৮৭৯১, ০১৯৭৬৫৪১৩১৮
ইমেইলঃ jagonarayanganj24@gmail.com

Website Design & Developed By
MD Fahim Haque
<Power Coder/>
www.mdfahim.com
Web Solution – Since 2009

error: Content is protected !!