মাইনুল ইসলাম রাজু , আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
হাতের মেহেদির লালা রং মুছতে না মুছতেই স্বপ্নের সোনার সংসার শেষ হয়ে গেছে লামিয়া আক্তার তিন্নি (২০) নামের এক গৃহবধূর। বিয়ের মাত্র ৮ মাসের মাথায় স্বামী মনিরুলের লাঠির আঘাতে নির্মম ভাবে নিহত হয়েছে সে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এঘটনা ঘটে আমতলী উপজেলার আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের তারিকাটা গ্রামে। নিহত লামিয়া আক্তার তিন্নি উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের চন্দ্রা গ্রামের নিজাম উদ্দিন হাওলাদারের মেয়ে।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের চন্দ্রা গ্রামের নিজাম উদ্দিন হাওলাদারের মেয়ে তিন্নি আক্তার লামিয়ার সাথে আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের তারিকাটা গ্রামের হারুন খানের ছেলে আটো চালক মনিরুলের সাথে চলতি বছরের মার্চ মাসে বিয়ে হয়। তিন্নি তখন এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। বিয়ের মাত্র ৮ মাসের মাথায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্ত্রীর পরকিয়ার তুচ্ছ অভিযোগ তুলে স্বামী মনিরুল ইসলাম স্ত্রী তিন্নির মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে এ সময় তিন্নি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে। তখন মনিরুল তার পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় তিন্নিকে আমতলী হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক তখন তাকে মৃত্যু ঘোষনা করে। এসময় মনিরুল স্ত্রী লাশ ফেলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন হাসপাতালে উপস্থিত জনতা মনিরুলকে আটক করে আমতলী থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ তিন্নির মরদেহ হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করে বুধবার সকালে ময়না তদন্তের জন্য বরগুনার জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।
তিন্নির ভাই রাব্বি হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, আমার বোনকে ৩লক্ষ টাকা যৌতুকের জন্য পিটিয়ে হত্যা করেছে। বিয়ের সময় আমার বাবা তিন্নির সংসারের সুখের কথা ভেবে সংসারের মালামাল এবং গলার চেইন ও কানের দুল দিয়েছিল। কিন্তু আমার বোনের কপালে সে সুখ সইলোনা মাত্র ৮ মাসের মাথায় তাকে ৩লক্ষ টাকার জন্য পিটিয়ে খুন করা হলো। নিহত তিন্নির মামা নজরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন মনিরুল আমার ভাগ্নি তিন্নির নিকট নগদ ৩লক্ষ টাকা দাবী করে। কিন্ত তিন্নির দরিদ্র বাবার পক্ষে এ যৌতুক দেওয়া সম্ভব না বিধায় তিন্নি টাকা দিতে অস্বীকার করায় তিন্নির স্বামী তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। এ বিষয়ে আমরা মামলা করবো। নিহত তিন্নির মা রাহিমা বেগমমম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, মোর মাইডার কপালে সংসার সইলো না। কি দোষ ছিল মোর মাইয়াডার। অল্প কয়দিন বিয়ার বয়স এইয়ার মধ্যে কিবা হরছে মোর মাইয়ায় যে হ্যারে পিডাইয়া মাইর্যা হলাইতে অইবে। মাইয়াডায় কইতো মা মুই একটা সোনার সংসার বানামু। মোর মাইয়াডার আর সোনার সংসার বানানো অলো না মুই এইয়ার বিচার চাই। চাওড়া ইউনিয়নের চন্দ্রা গ্রামের ইউপি সদস্য রুহুল আমিন বলেন, যৌতুকের জন্য তিন্নি আক্তার লামিয়কে স্বামী মনিরুল এবং তার শ্বশুর হারুন খান শ্বাশুরী লাইলী বেগম প্রায়ই নির্যাতন করতো। ঘটনার দিন স্বামী মনিরুল স্ত্রী তিন্নির নিকট ৩ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করে। এ টাকা দিতে না পারায় তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। আমরা এঘটনার বিচার চাই। তবে অভিযুক্ত মনিরুলের অভিযোগ স্ত্রী তিন্নি পরকীয়া করতো। আমি নিষেধ করার পরও সে শুনতো না। এ নিয়ে স্থানীয় ভাবে সালিশ দরবারও হয়েছে। ঘটনার দিন রাতে এ নিয়ে স্বামী স্ত্রীরির মধ্যে ঝগড়ার এক পর্যায়ে মাথায় সামন্য লাঠির আঘাতেই তার মৃত্যু হয় বলেও সে স্বীকার করে।
আমতলী হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. মনিরুজ্জামান খান বলেন, তিন্নির মাথায় লাঠির আঘাতের চিহ্ন ছিল। হাসপাতালে আনার আগেই তার মুত্যু হয়। আমতলী থানার ওসি তদন্ত মো. আমির হোসেন সেরনিয়াবাদ বলেন, হাসপাতাল থেকে তিন্নির লাশ উদ্ধার কওে ময়না তদন্তের জন্য মরগুনার মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত তিন্নির স্বামী মনিরুলকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্ততি চলছে।