নারায়ণগঞ্জ রবিবার | ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
  সর্বশেষঃ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে নিট কনসার্ন গ্রুপের উত্তেজনা
আকিজ ফ্লাওয়ার ও ডাল মিলের উৎপাদন ক্ষমতা প্রতিদিন ৬শ টন অর্জিত হয়েছে : সিইও 
শীতলক্ষ্যায় নিখোঁজ স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধার
শামীম ওসমানের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে শত কোটি টাকার মালিক নিজাম
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি কি ভারতের নতুন মাথাব্যথার কারণ?
শেরপুরের শ্রীবরদীতে ছাত্রদল নেতা জামায়াতে যোগদান
রাস্তা ঘাটের অসমাপ্ত কাজগুলো পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন করা হইবে- ডিজি রেজওয়ানুর রহমান
যারা দেশের কল্যাণ চায় তারা নির্বাচন মাথা ঘামায় না – মুফতি মাসুম বিল্লাহ
আমতলীতে আ;লীগ সভাপতির ইসলামী আন্দোলনের সদস্য ফরম পূরন
কাশিপুরে বিএনপি নেতা আরিফ মন্ডল ফেন্সিডিলসহ আটকের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল!
প্রশাসন কার পক্ষে,পাল্টাপাল্টি অভিযোগে এনসিপি – বিএনপি
সংস্কার, বিচার নাকি নির্বাচন?
আইএমএফের ঋণের কিস্তি,সমঝোতায় বাধা যেখানে
বক্তাবলী ইউনিয়ন ছাত্রদলের উদ্যোগে ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত
NEPC Consortium Power Ltd.-এর ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকবৃন্দের পাওনার দাবীতে মানববন্ধন
আড়াইহাজার থানার ওসির ঘুষ গ্রহনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল! দর্শকের ভূমিকায় এসপি
দেশের জনগণ আগে সংস্কার পরে নির্বাচন চায় – মুফতি মাসুম বিল্লাহ
ফতুল্লায় শিশুকে জিম্মি করে গৃহবধূকে ধর্ষণ, আসামি গ্রেফতার
জাকির খানের সাথে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন মন্দিরের নেতৃবৃন্দের শুভেচ্ছা বিনিময়
সিদ্ধিরগঞ্জ ঝুটের গোডাউনসহ তিন দোকানে আগুন
কাশিপুরে শামীম-বাদলের সৈনিকরাই এখন জাকির খানের ছায়াতলে!
র‌্যাব-১১’র অভিযানে অস্ত্রসহ মোজাম্মেল গ্রেফতার
কাশিপুরের পাভেল হত্যা মামলার আসামী জুবায়ের গ্রেফতার
ডিসেম্বর-জানুয়ারিতেই কেন নির্বাচনের জন্য চাপ দিচ্ছে দলগুলো?
নির্বাচন নিয়ে এখনই মাঠে নামছে না বিএনপি
সোনারগাঁয়ে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা সহ মামুন মিয়া গ্রেফতার
বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়ানোর ইচ্ছা নেই ভারতের
শেরপুরের শ্রীবরদীতে ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে হামলা ও জমি দখলের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
বন্দরে র‌্যাবের অভিযানে ফেন্সিডিলসহ আটক ৫
জামালপুরে মাকে হত্যার ঘটনায় ছেলে গ্রেফতার
Next
Prev
প্রচ্ছদ
হাসপাতালই ছিল তাদের রাজপথ

হাসপাতালই ছিল তাদের রাজপথ

প্রকাশিতঃ

সমকাল অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদটি জাগো নারায়ণগঞ্জ২৪.কমের পাঠকদের সুবিধার্থে হুবুহু প্রকাশ করা হলো:

কারও শরীরে বুলেটের ক্ষত, কারও উড়ে গেছে খুলি। গুলিবিদ্ধ চোখ নিয়ে কাতরাচ্ছেন অনেকে। প্রতিনিয়ত এমন বীভৎস পরিস্থিতি সামলাতে হয়েছে চিকিৎসকদের। শিক্ষার্থীদের পাশে থাকায় পেয়েছেন প্রাণনাশের হুমকি; হয়েছেন বদলি। ভয়াল অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন তিন চিকিৎসক। তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তবিবুর রহমান

সেবা দেওয়ায় শাস্তি পান ডা. শহীদুল: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতের ঢল নামে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। সেবা দিতে হিমশিম চিকিৎসকরা। ওই সময় বিভিন্ন হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা দিতে বাধার খবর পাচ্ছিলেন এখানকার চিকিৎসকরা। এতে ভয়-আতঙ্ক তৈরি হলেও সেবাদান বন্ধ রাখেননি ডা. শহীদুল ইসলাম আকনের মতো অনেকে। ডা. আকন বলেন, ১৮ থেকে ২০ জুলাই সর্বোচ্চ রোগী আসে; মৃত্যুও বেশি। গুরুতর আহতদের জরুরি বিভাগ থেকে সরাসরি পাঠানো হয়  অর্থোপেডিক্স বিভাগে। সেখানে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। প্রথম দিকে হাসপাতালে বেশি আসেন ছররা গুলিতে আহতরা। তবে ১৮ ও ১৯ জুলাই যারা আহত হয়ে আসেন, তাদের শরীরে ছিল বড় গুলির চিহ্ন। আগে এমন গুলিতে আহতদের ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা ছিল না। তাদের মৃত্যুঝুঁকি ছিল বেশি। দ্রুত সময়ে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে না পারায় অনেকে মারা গেছেন। চিকিৎসাজীবনে এই প্রথম এ ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হই।

আন্দোলনের সময় ঢামেক হাসপাতালের অধিকাংশ অপারেশন থিয়েটারে রুটিন অস্ত্রোপচার বন্ধ ছিল। এগুলোতে আন্দোলনে আহতদের অস্ত্রোপচার করা হয়। ডা. আকন বলেন, ‘এমন লোকও পেয়েছি, যার পেটে গুলি লেগে নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে গেছে! কারও পায়ে গুলি লেগে হাড় বের হয়ে গিয়েছিল। অনেকেই গুলিতে আলাদা হয়ে যাওয়া পায়ের অংশ নিয়ে হাসপাতালে আসেন। একের পর এক আসতে থাকায় মেঝেতেও জায়গা ছিল না। অপারেশন থিয়েটারের সামনে রোগীর মাত্রাতিরিক্ত চাপ ছিল। কাকে রেখে কাকে অস্ত্রোপচার করা হবে– এই সিদ্ধান্ত নিতে চিকিৎসকরা দ্বিধায় পড়ি।’

জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ঢামেকে আহতদের ঢল নামে। ওই সময় বেশ কিছুদিন মধ্যরাতেও বাসায় ফিরেছেন আকনসহ অন্যান্য চিকিৎসক। ২০ জুলাইয়েও একই গতিতে আহতরা আসতে থাকেন। এদিন কারফিউ জারি করে সরকার।

ডা. আকন বলেন, ‘কারফিউর মধ্যেও আমরা হাসপাতালে আসি। পরিস্থিতি এমন ছিল, আতঙ্কে মোবাইলে রাখা আন্দোলনে আহতদের ছবি ডিলিট করেছি। হাসপাতালে রোগীর চাপের সঙ্গে যুক্ত হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা। পুলিশ কর্মকর্তারা হাসপাতালে নিবন্ধন খাতা থেকে রোগীর তথ্য এবং আহতদের আঙুলের ছাপ নিয়ে যান। জাতীয় পরিচয়পত্রও নিয়ে যান তারা। এমন পরিস্থিতিতে ভয়ে অনেক গুলিবিদ্ধ হাসপাতালে চিকিৎসা নেননি। অনেকে শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েই বাসায় ফিরেছেন। তবে যাদের একেবারে উপায় ছিল না, তারা আতঙ্কের মধ্যে চিকিৎসা নেন। ১৯ জুলাইয়ের পর সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপি আহতদের খোঁজখবর নিতে হাসপাতালে আসেন। তবে তাদের আসল উদ্দেশ্য ছিল, তালিকা করে সবাইকে গ্রেপ্তার করা।’

এ পরিস্থিতির মধ্যে ২৩ জুলাই সব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীকে ডেকে ঢাকা মেডিকেলে একটি সভা হয়। ডা. আকন ভেবেছিলেন, যারা আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা দিয়েছেন, তাদের সম্মাননা দেওয়া হবে। কিন্তু তাঁর এ ভাবনা ছিল ভুল। তিনি বলেন, ‘সভায় আলোচনা হয়, আন্দোলনে আহতদের যেসব চিকিৎসক সেবা দিয়েছেন, তারা ঢাকা মেডিকেল থাকার যোগ্য নন। যেসব চিকিৎসক আন্দোলনের পক্ষ ছিলেন বা আহতের চিকিৎসায় অতিরিক্ত আগ্রহ দেখিয়েছেন, তাদের ঢাকা মেডিকেলে থাকার দরকার নেই। এর দুই দিন পর একটি মেইল আসে। এটি খুলে দেখি, আমাকে সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজে বদলি করা হয়েছে। মোট পাঁচজনকে বদলি করা হয়।’ তবে থেমে থাকেননি ডা. আকন। আরও কয়েক চিকিৎসক মিলে একটি ফান্ড তৈরি করে আন্দোলনে আহতদের সহায়তা করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন তিনি আবার ঢামেক হাসপাতালে ফিরে আসেন। সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

আহতদের পরিচয় বদলে চিকিৎসা দেন মাহফুজুর: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বেগবান হয়। সেই সঙ্গে সারাদেশে বাড়তে থাকে হতাহতের সংখ্যা। ১৯ জুলাই পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। এদিন জুমার পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ ছুটতে থাকে হাসপাতালে। এর মধ্যে যারা মাথায় গুলিবিদ্ধ ও আঘাত পেয়েছেন, তাদের নেওয়া হয় রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট  অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালে (এনআইএনএস)।
হাসপাতালের সেদিনের পরিস্থিতির বর্ণনায় ডা. মাহফুজুর বলেন, ‘দুপুরের পর থেকে একের পর এক রক্তাক্ত, জখম শিক্ষার্থী ও জনতা আসতে থাকে। চারদিকে আহতদের চিৎকার। কেউ কেউ অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে আসে। ১৫-২০ জনকে ভর্তি করালাম। আর কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিলাম। অনেককেই রেফার করলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে। সেদিন সারারাত জেগে আমিসহ আরও কয়েক সার্জন অস্ত্রোপচার করে আহতদের শরীর থেকে বুলেট বের করলাম।’

১৯ জুলাইয়ের ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে নতুন আতঙ্ক হিসেবে যুক্ত হয় ডিবি পুলিশের হানা। ডা. মাহফুজুর জানান, তারা হাসপাতালে এসে আন্দোলনে আহতদের খুঁজতে থাকে। দেখতে চায় সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ। এর মধ্যে ডা. মাহফুজুরের মাথায় একটি বুদ্ধি আসে। তিনি আন্দোলনে আহতদের ফাইল নিয়ে কৌশলে নাম-পরিচয় বদলে দেন। আর লিখে রাখেন– সড়ক দুর্ঘটনায় আহত। এভাবেই সেদিন অনেককে গ্রেপ্তার থেকে বাঁচান তিনি।

এর আগের দিন হৃদয়বিদারক ঘটনার মুখোমুখি হন ডা. মাহফুজুর। তিনি বলেন, ‘১৮ জুলাই হাসপাতালে এসেই দেখি, অসংখ্য আহত মানুষ বারান্দায় কাতরাচ্ছে। সবাই রক্তাক্ত। এত মানুষ এক হাসপাতালে কেন– জানতে চাইলে তারা বলেন, বিভিন্ন হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা না দেওয়ায় এখানে এসেছেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম, এটা ছিল ওপর মহলের নির্দেশ, যাতে কোথাও আন্দোলনে আহতরা চিকিৎসা না পায়।’
রায়হান নামে ১২ বছরের এক কিশোরের মাথার খুলি পুলিশের গুলিতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। পরিবারের লোকজন তার চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে যোগাযোগ করেন। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করতে অস্বীকৃতি জানান। পরে তাকে নিউরোসায়েন্সেসে আনা হয়। ডা. মাহফুজুর বলেন, ‘অনেক ঝুঁকি নিয়ে রায়হানের অস্ত্রোপচার করলাম। এতটুকু ছেলের অবস্থা দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।’

চিকিৎসার পাশাপাশি একজনের জানাজাও পড়িয়েছেন তিনি। মা-বাবার একমাত্র সন্তান রাতুল, বয়স ১২ বছর। পুলিশের বুলেটের আঘাতে মস্তিষ্কের একপাশের খুলি উড়ে যায়। ৪৮ দিন চিকিৎসার পর তার মৃত্যু হয়। পরিবারের লোক জানাজা পড়ানোর জন্য ডা. মাহফুজুরকে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, ‘তাদের অনুরোধে আমি ছেলেটির জানাজা পড়াই। এ ঘটনা আমি কোনো দিন ভুলব না।’
এদিকে আরেক ‘আবু সাঈদের’ মুখোমুখি হন ডা. মাহফুজুর। ৫ আগস্ট দুপুরের পর সরকার পতনের খবরে দেশের কিছু জায়গা শান্ত থাকলেও পুলিশের গুলি থামেনি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, চানখাঁরপুল, মধ্য বাড্ডায়। যাত্রাবাড়ীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র কাজল মিয়া পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে গুলি থামানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু তাঁর অনুরোধ রাখেনি পুলিশ। একটি গুলিতে কাজলের মস্তিষ্কের এক অংশ উড়ে যায়। তিনি রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। এরপর তাঁকে ঢাকা নিউরোসায়েন্সেসে আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়।

ডা. মাহফুজুর বলেন, ‘এর মধ্যে সফলতার সঙ্গে কাজলের কয়েকটি সার্জারি করেছি। তবে সুস্থ হয়ে ওঠেনি; এখনও আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।’
সহযোগী অধ্যাপক, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতাল

চোখ ভালো হলে আপনাকে দেখতে আসব আপা’ যাকিয়া সুলতানা নীলার চিকিৎসক জীবনের অন্য রকম অধ্যায় শুরু হয় ১৭ জুলাই। চোখে গুলি নিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় একের পর এক শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ আসতে থাকেন রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। সবাই আন্দোলনে আহত। এত রোগী দেখে হতচকিত হয়ে পড়েন ডা. নীলা। এর পরের কয়েকটা দিন তাঁর জন্য ছিল আরও ভয়াবহ, যা আজীবন স্মৃতিতে থাকবে। ডা. নীলা বলেন, ‘১৮ জুলাই বিকেল ৩টার পর থেকে চাপ বেড়ে যায়।

ডা. রেজওয়ানুর রহমানের নেতৃত্বে আমিসহ অন্যরা সেবা দিতে শুরু করি। ১৮ ও ১৯ জুলাই অন্তত ৩০০ রোগী আসে, বেশির ভাগই চোখে গুলিবিদ্ধ। কারও এক চোখে, কারও দুই চোখেই। মুখমণ্ডল রক্তে ভেজা। কী বীভৎস! এমন দৃশ্য আমি কখনও দেখিনি। শত শত ছেলে এসেছে; বয়স ১২ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। সঙ্গে সঙ্গে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে অস্ত্রোপচার করেছি। ১৮ থেকে ২১ জুলাই চলে ম্যারাথন ওটি।’

এর মধ্যে আন্দোলন দমাতে ২০ জুলাই কারফিউ জারি করা হয়। সেদিনও নানান বাধা পেরিয়ে হাসপাতালে পৌঁছেন নীলাসহ অন্যরা। আহতদের সেবা দেওয়ায় তাদের হুমকি দেওয়া হয়। ডা. নীলা বলেন, ‘আমাকে সরাসরি হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। পুলিশে দেওয়ার চেষ্টাও হয়। এমনকি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদেরও হুমকি দেওয়া হয়। তারপরও আমরা সেবা থেকে পিছু হটিনি।’

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন সবাই যখন বিজয় মিছিলে, তখনও হাসপাতালে ব্যস্ত ডা. নীলা। সেদিন মধ্যরাত পর্যন্ত চিকিৎসা দিয়ে ১২ কিলোমিটার হেঁটে বাসায় ফেরেন। তিনি বলেন, ‘৪ থেকে ৬ আগস্ট চোখে গুলি লাগা প্রায় ২০০ রোগী আসে। আগস্টের ৫ তারিখে আমি হেঁটে চলে যাই হাসপাতালে। বিকেল ৪টা থেকে প্রতি মিনিটে একটি রোগী আসছিল। এদিন হাসপাতালে ঢুকেই দেখি, এক কিশোরের চোখে গুলি লেগেছে; অঝোরে রক্ত পড়ছে। কাঁদতে কাঁদতে ইমাম নামের ছেলেটি বলছিল, আপা, আমি কি আর কখনও চোখে দেখব না? তার প্রশ্নের জবাব আমার কাছে ছিল না। শুধু ভাবছিলাম, সবাই আনন্দে মিছিল করছে, আর এতটুকু ছেলে চোখে গুলি নিয়ে কাতরাচ্ছে। ওকে বোঝাই, তোমার ত্যাগ বৃথা যায়নি।’

চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি অনেকের চোখে আর হয়তো আলো ফিরবে না। তাদের কথা ভেবে মন কাঁদে ডা. নীলার। তিনি বলেন, ‘ইমামের মতো অন্য রোগীরাও যখন জিজ্ঞেস করে, আপা, আমার চোখ কবে ভালো হবে? আমি কি আর দেখতে পারব না? তাদের এসব প্রশ্নের জবাব দিতে পারি না। আমার শুধুই কান্না পায়; গলা ধরে আসে। মুখে হাসি নিয়ে সান্ত্বনা দিই, অবশ্যই তোমরা দেখতে পাবে। আবার সব আগের মতো।’

চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন অনেকে। কারও কারও দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা চলছে। অনেকের দায়িত্বে রয়েছেন ডা. নীলা। তাদের সেবা দিতে কখনও ক্লান্তি বোধ করেননি। সে জন্য চিকিৎসা নিতে আসা অনেকের কাছে ‘নীলা আপা’ আপনজন হয়ে আছেন। চোখের আলো ফিরিয়ে হয়েছেন আলোকিত।

ডা. নীলা বলেন, ‘আমি যাদের চিকিৎসা দিয়েছি, তারা কেউ আমাকে ভোলেনি। বোনের সম্মান দিয়েছে আবদুর রউফের মা। পা ছুঁয়ে সালাম করে গেছে সাজ্জাদ। বিয়েতে দাওয়াত করেছে মানসুরা। চোখের আলো ফিরলে আমাকে প্রথম দেখতে চায় ইবাদ। আশরাফুল, মাহিম, ফাহিম, শুভ; নাম না জানা অনেকে খোঁজ নিতে আসে। পেশাজীবনে এগুলোই প্রাপ্তি।’
সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতাল

এ সম্পর্কিত আরো খবর

উপদেষ্টা মন্ডলীঃ

ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম

সম্পাদক মন্ডলীঃ

মোঃ শহীদুল্লাহ রাসেল

প্রধান নির্বাহীঃ

মোঃ রফিকুল্লাহ রিপন

সতর্কীকরণঃ

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি
অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও
প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
সকল স্বত্ব
www.jagonarayanganj24.com
কর্তৃক সংরক্ষিত
Copyright © 2024

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ

বনানী সিনেমা হল মার্কেট
পঞ্চবটী ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ
ফোন নম্বরঃ ০১৯২১৩৮৮৭৯১, ০১৯৭৬৫৪১৩১৮
ইমেইলঃ jagonarayanganj24@gmail.com

Website Design & Developed By
MD Fahim Haque
<Power Coder/>
www.mdfahim.com
Web Solution – Since 2009

error: Content is protected !!