মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে মর্টার শেল ও ভারী গোলার বিকট শব্দে কাপঁছে কক্সবাজারে টেকনাফ সীমান্ত। ওপারে আকাশপথে যুদ্ধ বিমানের হামলায় বিকট শব্দে এপারে সীমান্তে বসবাসকারীরা ভয়-ভীতির মধ্য রয়েছেন।
আজ শনিবার ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ, নয়াপাড়া ও পৌরসভার তিনটি পয়েন্টে মিয়ানমারের মর্টার শেল ও ভারী গোলার বিকট শব্দ পান সীমান্তের মানুষ। এতে সীমান্তে নতুন করে রোহিঙ্গা সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি সে দেশের বিজিপির আরও সদস্য এপারে অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে।
এর আগে গতকাল সেন্টমার্টিনে অনুপ্রবেশন করা মিয়ানমারের ২ বিজিপিসহ ৩১ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, টেকনাফ শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে সীমান্ত সড়কের পূর্বে নাফ নদের পাড়ে জালিয়াপাড়া। সেখানে পাঁচ শতাধিক মানুষের বসবাস। ওপারে সেদেশে স্পিড বোটের টহল দেখা গেছে।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা নাফ নদের তীরে দাঁড়িয়ে গোলার বিকট শব্দ ভেসে আসার জায়গা দেখানোর চেষ্টা করছিলেন শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের বাসিন্দা জেলে নুর হোসেন (৫৫)। তিনি সমকালকে বলেন, মিয়ানমারের সীমান্তঘেঁষা নাফ নদীতে জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। এ নাফ নদী আমাদের জীবনসঙ্গী। নাফের ওপারে মিয়ানমারে গত ছয়-সাত মাস ধরে যুদ্ধ চলছে। ফলে আমাদের জীবনেও আতঙ্ক নেমে এসেছে। এখন গোলার বিকট শব্দ সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক সময় যুদ্ধ বিমানের হামলাও চোখে পরে। আজকেও চোখে পরেছে যুদ্ধ বিমানের হামলা।
নাফের তীরে শাহপরীর জেটি ঘাটে দোকানি আবু তালে বলেন, দীর্ঘদিন পর সেন্টমার্টিন থেকে স্পিড বোটে লোকজন পারাপার করেছে। কিন্তু আজকেও জেটির ওপারে ব্যাপক গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ফলে নাফের তীরে বসবাসকারী মানুষ আতঙ্কে দিন পার করছে। মাঝে মধ্যে এমন বিকট শব্দে আমাদের ঘরবাড়ি কেঁপে ওঠে বলে জানান দোকানি আবু তালে।
সীমান্তের বসবাসকারীরা বলছেন, রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধের তীব্রতা বাড়ছে। সে দেশের মংডুর পাশাপাশি বুথেডংয়েও যুদ্ধ চলমান রয়েছে। এই দুই রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে জান্ত সরকার। যার কারণে দু’পক্ষের মধ্য মর্টার শেল ও ভারী গোলার বিকট শব্দে কাপঁছে কক্সবাজারে টেকনাফ সীমান্ত। অনেকে সময় মিয়ানমারের আকাশপথে হেলিকপ্টার নিয়ে হামলার দৃশ্য চোখে পড়েছে। ফলে এপারের বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্য রয়েছেন।
সীমান্তের বাসিন্দা জলিল মিয়া বলেন, সীমান্তের ওপার থেকে ফের গোলার শব্দ পাওয়া গেছে। এভাবে আর কতদিন চলবে এই যুদ্ধ খেলা? আমরা সীমান্তের লোকজন অনেক ভয়ের মধ্য থাকতে হয়।
সীমান্তের গোলার বিকট শব্দ থামেনি উল্লেখ করে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, ‘আজও (শনিবার) সকাল থেকে গোলার শব্দ পাওয়া গেছে। বিকেল পর্যন্ত সীমান্তের মানুষ গোলার বিকট শব্দ পেয়েছেন।’
এদিকে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার নাফ নদীতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদস্যরা দিন রাত নাফ নদী ও সীমান্ত সড়কে টহল বৃদ্ধি করেছে। সেটি চলমান এবং যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সবসময় প্রস্তুত সীমান্তরক্ষী বিজিবি ও কোস্টগার্ড।
সীমান্তে বিজিবি সর্তক অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (বিজিবি-২) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, নতুন করে সীমান্ত দিয়ে যাতে কোনো অনুপ্রবেশের ঘটনা না ঘটে, সেজন্য আমাদের টহল জোরদার আছে।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, সীমান্তের বাসিন্দারা আজকেও ওপার থেকে গোলার বিকট শব্দ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তবে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত আছেন।