ষ্টাফ রির্পোটার:
টনি সনাতন,নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন অধীনস্থ মাসদাইর পৌর মহাশ্মশানের ডোম হিসেবে সর্বজন পরিচিত। পাশাপাশি ২০২০ সালে বৈশি^ক মহামারী করোনাকালীন সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লাশগুলো দাহ করে সর্বস্তরের হিন্দু সম্প্রদায়ের মন জয় করে পেয়েছিলেন একাধিক পুরস্কার। পাশাপাশি করোনা যোদ্ধা হিসেবে খেতাব পেয়েছিলো এ টনি সনাতন। কিছু কুচক্রী মহলের চক্রান্তের শিকার হয়ে পৌর শ্মশান থেকে স্বপরিবারে বের করে দেয়ার পর বর্তমানে স্ত্রী,২ মেয়ে এবং ১ ছেলেকে নিয়ে অনেকটাই অসহায়ের মত দিনানিপাত করছেন।
একান্ত আলাপচারিতায় গনমাধ্যমকর্মীদের টনি সনাতন বলেন, আমার পুর্ব পুরুষ ( চার পুরুষ ) এরা সবাই এখানে কাজ করে গেছেন। তাদের উত্তরসুরি হিসেবে ছোটবেলা থেকেই আমি এখানে কাজ করছি। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সেভেন মার্ডারের লাশগুলো যখন শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছিলো সেই টিমের ( ডোম ) অন্যতম সদস্যও ছিলাম আমি। এরপর করোনাকালীন সময়ে আতংকিত মানুষজন যখন পরিবারের কেউ’র মৃত্যুর পর তাদের লাশটিকে শেষ বারের মত দেখতে কাছে আসেনি ঠিক সেই সময়ে পৌর শ্মশানের কোন ডোম যখন লাশ দাহ করতে প্রানভয়ে এগিয়ে আসেনি ঠিক সেই সময়ে পরিবারের সকল সদস্যদের কথা চিন্তা না করে নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে আমি কাজ করেছি। ডাক্তাররা যখন বললো যে,করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরনকারীর দেহে যখন ৩ ঘন্টা পর মৃতদেহে কোন কোন ভাইরাস থাকেনা ঠিক সে সময়ে অনেক জনপ্রতিনিধিরা এগিয়ে আসেন। কিন্তু ডাক্তারের এমন বক্তব্যের আগে কিন্তু কোন মানুষ এগিয়ে আসেনি। কিন্তু করোনার শুরু থেকে শেষ অব্দি পর্যন্ত শ্মশানে আসা মৃত দেহগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে সৎকার করেছেন টনি ডোম। সে সময় অনেক মৃহদেহের সাথে কোন স্বজনের দেখা মিলেনি যার ফলে নিজের অর্থায়নেই লাশগুলো সৎকারে কাঠ এবং লাকড়িসহ অন্যান্য উপাদানগুলো দিয়ে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। এবং এখনও পর্যন্ত শ্মশানের বাহিরে থাকাবস্থায় সহযোগিতা করছেন।
টনি ডোম আরও বলেন,করোনার শুরুতে কোন প্রতিনিধির দেখা মেলেনি। ডাক্তারের বক্তব্যের পরই কিন্তু অনেক জনপ্রতিনিধি হিন্দুসহ মুসলমানের লাশ নিয়ে আসতেন কবরস্থান ও শ্মশানে। তবে এখানে অনেকে এসেছিলেন করোনা যোদ্ধা টাইটেল নিতে। তারা অনেকে মৃত দেহ থেকে অনেক দুরেই অবস্থান নিতেন। লাশের কাছে আসতেন খুব কম প্রতিনিধি। সে জানান,করোনাকালীন সময়ে স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক প্রায় ২৯৬টি হিন্দু সম্প্রদায়কে সৎকারের কাজ করেছি এছাড়া বিগত কয়েক বছরে প্রায় ৬০ হাজারের অধিক লাশের সৎকার করেছি। টনি জানান,হিন্দু সম্প্রদায়ের সৎকারের সময় তার নিকট আত্মীয় ছাড়া অন্যকেউ মুখ অগ্নি করতে পারেনা। তারপরও সে সময়ে গনমাধ্যমে দেখেছি যে কয়েকজন মুসলমানও নাকি শ্মশানে প্রবেশ করে হিন্দু লাশের মুখে অগ্নি করেছে বিষয়টি সত্যিই আর্শ্চয্যজনক।
টনি আক্ষেপ করে বলেন,সে সময় মেয়র মহোদয়ের নির্দেশেই কিন্তু আমি একা আমার পরিবারের সকলের কথা অমান্য করে লাশ দাহের কাজ করেছি। যে কারনে আমাকে আমার ঘরে প্রবেশ করতে দেয়নি প্রায় ৩ মাস পরিবারের সদস্যরা। যে কারনে আমাকে ঘরের বাহিরে কবরের সমাধিতে রাত্রিযাপন করতে হয়েছিলে ৩ মাসা। কারন পরিবারের সদস্যরা ভেবেছিলো যদি আমার কারনে পরিবারের কোন সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়ে। সে সময় মেয়র মহোদয় আরো কয়েকজনকে লাশ দাহের জন্য নিযুক্ত করলেও তারা কিন্তু কেউ লাশ দাহ করেনি। আবার সেই সময় সরকার কর্তৃক যে ভাতা এসেছিলো তাও কিন্তু পাইনি আমি। তাতেও দুঃখ নেই। দুঃখ হচ্ছে সেই করোনাকালীন সময়ে মেয়র মহোদয়ের নির্দেশ পালন করার পর হঠাৎ কি কারনে আমাকে সেখান থেকে চাকুরীচ্যুত করে পরিবারসহ উচ্ছেদ করা হলো তা এখনও পর্যন্ত আমার কাছে অজানা। শুধু তাই নয়,আমার ঘরে রক্ষিত প্রতিমাগুলো বের করে বাহিরে রেখে দিয়ে চাকু দিয়ে সেই প্রতিমাগুলোর চোখ ও কপালে থাকা স্বর্নগুলোও খুচিয়ে খুচিয়ে উঠিয়ে নেয়া হলো কেন তারও কোন সদুত্তর পাইনি কারোর কাছে। সেদিন আমাকে স্বপরিবাওে শ্মশান থেকে বের করার পর থেকে পরিবার নিয়ে অনেকটাই কষ্টের মাঝে দিনানিপাত করছি।
টনি আরও বলেন,একটি অপ্রীতিকর ঘটনার কারনে নাকি আমাকে সেখান থেকে বের করা হয়েছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে যার সাথে এ ঘটনা ঘটেছে তাকে তো সেখান থেকে বের করা হয়নি। তাহলে নিরপরাধ হিসেবে আমাকে কেন অপরাধী সাজতে হলো এবং অন্যের পাপের শাস্তি কেনো আমাকে দেয়া হলো এ উত্তর আমি কার কাছে চাইবো ?
সে আরও বলেন,করোনাকালীন সময়ে পরিচ্ছন্নকর্মী ও ডোম সম্প্রদায়ের জন্য সরকার কর্তৃক ঝুকি ভাতা দেয়ার ঘোষনা ছিলো প্রায় সাড়ে ১১শত সদস্যদের মাঝে ৪ হাজার টাকা হারে। কিন্তু প্রতিটি সদস্যদের মাঝে মাত্র ১ হাজার টাকা হারে প্রদান করা হয়েছে সাবেক মেয়রের পিএস আবুলের মাধ্যমে। আমাকেও প্রথমে ১ হাজার টাকা প্রদান করলে আমি রাগারাগি করলে পরবর্তীতে বাকী ৩ হাজার টাকা পিএস আবুল আমাকে দিয়ে যান। এছাড়াও করোনার সময় ১৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অসিত বরন বিশ^াস আরও ৫ জনকে নিয়ে একটি টিমও গঠন করেছিলেন কিন্তু মেয়র মহোদয়ের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করলেও সেই ৫জনকে একটি টাকাও দেয়নি অসিত বরন বিশ^াস।
টনি আক্ষেপ করে বলেন, আমাকে সেখান থেকে বের করেও ক্ষ্যান্ত হয়নি ১৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অসিত বরন বিশ^াস। তিনি অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদেরকে বলেছিলেন,টনিকে সেখানে আর পুর্নবহাল হতে দেবোনা। প্রয়োজনে আমি শ্মশান কমিটির পদ ছেড়ে দিবো। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে,আমার সেখানে ( শ্মশানে ) থাকা আর অসিত বাবুর সভাপতির পদ নিয়ে অটল থাকার মাঝে অবশ্যই কোন কিন্তু রয়েছে। তাহলে কি শ্মশানের ভেতরে ঘটমান অনেক অনিয়মের মাষ্টারমাইন্ড কি তাহলে অসিত বাবু সাহেব ?
তিনি গনমাধ্যমকর্মীদের কাছে দাবী জানান, আপনাদের লেখনির মাধ্যমেই আমি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নবনিযুক্ত প্রশাসক স্যারসহ প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি আকর্ষন করছি তারা যেন আমাকে আমার পুর্ব কর্মস্থল মাসদাইর পৌর শ্মশানের পুনরায় পুর্নবহালের অনুরোধ জানাচ্ছি।
আগামীতে চলবে…..শ্মশানের ভেতরে দূর্নীতি প্রসঙ্গ……………!