ষ্টাফ রিপোর্টার:
দুর্নীতির অভিযোগের কারণে ক্রমেই চাপ বাড়ছে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের ওপর। এরই অংশ হিসেবে এবার টিউলিপকে দুর্নীতিবিরোধী দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির দুর্নীতিবিরোধী জোট। এই জোটের মধ্যে বিশ্বব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা হিসেবে সমাদৃত অক্সফাম ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালও রয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিককে তার মন্ত্রিত্বের ভূমিকার দুর্নীতিবিরোধী দিক থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী দাতব্য সংস্থাগুলোর একটি জোট।
মূলত টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার মন্ত্রিসভার সদস্য, তিনি ইকনোমিক সেক্রেটারি টু দি ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার কাজ যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেওয়া। কিন্তু বাংলাদেশে এখন তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, যেখানে তিনি এবং পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
এমন অবস্থায় টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করতে সপ্তাহান্তে প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান কেমি ব্যাডেনোচ। যদিও হ্যাম্পস্টেড এবং হাইগেটের ৪২ বছর বয়সি এমপি টিউলিপ দাবি করেছেন, তিনি কোনো ভুল করেননি।
এছাড়া সোমবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি মুখপাত্র বলেছেন, স্যার কেয়ার স্টারমার তার মন্ত্রীর প্রতি পূর্ণ আস্থা ধরে রেখেছেন। যদিও টিউলিপকে বরখাস্ত করতে নতুন করে চাপের মুখোমুখি হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী স্টারমার। বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টিউলিপের পারিবারিক সম্পর্ক ও দুর্নীতির অভিযোগে সোমবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ওপর এই চাপ তৈরি হয়েছে।
এমন অবস্থার মধ্যেই টিউলিপকে এবার তার দুর্নীতিবিরোধী দায়িত্ব থেকে সরে যেতে দাবি জানিয়েছে দেশটির দুর্নীতিবিরোধী জোট ইউকে অ্যান্টি-করাপশন কোয়ালিশন। এই জোটে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ও অক্সফামের মতো বৈশ্বিক সংস্থাগুলোও আছে।
ইউকে অ্যান্টি-করাপশন কোয়ালিশন বলেছে, টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ সরকারে যে দায়িত্ব পালন করছেন এবং তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে সেগুলো স্পষ্টতই গুরুতর ‘স্বার্থের সংঘাত’। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার খালা ও দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা তদন্তে টিউলিপ সিদ্দিকের নাম এসেছে।
মূলত আর্থিক দুর্নীতির এক মামলায় বাংলাদেশে টিউলিপ সিদ্দিক ও তার খালা শেখ হাসিনাসহ পরিবারের আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে তদন্ত শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাজ্যের এই মন্ত্রী ব্যাপক চাপে আছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।
যুক্তরাজ্যের দুর্নীতিবিরোধী দাতব্য সংস্থাগুলোর এই জোট বলেছে, যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতা এবং খ্যাতি রক্ষায় সরকারের পক্ষে বেশ কিছু জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আর এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ টিউলিপ সিদ্দিকের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এবং তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কারণে সৃষ্ট স্বার্থ-সংঘাতে এটি এখন স্পষ্ট নয় যে— তিনি এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো অবস্থানে আছেন কিনা।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ট্রেজারি মন্ত্রী যুক্তরাজ্যের মানি লন্ডারিং নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক অপরাধ মোকাবিলার কাঠামোর দায়িত্বে রয়েছেন, অথচ তার এমন একটি ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সঙ্গে সরাসরি পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে যা সেই কাঠামোর অধীনে তদন্ত করা যেতে পারে।
এর আগে ডাউনিং স্ট্রিটের একজন মুখপাত্র টিউলিপ সিদ্দিকের বিষয়ে বলেন, তিনি নিজেকে স্বাধীন উপদেষ্টার কাছে সমর্পণ করে সম্পূর্ণভাবে সঠিক কাজ করেছেন। সেই প্রক্রিয়া চলমান আছে।