ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটি জাগো নারায়ণগঞ্জ২৪.কমের পাঠকদের জন্য হুবুহু প্রকাশ করা হলো।
বাংলাদেশের গুম তদন্তের রিপোর্টে গোপন বন্দিশালার বিষয়ে আরও নতুন তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, এই গোপন বন্দিশালাগুলির সাঙ্কেতিক নাম ছিল। পরিচালনার দায়িত্বে ছিল মূলত বাংলাদেশ পুলিশের র্যাব।
বাংলাদেশে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের রিপোর্টে উঠে এসেছে গোপন বন্দিশালার সাঙ্কেতিক নাম! বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জমানায় কাউকে গুম করার পরে এই গোপন বন্দিশালাগুলিতে আটকে রাখা হত বলে অভিযোগ। তদন্ত কমিশনের সাম্প্রতিক রিপোর্টে এমন দু’টি বন্দিশালার তথ্য উঠে এসেছে। সেগুলির সাঙ্কেতিক নাম ছিল ‘হাসপাতাল’ এবং ‘ক্লিনিক’।
এই দু’টি গোপন বন্দিশালা কোথায় ছিল, তা-ও গুম তদন্ত কমিশনের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ অনুসারে, দু’টি গোপন বন্দিশালা পরিচালনের দায়িত্বে ছিল বাংলাদেশ পুলিশের ‘র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন’ (র্যাব)-এর গোয়েন্দা শাখা। ঢাকার উত্তরায় র্যাব-১ কার্যালয়ের চত্বরে ‘টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন’ (টিএফআই) সেল হিসেবে পরিচিত বন্দিশালাটির সাঙ্কেতিক নাম ছিল ‘হাসপাতাল’। র্যাবের সদর দফতরের অধীনে থাকলেও দাবি করা হচ্ছে, এটির দেখভালের দায়িত্বে ছিল র্যাবের গোয়েন্দা শাখা। এ ছাড়া র্যাবের সদর দফতরের চত্বরেই ছিল আরও একটি বন্দিশালা, সেটির সাঙ্কেতিক নাম ছিল ‘ক্লিনিক’। কাচের তৈরি কাঠামোর জন্য সেটিকে ‘গ্লাস হাউস’ও বলা হত।
হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন একাধিক ব্যক্তিকে গুমের অভিযোগ উঠেছিল। সেখানে দিনের পর দিন বিনা বিচারে অভিযুক্তদের আটকে রাখা হত বলে অভিযোগ। এমনকি, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেও ঠাঁই হত গোপন ওই বন্দিশালায়। অভিযোগ, সরকারের নির্দেশে বাংলাদেশ পুলিশ খুন, গুমখুন বা অপহরণ করে ‘আয়নাঘরে’ বন্দি করে রাখার মতো কাজ করেছে একাধিক বার। হাসিনা সরকারের পতনের পরে সেই বন্দিশালার জন্য ক্ষমাও চেয়েছিল র্যাব।
বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পরে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস গুমের অভিযোগের তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠন করেন। গত বছরের ডিসেম্বরে ওই কমিশন প্রথম রিপোর্ট জমা দিয়েছিল ইউনূসের কাছে। ওই রিপোর্ট অনুসারে, তদন্তে আয়নাঘরে মানুষকে গুম করার নেপথ্যে হাসিনার যোগ পেয়েছে কমিশন। পাশাপাশি র্যাবের বিলুপ্তিরও প্রস্তাব দিয়েছিল গুমবিষয়ক তদন্ত কমিশন। গত ৪ জুন গুম তদন্ত কমিশনের দ্বিতীয় রিপোর্ট জমা পড়ে ইউনূসের কাছে। রিপোর্টটি হাতে পেয়ে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় ইউনূস বলেছিলেন, “কী ভয়াবহ এক একটি ঘটনা! আমাদের সমাজের ‘ভদ্রলোকেরা’, আমাদেরই আত্মীয়-পরিজনেরা এ ঘটনাগুলি ঘটিয়েছেন।” দাবি করা হচ্ছে, দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী রিপোর্টটিতেই দু’টি গোপন বন্দিশালার সাঙ্কেতিক নামের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে র্যাব মূলত গঠন করা হয়েছিল সন্ত্রাসদমন, মাদক চোরাচালান রোধ, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য। তবে হাসিনার জমানায় এই বাহিনীকে বিভিন্ন অবৈধ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার আমলে বেশ কিছু গুপ্তহত্যারও অভিযোগ রয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিরোধীদের দমনপীড়ন, অবৈধ ভাবে আটক করে রাখা, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, এমনকি গুপ্তহত্যার কাজেও এই বাহিনীকে ব্যবহার করার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। আন্তর্জাতিক স্তরেও এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে চর্চা হয়েছে।