স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপির রাজনীতি করে আগের মতো জোশ পাচ্ছেন না তৃনমূল থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলার অনেক নেতাকর্মী। দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাদের সরিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের ইশারায় অদক্ষ ও দুর্বল নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত হওয়া কমিটিতে দলাদলি ও আধিপত্যবিস্তার নিয়েই চলছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতি। যার ফলে নিষ্ক্রিয়রা কমিটিতে নাম লিখিয়ে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীকে করে ফেলেছেন ইতিমধ্যেই ‘বোতলবন্দি’। এমন অবমূল্যায়নে দলের অনেকেই হতাশ ও ক্ষুব্ধ এই সময়ে এসে।
তবে ছাত্র-জনতার গনঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সুষ্ঠু ধারায় বিএনপির রাজনীতিকে ফিরিয়ে আনতে প্রবীণ নেতারা জোরালোভাবে চেষ্টা করলেও অনেকটা নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে পকেটবন্দি অদক্ষ ও দুর্বল নেতাদের দ্বারা এমনটাই চিত্র দেখা যাচ্ছে জেলার প্রতিটি ইউনিয়নের ওয়ার্ড থেকে ধরে জেলায় পর্যায়। ফতুল্লা থেকে শুরু করে নারায়ণগঞ্জ সদর, সিদ্বিরগঞ্জ, বন্দর, সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার কোথাও যেন বাদ যাচ্ছে না নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার ও কমিটি নিয়ে দলাদলিতে।এদিকে নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে এখন দল থেকে পদচ্যুত হওয়ার আতংকে ভুগছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা। কারন যেকোন সময় হতে পারে জেলা ও মহানগর কমিটির বিলুপ্তি। হতেও পারে শাস্তির সম্মুখীন অনেক নেতাকর্মী ।
প্রয়োজনে ও দলের দুঃসময়ে অনেক প্রবীণ নেতাকর্মীদের পাশে না পেয়েও দুষচ্ছেন অনেকেই।আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনেক প্রবীণ নেতাদের দলের কর্মীদের দুঃসময়ে পাশে থাকতে দেখা যায়নি এমনকি তারা নিজেরাই ইঁদুরের গর্তে অবস্থান করেছে বলেও অনেকে জানিয়েছে। বিগত ১৬/১৭ বছর স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক হামলা, মামলা ও খুন,গুমের শিকার হয়েও অনেক দলীয় কর্মীরা নিজ পরিবার নিয়ে পলায়ন ছিলেন আবার কেউ পরিবার থেকেও বিচ্ছিন্ন ছিলেন, কেউবা কারাগারে জীবন অতিবাহিত করেছে এক ফোঁটা আলোর মুখ দেখতে। দায়িত্বশীল নেতাদের অকার্যকর ভূমিকা, কর্মীর পাশে না দাঁড়ানো এবং সমন্বয়হীনতায় জাতীয় নির্বাচনের পর দলে বড় ধরনের তালগোল পেকেছিলো। পাশাপাশি মামলা-হামলা মোকাবিলা করতে করতে একরকম ‘কুপোকাত’ দলটির কর্মীরা। বর্তমান দলটির ঘরোয়া বিবাদ আরও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে গেছে। অভিযোগ আছে, এ দলাদলিতে আশকারা দিচ্ছেন খোদ কেন্দ্রীয় নেতারাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক নেতাকর্মীরা জানান, কারাবন্দি হওয়ার পর তাদের মামলা পরিচালনা থেকে শুরু করে চিকিৎসা, কারাগারের খরচ– সবকিছু বহন করতে হয়েছে পরিবারকে। কারন তখনো ভাই, স্যার রাজনীতিতে অনেকেই বিশ্বাসী ছিলো এখনো আছে।নিজেদের দলের মধ্যেই এখনো ফাটল। যার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পেরেছে এবং হুকুম মত কাজ করেছে তাকেই শুধুমাত্র সাহায্য করা হয়েছে। যারা দলের জন্য কাজ করেছে তৃণমূল থেকে তাদের অনেকের পরিবারের খবর পর্যন্তও কেউ নেয় নাই কি অবস্থায় আছে। যার ফলে বিএনপির অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ সামনে দেখে অনেক হতাশ কর্মী নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেছিলেন সে সময়। অনেকে নিজের ব্যক্তিগত আর কর্মজীবনকে প্রাধান্য দিতে শুরু করেছেন।এতে ত্যক্ত-বিরক্ত অনেকে রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়েছিলেন কিন্তু ৫ আগষ্ট এর পর সুস্থ্য ধারায় স্বাধীন বাংলাদেশ পাবার পর নতুন করে দলকে সাজাতে তারা আবার মাঠে সরব হয়ে উঠতে চাচ্ছেন। কিন্তু তাদেরকে নামে বেনামেও বিভিন্ন মামলা সহ বিভিন্ন চাঁদাবাজি সহ অপকর্মে যুক্ত বলে অভিযোগ করে হয়রানি করে যাচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরাও। তাদের মতে রাজনীতি করে ‘রাজা’ হতে চাইছেন না তারা বরং দলকে এগিয়ে নিতে চান। কিন্তু দল গোছাতে ও দল।মেরামত করতে তারা এগিয়ে আসলেও তাদের নামে মামলা নামক চাঁদাবাজি করা হচ্ছে একই সাথে বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত করে হামলারও শিকার হতে হচ্ছে।
নেতারা আরো বলেন, বিগত আন্দোলনে যারা নিজ উদ্যোগে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন তাদের নিষ্ক্রিয় করতে তৎপর ছিলেন জেলার অনেক কেন্দ্রীয় নেতারা। অন্যদিকে, যেসব কর্মী আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন, কারাগারে গেছেন– তাদের পাশে দাঁড়াতে নেতারা ব্যর্থ হয়েছেন। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে বেশ কয়েক নেতার বিরুদ্ধে। পকেট কমিটি আর অযোগ্যদের সামনে আনতে গিয়ে পুরো সংগঠনকে দুর্বল করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ছাত্রদল, যুবদলের মতো কমিটিও ভাগাভাগি করে নেওয়া হয়েছে বিগত দিনে। আন্দোলন আর সাংগঠনিক কাজে নেতারা তৎপর না থাকলেও ফটোসেশন আর দলের হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণে চটকদার কার্যক্রমে ব্যস্ত আছেন অনেক নেতারা। বিএনপি নেতাদের কোন্দলের প্রভাব পড়েছে অঙ্গ সংগঠনেও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দু’বছরের ধারাবাহিক কর্মসূচিতে আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকায় সক্ষমতার জানান দিলেও ছাত্র জনতার আন্দোলন পূর্ব পর্যন্ত সর্বশেষ কোন চূড়ান্ত আন্দোলনে এর প্রতিফলন ছিল না নারায়ণগঞ্জে। পূর্বে মহানগর কমিটি বিলুপ্তির পর টার্গেট করে সক্রিয় আর যোগ্যদের কারাবন্দি করার পর হাল ছেড়ে দিয়েছেন অন্যরা। শিল্প নগরী নারায়ণগঞ্জ দলে ত্রিমুখী বলয় আর নেতারা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় ‘হাল’ ছেড়ে দিয়েছেন তৃণমূল কর্মীরা। সবচেয়ে বেশি মামলা আর কারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন নারায়ণগঞ্জের অনেক যুবদল,ছাত্রদলের ও জেলার নেতারা। আবার বিভক্তি, ফটোসেশন আর সমন্বয়হীনতা বেশি ছিল মহানগরে।
জেলা বিএনপি, ছাত্রদল,যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের অনেকের নামে ঢালাওভাবে মামলা হলেও মহানগর বিএনপির কর্তারা নামমূলক মুষ্টিমেয় কয়েকটি মামলা খেলেও আলোচিত কোনো মামলা নেই। আবার অনেককে হাতকড়াও পরতে হয়নি । দুর্বল নেতৃত্বের কারণে এখানে কখনোই আন্দোলন দানা বাঁধেনি।
ছাত্র জনতার আন্দোলনে আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ছিল সমন্বয়হীনতা নারায়ণগঞ্জ বিএনপির। আন্দোলন শুরুর পরপরই নেতারা চলে যান আত্মগোপনে। ফলে তৃণমূল নেতাকর্মী ছিলেন নির্দেশনার বাইরে। কোন্দলের কারণে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি।
একদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভার্চুয়াল সকল অপরাধ ও অনৈতিক কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার জন্য বারবার নির্দেশ করা হলেও নিজেদের আখের গুছাতে ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কখনো নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি গিয়াস উদ্দিন কড়া হুশিয়ারী দিয়ে চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সকল সংঘর্ষ বন্ধ করতে বলছে। তার বক্তব্য হাস্যকর বানিয়ে বহিষ্কার করা নেতারা আবার দিচ্ছেন বক্তব্য।একই সাথে সোনারগাঁ উপজেলার সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান ও সাবেক জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রেজাউল করিম একে অপরকে দোষচ্ছেন মামলায় নিজ দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগনের নাম দেওয়াকে কেন্দ্র করে। মহানগর বিএনপির সদস্য সচিবের উপর হামলার ঘটনা নিয়ে মহানগর একাধিক বিএনপির নেতাকর্মীরা মহানগর এর সাবেক সভাপতি আবুল কালাম, তার পুত্র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাউছার আশা ও সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আতাউর রহমান মুকুলকে দোষচ্ছেন। অন্যদিকে তারাও চাঁদাবাজি করার ঘটনায় টিপুর উপর হামলা করেছে সাধারণ মানুষ বলছেন তারা।একই সাথে রূপগঞ্জে কাজী মনিরুজ্জামান মনির ও মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ও আড়াইহাজারে মাসুদুর রহমান সুমন ও নজরুল ইসলাম আজাদও একে অপরকে বিভিন্নভাবে দোষারোপ করে যাচ্ছে বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ে।
চলমান দেশের এই অবস্থায় বিএনপির এধরনের কর্মকান্ডকে ভালো দৃষ্টিতেও দেখচ্ছে না রাজনীতির বিশেষজ্ঞরা।তাদের মধ্যে দল গুছানো বাদ দিয়ে এভাবেই কাঁদা ছোড়াছুঁড়ি করতে থাকলে অধুর ভবিষ্যৎতে বিএনপির জন্য মোটেও ভালো কিছু প্রত্যাশা করা যাবে না।এতে জনগনের থেকে আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষোভ ও জনপ্রিয়তা হারিয়েছে এই সুযোগে যদি বিএনপি কাজ করতে না পারে তাহলে যেকোন সময় বিএনপির অধঃপতন ঘটতে পারে বলেও মনে করেন তারা।তাই সময় থাকতে মানুষের কাছ থেকে বিশ্বাস ও আস্থা ফিরে পেতে কাঁদা ছোড়াছুঁড়ি বাদ দিয়ে এক সাথে মিলে কাজ করা উচিত।এতে দলের জন্যই মঙ্গল।