সত্য প্রকাশ রায়:
আওয়ামী দুঃশাসনের পতন হয়েছে জুলাই-আগষ্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে। প্রায় ১ মাসের দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল হিসেবে প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-জনতার বুকের তাজা রক্ত ও প্রানের বিনিময়ে ৫ আগষ্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। শুধু শেখ হাসিনা একা নয় দেশের ৩৫০ জন এমপি,পুলিশের আইজি-ডিআইজিসহ প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা এমনকি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকারমের খতিবকেও পালাতে হয়েছিলো শেখ হাসিনার কুকর্মের কারনে।
১/১১’র পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ( যা বর্তমানে নিষিদ্ধ ) ২য় বারের মত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে নির্বাচন বিহীনভাবে ২০২৪ এর ৪ আগষ্ট পর্যন্ত ক্ষমতার মসনদে ছিলেন। ক্ষমতায় বসার প্রায় বছরখানেক পর থেকেই উন্নয়নের নামে এত পরিমানে দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন যা প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পযয়ায়ের নেতাকর্মীরাও পিছিয়ে ছিলেন না। দেশে উন্নয়ননের পাশাপাশি যে পরিমান দূর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন শেখ হাসিনা ও পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও এমপি-মন্ত্রী কিংবা নেতাকর্মীরা তা বলাবাহুল্য।
শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় যে প্রায় ১৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার তারা বিভিন্ন উন্নয়নের নামে দেশ থেকে পাচার করেছে। সেই সময়ে শেখ হাসিনাসহ সকলের হাতে থাকতো তসবিহ আর মুখের বুলি ছিলো উন্নয়ণ..উন্নয়ন আর উন্নয়ন। কিন্তু কে জানতো যে উন্নয়ন নামক তসবিহ’র অন্তরালে বিশাল আকৃতির দুর্নীতির প্রলেপ। শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের প্রতিটি স্তরেই ছিলো রাঘববোয়াল সব দুর্নীতির রথি-মহারথিরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর থেকে শুরু করে পুলিশের আইজি-ডিআইজি-এনবিআরের কর্মকর্তা-এমপি-মন্ত্রী-ছোট বড়পাতি নেতা এমনকি হাসিনার বাড়ির কেয়ারটেকারও ছিলেন দূর্নীতির তালিকায় শীর্ষে। ৫ আগষ্টের পর উন্নয়ন নামক তসবিহ গোনার সময় শেষ হলেও দেশের নতুন তসবিহ মোনা শুরু হয়েছে তা হচ্ছে নির্বাচন..নির্বাচন আর নির্বাচন। অন্তবর্তী কালীন সরকার যেখানে সংস্কারের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। সেখানে বিএনপির মাঝে নির্বাচন..নির্বাচন নিয়ে চুলকানী শুরু হয়েছে। যেখানে দেশের বেশীরভাগ রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য আন্তরিকতা দেখাচ্ছে সেখানে বিএনপির নির্বাচন নিয়ে তসবিহ গোনা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা।
৫ আগষ্ট দুপুর পৌনে তিনটায় শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের সংবাদটি শোনামাত্রই যেন বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে উৎফুল্লতা দেখা পায়। তাদের মাঝে এমন একটা অনুভতি চলে আসে যে তারাই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় চলে এসেছে। এর পর থেকেই শুরু সারাদেশে শুরু হয় বিএনপির লুটপাট ও তান্ডবলীলার যজ্ঞ। হাসিনার পেটোয়া বাহিনী হয়ে কাজ করতে গিয়ে পুলিশ যখন একেবারেই অন্তরালে চলে যায় ঠিক সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিএনপির লুটতরাজের দৃশ্যগুলো অনেকটাই প্রকাশ্যে ফুটে আসতে থাকে। ৮ আগষ্ট নোভেলজয়ী ড.মুহাম্মদ ইউনুসকে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করে নতুন বাংলাদেশর সুচনা হয়। কিন্তু পুলিশের অভাবে ঠিক সেই সময়েও চলে বিএনপির লুটপাটের তান্ডবলীলা।
বিএনপির এরুপ কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই মত প্রকাশ করেছেন “আগেই ভালো ছিলাম”। আবার কেউ কেউ বলছেন যে ৭ মাসেই কোটিপতি বনে গেছেন বিএনপির নেতারা। অথচ লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের প্রতিটি নেতাকর্মীদেরকে শান্ত থাকার নির্দেশ দেয়ার পরও তা যেন কর্নপাতের সুযোগ দেয়নি নেতাকর্মীরা। ব্যাপক অনুসন্ধানে দেখা যায় যে,গত ৮ মাসে বিএনপির বেশীরভাগ নেতাকর্মী শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। ৫ আগষ্টে পর বিএনপির নেতাকর্মীরা এমন কোন কাজ বাদ দেয়নি যা তাদের দ্বারা সংঘটিত হয়নি। জায়গা-জমি,বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জবর দখল, অগ্নিসংযোগ,লুটপাট,চাদাঁবাজি,বিভিন্ন পরিবহন সেক্টর দখল, হাট-ঘাট-মাঠ দখল,মাদক বিক্রি এবং মাদকের শেল্টার এমন কোন কিছু বাদ দেয়নি যা তারা করেনি এবং করছেনা। যারফলে মাত্র ৮ মাসেই তারা শত কোটি টাকার মালিক বনেছেন। কেউ কেউ বাড়ি-গাড়ি-জমির মালিক হওয়া ছাড়াও অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। আবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার হত্যা মামলার বানিজ্য করেও অনেক বিএনপি নেতা কোটিপতি বনেছেন। আওয়ামীলীগের প্রায় ১৭ বছরের দুঃশাসনকে হার মানিয়েছেন বিএনপি মাত্র ৮ মাসে যা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারন মানুষের মুখে মুখে ফুটে উঠেছে। বিএনপির যে নেতাটি বিগত সময়ে মামলার হাজিরা দিতে গিয়ে আইনজীবির ৫শত টাকা দিতে পারেনি সেই নেতাটিও এখন কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। বিএনপির অর্থলোভী সে সকল নেতাদের কারনে পুরো দলটিই এখন নানা প্রশ্নের মুখে জর্জরিত। প্রতিটি এলাকার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে টেলিভিশনের টকশো’তেও বিএনপির এ সমস্ত কার্যকলাপ দিয়ে কথা হচ্ছে। এতে করে খোদ দলের প্রবীন নেতারাও দ্বিধাদ্বন্ধে ভুগছেন। দলের ভাবমুর্তি নষ্ট করার কারনে অনেক জেলাতে বহিস্কার কিংবা প্রাথমিক পদ বাতিল করা হলেও কোন কাজে আসছেনা বিএনপিতে।
তবে উন্নয়ন আর নির্বাচন দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ যা এখন নিষিদ্ধ ও বিএনপি যেন মুদ্রার এপিঠ এবং ওপিঠ। উন্নয়নের তসবিহ গুনে নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগ যেমন ১৭ বছরের শাসনামলে দেশের অর্থনীতির অবস্থা বারোটা বাজিয়ে গেছে আর নির্বাচনের তসবিহ গোনা বিএনপি যেন মাত্র ৮ মাসেই তাদেরকে ছাড়িয়ে গেছেন এমনটাই মনে করেন রাজনৈতিক বোদ্ধরা। তাদের মতে,স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও দেশের কোন রাজনৈতিক দল দেশের কল্যানে তেমন কাজ করেনি। যতটুটুই করেছে তা নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থে। অথ্যাৎ ১০ টাকার উন্নয়ন করলেও নিজেদের পকেটে ভরেছেন ১ হাজার টাকা যা দেশের সাধারন মানুষের জন্যই ক্ষতিকর হয়েছে। নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগ বিগত ১৭ বছরে প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছে। সেই সময় তাদের বিরুদ্ধে কোন সংস্থা কিছু বলতে সাহস পায়নি মামলা-হামলা কিংবা গুম হওয়ার ভয়ে। দুদক কিংবা টিআইবি’র মত সংস্থাগুলোও সে সময় কিছু করতে সাহস পায়সি স্বৈরাচারীর কারনে। কারন পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোর নিয়ন্ত্রক ছিলেন শেখ হাসিনা। তদ্রুপ ৯১-৯৬ইং পর্যন্ত ৫ বছরে ক্ষমতায় থেকে বিএনপি কিন্তু বেশ কয়েকবার দূর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো।
তবে তারা মনে করেন,বিগত ১৭ বছর দেশের সাধারন মানুষ ভোট দিতে না পেরে ভোট কি জিনিস তাও অনেকে ভুলে গেছে। যখন যে দল ক্ষমতায় আসবে তার মত দেশ চলবে তা আর হতে দেয়া ঠিক হবেনা। আর এ জন্যই রাষ্ট্রের সংস্কার প্রয়োজন যা নিয়ে কাজ করছেন ড.মুহাম্মদ ইউনুস। আমাদের উচিত সকলেই তাকে সহযোগিতা করা। দিনের ভোট রাতে হবে সেটা আর চাই না। চাই স্বাধীনভাবে সময় মত নিজের ভোটটি নিজে প্রয়োগ করার ক্ষমতা। তারা আরও বলেন,দেশের মানুষ উন্নয়ন এবং নির্বাচন অবশ্যই চায় তবে সেটা হতে হবে গ্রহনযোগ্যতা সম্পন্ন। উন্নয়নের নামে লুটপাট এবং তড়িগড়ি নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে পুনরায় একই গর্তে আর পা ফেলতে চায়না সাধারন মানুষ।