জাগো নারায়ণগঞ্জ:
কানাইনগর ছোবহানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন মাষ্টারের বিরুদ্ধে নারায়নগঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে মামলা হয়েছে।
গত ১৫ জুন ২০২৩ সালে কানাইনগর ছোবহানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারি শিক্ষক মনির হোসেন বাদী হয়ে আমলী আদালত -২ এ মামলাটি দায়ের করেন। আদালত মামলাটিকে পিটিশন নং ২৩২/২০২৩ হিসেবে গ্রহন করে তদন্তের জন্য সিআইডি নির্দেশ দেন। সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০২৪ সালের মার্চ মাসের ১০ তারিখ প্রতিবেদন দাখিল করার পর মামলাটি সি,আর মামলা নং৪৩০/২০২৪ হিসেবে রুজু হয়। সিআইডি তাদের তদন্তে আসামী আমজাদ হোসেন সহ তিনজনের বিরুদ্ধে ৪৭ লক্ষ ৪২ হাজার ২০০ টাকা হিসেবের গড়মিল পায়। গড়মিলের বিষয়ে বিবাদীকে জিজ্ঞেসাবাদ করলে বিবাদী আমজাদ হোসেন কোন সন্তোষজনক জবাব দিতে পারে নাই।
মামলাটি তদন্তকালে প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমানে টিচার্স টাওয়ার ভবন নির্মানের কাগজ পত্র, টাকা খরচের হিসাব পর্যালোচনায় বিবাদী টাওয়ারের সভাপতি আমজাদ হোসেন, সেক্রেটারি ও অপর এক সদস্যের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৪০৬/৪২০/৫০৬(২) ধরার অপরাধের প্রাথমিকভাবে সত্যতা পায়।
মোকদ্দমার আরজি ও মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরনীতে জানা যায়,বাদী,বিবাদীসহ আরো ২৪ জন মিলে খরিদকৃত ১৪ শতাংশ ভূমিতে আট তলা ইমারতে বিভিন্ন ফ্লাটসমূহ তৈরি করার জন্য বিগত ২০১৬ সালের আক্টোবর মাসের ১৬ তারিখে ৯৭৯৫ নং রেজিষ্ট্রিকৃত শরীকানা চুক্তিপত্র সম্পাদন করে তার মধ্যে ২৮ জন শেয়ার হোল্ডারগণ টিচার্স টাওয়ার নির্মাণ করার জন্য প্রতেকের নিকট থেকে ১১ লক্ষ ৪৫ হাজার করে মোট তিন কোটি বিশ লাখ ষাট হাজার টাকা নগদ প্রদান করে। বিবাদীগণও আমজাদ হোসেন সভাপতি ও টাওয়ার নির্মাণের দায়িত্বে থাকায়, বাদী সভাপতি হওয়ার পর বিবাদীগনের নিকট টিচার্স টাওয়ার নির্মাণের আয়-ব্যয়ের হিসাব চাইলে বিবাদীগণ বাদীর নিকট হিসেব দিতে টালবাহানা শুরু করে। বাদী বিগত ২০২১ সালের ১ জানুয়ারী ব্যাংকের মাধ্যমে, ও নগদ মালামাল ক্রয়ের মাধ্যমে বিবাদীগন কে ৩৩ লাখ ২২ হাজার ৬ শত ৭৫ টাকা প্রদান করে। বাদী খরচ করেন ২৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। বাদী হিসেব করে পাওনা হন ৮ লাক ২৭ হাজার ৬ শত ৭৫ টাকা। উক্ত টাকার হিসাব প্রদান করার জন্য বাদী বিগত ২০২১ সালের এপ্রিল মাসের তারিখে বিবাদীগণের নিকট লিগ্যাল নোটিশ প্রেরন করেন।
এতে বিবাদীগন কর্নপাত না করিয়া বিবাদীগন বাদীর নিকট কোন সিসেব দিবেনা এবং বাদী ও স্বাক্ষীগণকে প্রাননাশের হুমকি প্রদান করায়। বাদী মনির হোসেন মাষ্টারের নিজস্ব ৮ লাখ ২৭ হাজার ৬ শত ৭৫ টাকা ও ২৮ জন শেয়ার হোল্ডার প্রতেকের ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩ শত ৬৫ টাকা করে ৪৭ লাখ ৪২ হাজার ২ শত টাকা মোট ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ করেন মামলায়।
এর আগে নারায়নগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলির কানাইনগর ছোবহানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন সময় ও তার বিরুদ্ধে দ্নূীতির ম্যাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ রয়েছে।
প্রধান শিক্ষক হিসেবে অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ার পর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। রাতারাতি টাকার পাহাড় বানিয়েছেন তিনি মাত্র ৯ বছর দায়িত্বকালে প্রায় ৩ কোটি ৪ লক্ষ ৮৮ হাজার ১ শত ৬৭ টাকা আত্মাসৎ এর অভিযোগ। আমজাদ হোসেন ৯ বছরের মেয়াদকালে তাঁর দুর্নীতির খতিয়ান যেন রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। স্কুলটির সাবেক শিক্ষার্থীদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে দুর্নীতির এ মহাকান্ড। অনিয়ম দূর্নীতি শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্যের কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। অভিযোগ উঠেছে, তিনি তাঁর মেয়াদকালে ৩ কোটি ৪ লক্ষ ৮৮ হাজার ১ শত ৬৭ টাকা দূর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন।
এ কারণে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেনের পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্নখাতে তাঁর দুর্নীতির খতিয়ান জনসম্মুখে প্রকাশ করার দাবি তুলেছেন-বিদ্যালয়ের ১৯৯৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। এ দাবিতে প্রায় দু’বছর ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে ওই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীছাত্র ছাত্রী অভিভাবক দেয়া তথ্যমতে, আমজাদ হোসেন স্কুলের পূন:ভর্তি বাবদ ৩২ লক্ষ ৭৬ হাজার, বিলম্ব অনুপস্থিত বাবদ ৩ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা, খেলাধুুলা খাতে ৯ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা, নির্মাণ খাতে ৯ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, গ্রায়াচুটি বাবদ ১২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, বিদ্যুৎ বিল বাবদ ৮ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা, মিলাদ বাবদ ৮ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা, দুঃস্থ: তহবিলের ৩ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা, পাঠাগারের ৩ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা, গবেষণার ৩ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা, সাংস্কৃতিক খাতে ৩ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা, স্কাউটের ৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা, উন্নয়নের ৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা, কম্পিউটারের ৬ লক্ষ ৩০ হাজার, মসজিদ ফান্ডের ৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা, অগ্রগতি পত্র বাবদ ৫ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা, মনোগ্রাম বাবদ ৫ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা, এসএসসি পরিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরন বাবদ অতিরিক্ত ২৮ লক্ষ ৩ হাজার ১ শত ৬৭ টাকা, কৃষি ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিষয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষা বাবদ ৮ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা, উপবৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র ছাত্রীদের সরকারি অনুদানের ৫ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা গত ১০ বছরে সব মিলিয়ে তিন কোটি চার লক্ষ আটাশি হাজার এক শত সাতষ্টি টাকা। এর প্রমাণ হিসেবে স্কুলের রশিদ ও ব্যাংক এ্যাকাউন্ট সহ নানা তথ্য-উপাত্ত্ব তুলে ধরে আন্দোলনকারীরা।