জাগো নারায়ণগঞ্জ
নারায়নগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার কাশিপুর ইউনিয়নে এমন কোন অপরাধ নাই যা শাসক দলের নাম ব্যবহার করে হচ্ছে না। আধিপত্য বিস্তারে একের পর এক হত্যা, ভূমিদস্যুতা, চাঁদাবাজি, দখল, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে নেতাকে তুষ্ঠ রেখে এবং অনুমতি নিয়েই চলছে নৈরাজ্য। ক্রাইমজোন যেন কাশিপুর। প্রতিনিয়তঃ কোন না কোন অপরাধ ঘটেই চলেছে।
শাসক দলের একজন শীর্ষ নেতা, নেতা পুত্র, নেতার চেলা চামুন্ডাদের নাম ব্যবহার করে প্রকাশ্যেই চলছে সকল ধরণের অপরাধ। এমন অপরাধের ধারাবাহিকতায় প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ মিয়াকে (৭০) কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে । যার সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ফতুল্লা থানা পুলিশ নির্মম এমন হত্যাকান্ডের ঘটনায় শনিবার (২৯ জুন) দুপুরে বাপ্পি ও জামাল নামে দুজনকে গ্রেফতারের পর র্যাব ১১ ব্যাপক অনুসন্ধ্যান করে আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ মিয়া হত্যাকাণ্ডের মূল আসামিসহ এজাহারনামীয় চার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- প্রধান আসামি কাশিপুরের মো. সফর আলি মাঝির ছেলে আলাউদ্দিন ওরফে হীরা (৩৫), পশ্চিম ভোলাইলের আওলাদ হোসেনের ছেলে মো. আলআমিন (২২), একই এলাকার মো. জাফরের ছেলে মো. রাসেল (২০) ও মো. সেলিমের ছেলে মো. সানি।
এর আগে শুক্রবার (২৮ জুন) রাতে নিহতের ছেলে মুন্না বাদী হয়ে ২১ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
রোববার (৩০ জুন) সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীনগরে র্যাব-১১ সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান সিইও লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা।
র্যাব জানায়, র্যাব-১১ এর একটি অভিযানিক দল শনিবার (২৯ জুন) নারায়ণগঞ্জ সদরের সৈয়দপুর থেকে সুরুজ মিয়া হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি আলাউদ্দিন ওরফে হীরাকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্যমতে অপর তিন আসামিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার রতনপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জানা যায়, ভুক্তভোগী সুরুজ মিয়ার সঙ্গে প্রধান আসামি আলাউদ্দিন ওরফে হীরা এবং তার ভাই সালাউদ্দিন ওরফে সালুর আগে থেকেই থেকেই বিরোধ ছিল। ঘটনার ১০-১৫ দিন আগে গ্রেপ্তারকৃত আসামি হীরা ও তার ভাই সালু এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনে গিয়ে ভবনের মালিকের নিকট চাঁদা দাবি করেন। ওই ভবনের মালিক এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি হিসেবে সুরুজ মিয়ার কাছে বিচার দেন। সুরুজ মিয়া আসামি হীরা ও সালুর বাবাকে বিষয়টি অবহিত করেন এবং হীরা ও সালুকে চাঁদাবাজি থেকে বিরত থাকতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন হীরা ও সালু।
এমন নির্মম হত্যাকান্ড ছাড়াও ইতিপূর্বে আরো হত্যাকান্ডের ঘটনায় সকল সময় এলাকাবাসীর মাঝে আতংক থাকে সব সময়। আর অভ্যন্তরীর নোংড়া রাজনীতির কারনে অত্যান্ত কৌশলে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে স্থানীয় নেতাকে ম্যানেজ করেই এমন নির্মম ঘটনা ঘটিয়ে নিজেদেরকে প্রতিপক্ষ শত্রু মুক্ত করে অপরাধীরা। কাশিপুরের অসংখ্য এমন অপরাধের মুখ্য ভূমিকায় একজন মূমুর্ষ নেতা বিছানায় শুয়ে থেকেই সকল ধরণের কলকাঠি নাড়েন বলে চাউর রয়েছে এলাকাজুড়ে।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে কাশিপুর এলাকার আওয়ামীলীগ সমর্থন করা প্রবীন কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘একজন নেতা যিনি মৃত্যুশয্যায়। এই নেতাই কাশিপুরের সকল অপরাধের হোতা। চলাফেরা করতে না পারলেও ওই নেতাই কলকাঠি এখনো নাড়ছেন সকল অপরাধের। নির্মম হত্যাকান্ডের আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ মিয়া নিজেও ও তার পরিবার মুমূর্ষ ওই নেতার সমর্থন করতেন আবার যারা হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তারাও একই নেতার নাম নিয়ে সকল ধরণের অপরাধ করতো। তাইলে ওই নেতার হুকুম ছাড়া যেমন সুরুজ মিয়া ও তার পরিবার এক চুলও পা ফেলতো না তেমনি সুরুজ মিয়ার হত্যা মামলার মূল আসামি সালাউদ্দিন সালু ও হিরাচক্র ওই মূমুর্ষ নেতার কথার বাইরে কোন কাজ করতো না । তা হলে এই সুরুজ মিয়ার হত্যাকান্ডের নেপথ্য নায়ক কে ?”
মুমূর্ষু ওই নেতার নাম জিজ্ঞেস করলে সকলেই বলেন, আপনারা যারা নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিকতা করেন তারা সবই বুঝেন । কে এই মুমূর্ষু নেতা । আমাদের জিজ্ঞেস করে কেন বিভ্রান্ত করেন।
সুরুজ মিয়া হত্যায় প্রধান আসামি কাশিপুরের মো. সফর আলি মাঝির ছেলে আলাউদ্দিন ওরফে হীরা (৩৫), পশ্চিম ভোলাইলের আওলাদ হোসেনের ছেলে মো. আলআমিন (২২), একই এলাকার মো. জাফরের ছেলে মো. রাসেল (২০) ও মো. সেলিমের ছেলে মো. সানি গ্রেফতারের খবর মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পরলে এলাকার অনেকেই বলেন, ‘এখন গ্রেফতার হওয়া এই চার হত্যাকারী কার লোক ? কার চেলা হিসেবে হত্যাসহ নানা অপরাধ করে এরা ? এরা হত্যাকারীচক্র ওই মুমূর্ষু নেতার ই চেলা । তাই কাশিপুরের শান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে মুমূর্ষু ওই নেতার বিরুদ্ধে কঠোর হস্তে ব্যবস্থা নিতেই হবে । নানা অসুস্থতার কারণে বিছানা থেকে উঠতে না পারলেও কাশিপুরের একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রাখতে এখনো উল্লেখিত সকল ধরণের অপরাধের মূল হোতাই ওই নেতা। শারিরীকভাবে ওই নেতা চলাচলে অক্ষম হলেও মানষিক শক্তি অত্যান্ত প্রখর। স্বার্থের কারণে ওই নেতার কাছে কোন স্বজন বা আত্মীয়ের ঠাঁই পায় না বলেও সকলেই জানেন। যিনি কথায় কথায় প্রভাবশালী সংসদ সদস্য ও তার পুত্র, ভাজিতার নাম ব্যবহার করে পুরো কাশিপুরে জুজুর ভয় দেখিয়ে অতিষ্ঠ করে রাখে সাধারণ মানুষকে।’