নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ঐতিহাসিক ডিআইটি মাঠে ফতুল্লা থানা বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে অংশ নিয়ে জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতারা।
শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে ফতুল্লার ডিআইটি মাঠে এই সমাবেশ শুরু হয়। বিকেলে সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও দুপুরের পর থেকেই সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে। ফতুল্লার এ মাঠে ১৭ বছর পর সমাবেশ করে বিএনপি। এর আগে ২০০৮ সালে সর্বশেষ এখানে খালেদা জিয়া সমাবেশ করেছিলেন।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আবারও বিএনপিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়। তারেক রহমানের নেতৃত্বে এসকল নেতাকর্মীরা বিগত ১৭ বছর আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। আমরা রাজপথ ছেড়ে যাইনি। বিএনপি মানুষের ভোটাধিকারের জন্য সবসময় সংগ্রাম করেছে। বেগম খালেদা জিয়া ৬ বছর জেল খেটেছে, শেখ হাসিনার সাথে আপোষ করেনি। বিএনপি প্রতারণা করে না, মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করে।
আজ যে উচ্ছ্বাস দেখেছি, সেটা একটা নির্বাচনী আমেজের মতো। ব্যান্ডপার্টি ভুভুজেলা নিয়ে এপ্রান্ত থেকে শুরু করে ওপ্রান্তের মানুষ এসেছে। এই যে নির্বাচনী আমেজ আপনাদের মধ্যে দেখতে পেলাম, কিন্তু একটি কথা বলি- বিগত ১৫ বছরে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী প্রাণ দিয়েছে। ফতুল্লার শাওন পুলিশের নির্মম গুলিতে নিহত হয়েছে। নেতাকর্মীরা বাড়িতে থাকতে পারেনি। বাবার লাশ কবর দিতে পারেনি।
সেইসব নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা ছিল ফ্যাসিবাদ সরকার হটিয়ে একটি অবাধ অংশগ্রহনমূলক নির্বাচন৷ আমদোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ কে বিদায় করা হয়েছে।
জনগনের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য আমাদের নেতা তারেক রহমান দীর্ঘ ১৫ বছর দেশে আসতে পারেন না, আমাদের নেত্রী ৬ বছর জেল খেটেছেন। কিন্তু এখনো আমাদের দাবি পূর্ণ হয়নি। যতোদিন দাবি পূর্ণ না হবে ততোদিন আমরা ঘরে ফিরে যাবো না।
এই সরকার যেদিন শপথ নিয়েছে সেদিন বলেছিল গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে তারা সরে যাবে। বিএনপিও তাদের যৌক্তিক একটি সময় পর্যন্ত অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে যাবে।
কিন্তু নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করলে ছাড় দেয়া হবে না।
অনেকেই বলেন বিএনপি সংস্কার চায় না। আমাদের নেতা তারেক রহমান ২০২৩ সালেই ৩১ দফা দিয়েছেন। যেখানে সংস্কারের সব কথা বলা হয়েছে।
অবৈধ হাসিনা সরকার বিগত সময়ে জনগনের জন্য কাজ করেননি। এই আসনের সাবেক সাংসদ ফতুল্লার মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন আর বড় বড় কথা বলেছিলেন। আর জিদেশে টাকা পাচার করেছিলেন। এইগুলো শেখ হাসিনার নির্দেশেই করা হয়েছিল। দেশের মানুষের পকেটের টাকা তারা বিদেশে পাচার করে মানুষকে দরিদ্র থেকে আরো দরিদ্র করেছে। দেশলে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিনত করেছিল।
জিয়াউর রহমান করেছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, আর খালেদা জিয়া ক্ষমতা গ্রহন করে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে জনগনের জন্য কাজ করে। আগামিতে বিএনপি ক্ষমতা আসলে আবারো জনগনের উন্নয়ণে কাজ করবে। বিএনপি মানুষের ভোটাধিকারে বিশ্বাস করে। আমাদের নেত্রী ৬ বছর জেল খাটলেও স্বৈরাচারী হাসিনার সাথে আপোষ ক্ক্রেননি, ৯ বছর আন্দোলন করলেও এরশাদের সাথে আপোষ করেনি। বিএনপি মানুষের উন্নয়নের চিন্তা করে।
আমরা বিশ্বাস করি আগামিতে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে৷ যে বির্বাচনে ভালো মানুষ এমপি নির্বাচিত হবে। আমরা চাইনা আবারো কোন গড ফাদার জন্ম হোক৷ আগামিতে কেমন এমপি চান, সেটা আপনাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ আপনারা যাকে চান নারায়ণগঞ্জের পাঁভটি আসনে তাদেরকে দল মনোনয়ন দেবে।
আমরা সন্ত্রাসের কলঙ্ক ঘুচিয়ে একটি সুন্দর নারায়ণগঞ্জ গড়তে চাই।
আমরা বিদেশে গাড়ি বাড়ি করে আপনাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চাই না৷ আপনাদের পাশে থাকতে চাই।
অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু বলেন, আপনারা পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে চাইলে নির্বাচন দিন। নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় বসুন। আপনারা ভাবেন নির্বাচন দিলে বিএনপি চলে আসবে। কারণ বিএনপি একমাত্র দল যারা জনগণের সাথে আছে।
আজকের এই মাঠে বিগত সতেরো বছর অনেক নেতা এসেছে অনেক এমপি এসেছে। কেউ কী আপনাদের জলাবদ্ধতার সমস্যার সমাধান করেছে? তারা শুধু সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতে ও লুটপাট করতে এসেছিল। আজকে এ মাঠে আমি আপনাদের কথা দিয়ে যাই, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে আপনারা ঘরেই কোরবানি দিতে পারবেন, আর ছাদে উঠে কোরবানি করা লাগবে না।
তিনি আরো বলেন, মাদক ও সন্ত্রাসীদের বিএনপি আপনাদের নিয়ে প্রতিহত করবে। আমাদের সন্তানরা যেন স্কুলে যেতে পারে সে ব্যাবস্থাও আমরা করবো।
এই ফতুল্লার পানি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে সেটা নিয়ে স্থানীয় এমপি অনেক কথা বলেছেন কিন্তু সমাধান করেননি৷ বিএনপি ক্ষমতায় এলে সে সমস্যা সমাধান করা হবে।
আওয়ামীলীগের আমলে এই ফতুল্লায় ঘরে ঘরে মাদক পৌছে গিয়েছিল, সে মাদকের সমস্যা সমাধান করা হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা করে বলেন, আপনারা সংস্কারের কথা বলছেন, শেখ হাসিনা যেদিন পালিয়ে গেছে সেদিনই অর্ধেক সংস্কার হয়ে গিয়েছে। পাঁচ বছর নয়, ৫০ বছর ক্ষমতায় থাকুন কিন্তু জনগনের মেন্ডেট নিয়ে থাকুন। নির্বাচন দিন, দেখেন জনগনকে কে সংসদে পাঠায়।
সমাবেশে নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব বলেন, আজ অনেকে হাইপ তুলছে এ সরকারকে ৫ বছর থাকতে হবে। ৫ নয় ৫০ বছর থাকুন। আগে নির্বাচিত হয়ে আসুন। ফ্যাসিস্টদের সময় আমলারা এভাবেই বলত শেখ হাসিনার সরকার আরও বেশি দরকার। সেই প্রচার করে তারা দেশকে লুটেপুটে খেয়েছে।
রাজীব ইসরায়েলী হামলার তীব্র নিন্দা বলেন, দুসময়ে রাজপ্রাসাদে থাকা নেতার ভালো কথার চেয়ে দুসময়ে রাজপথে থেকে আন্দোলন করা কর্মীর অভিমান আমার কাছে বেশী দামি
আমার নেতা তারেক রহমান বলেছেন সবার আগে দেশ ও দেশের মানুষ। বিএনপি সেই রাজনীতিই করে।
আমাদের একমাত্র নেতা তারেক রহমান আর আমরা সবাই দায়িত্বশীল। আজকে প্রয়োজনে দায়িত্ব দিয়েছেন, আবার দায়িত্ব থেকে সরিয়েও দিতে পারেন। দায়িতে পেয়ে কেউ অহমিকা করবেন না। কোন নেতার কারনে দলের বিন্দু পরিমান ক্ষতি হলে তাকে ছাড় নয়।
আমাদের মতো নেতাদের ২/৩ মাসের বেশী জেল খাটতে হয়নি। কিন্তু আমাদের নেত্রী বছরের পর বছর জেল খেটেছেন৷ এমন নেত্রীর বদনাম কেউ করবেন সেটা মেনে নেবো না।
আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেন, শামীম ওসমান একবার গেছে বোরকা পরে, আরেকবার গেছে ৫ তারিখের আগেই। আপনি কিসের খেলা খেলবেন৷ একবার পালিয়েছেন বোরকা পরে এবার খেলার কথা বলে খেলা শুরুর আগেই পালিয়েছেন।
শহিদুল ইসলাম টিটু তার বক্তব্যে বলেন, আন্দোলন করেছি রাজপথে। তখন অনেককে খুজে পাইনি। এখন আমরা যখন হাটি তখন দেখি পেছনে হাজার কর্মী। যারা ছিল তারা পেছনে পরে যাচ্ছে। যারা আগে ছিল তাদের সামনের কাতারে থাকবে।
এখন নির্বাচনের সময় এসেছে আর নেতাকর্মীদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। বলছেন আমি নমিনেশন নিয়ে এসেছি। বিগত দিনে যেভাবে নমিনেশন দিয়েছিল সেভাবে এবার দিবে না।
এবার আমাদের নেতা বলে দিয়েছেন যারা মাঠে ছিল যারা তৃণমুল থেকে উঠে এসেছে তাদের নমিনেশন দেবেন।
আমাদের দল যাকে নমিনেশন দেবে আমরা তার সাথেই আছি।
রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী বলেন, বিগিত বছরে যারা মামলা হামলা করে দল করেছে, তাদেরকে নতুন বিএনপির ভিড়ে যেনো হারিয়ে না যায় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। তৃণমূলের একজন কর্মীকেও হারাতে দেয়া হবে না৷
সমাবেশে ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটুর সভাপতিত্বে ও থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মামুন মাহমুদ এবং প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সোনারগাঁ থানা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, জেলা বিএনপির সদস্য আনোয়ার সাদাত সায়েম, ফতুল্লা থানা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রুহুল আমিন শিকদার, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক রফিকুল ইসলাম ভূইয়া জেলা ছাত্রলের সাবেক সভাপতি নাহিদ হাসান ভূঁইয়া প্রমূখ।