ষ্টাফ রিপোর্টার:
“জেলার আইন শৃংখলা পরিস্থিতি আগের চাইতে অনেকটা ভাল” এবং “ মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ জিরো টলারেন্সে”। পুলিশের এমন চিরাচায়িত শব্দটির সুবিচার বা প্রয়োগ না হওয়ার ফলে যেন পুরো জেলা জুড়েই যেন আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি এতটাই নাজুক অবস্থায় নিয়ে এসেছে। পুলিশের নিরবতার ফলে সামান্যতম ঘটনায় এমন অনেক গুরুতর অপরাধের জন্ম দিচ্ছে যা ভাষায় প্রকাশে মত নয় এক কথায় নজীরবিহীন অবস্থার সামিল। আর জেলার আইন-শৃংখলার দ্বায়িত্বে থানা পুলিশের চোখে যেন না দেখার ভান করাটা দুঃখজনক। তবে পুলিশের নিরবতায় আর প্রকাশ্যে মাদক এবং সামান্য বিষয়ে গুরুতর অপরাধের প্রবনতা বৃদ্ধিতে সাধারন মানুষকে আতংকিত করে তুলেছে।
সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে ঘর বের হয়ে পুনরায় ঘরে ফিরে যাওয়াটা যেন একটি স্বপ্ন। নারায়ণগঞ্জের ৭টি থানা এলাকার মধ্যে সবচাইতে নাজুক আইন-শৃংখলা অবস্থা ফতুল্লা মডেল থানাধীন প্রতিটি পাড়া-মহল্লা। মাদক,চুরি,ছিনতাই,হত্যাকান্ড,অপহরনসহ এমন কোন অপরাধ নেই যা অত্র থানা এলাকায় ঘটছেনা। ৫ আগষ্টের পরবর্তী সময়ে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় পুলিশের তৎপরতার অভাবের কারনে অপরাধের সাথে যুক্ত অপরাধীরা যেন উন্মুক্ত ময়দান পেয়েছে যার ফলে যা খুশি তাই করতে সক্ষম হচ্ছে। আর এ সকল অপরাধের মুলে হচ্ছে উন্মুক্ত মাদক ব্যবসা আর মাদক সেবন।
এ সমীকরনে দেখা যায়,প্রতিটি পাড়া-মহল্লাতে মাদকের এতটাই প্রবনতা বেড়েছে যে তুলনাবিহীন। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে মরননেশা ইয়াবা,ফেন্সিডিল,গাজাঁ,.হেরোইনসহ নানা প্রকার মাদক। আর এ উন্মুক্ত মাদকের আসক্ত হয়ে পড়েছে ১২ বছরের কিশোর থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধরাও। আর মাদক সেবনে ছেলেদের পাশাপাশি কোন অংশে পিছিয়ে নেই মেয়েরাও।
ফতুল্লা থানাধীন প্রতিটি পাড়া-মহল্লাতে প্রায় কয়েক হাজার মাদক স্পট রয়েছে যেখানে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার মাদক বিক্রি হচ্ছে অহরহ। প্রায় দুই বছর যাবত মাদকবিরোধী কোন অভিযান না থাকার ফলে কতিপয় পুলিশ সদস্য এবং সোর্সের সার্বিক সহযোগিতায় প্রকাশ্যেই মাদক বিক্রি করে কয়েক শতাধিক মাদক বিক্রেতা আজ কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।
অনুসন্ধানে দেখা যায়,মাদক বিক্রেতাদের মাদক বিক্রির একটি মোটা অংশ পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন সদস্যদের কাছে যাচ্ছে সোর্স এবং কিছু পুলিশ কনষ্টেবলের মাধ্যমে। আর ৫ আগষ্টের পুর্বে স্বৈরাচারী হাসিনার পক্ষালম্বন করে সাধারন মানুষের উপর হামলার বিষয়টি এখনও পুলিশের মনে আতংক বিরাজ করায় পাড়া-মহল্লায় তাদের নিয়মিত টহল ব্যবস্থা না থাকার ফলে অনেকটা খোলা মাঠেই উন্মুক্ত পরিবেশে মাদক ব্যবসায়ীরা যেন প্রতিটা দিনই যেন চাঁদ রাত মনে করে মাদক বিক্রি করছে। মাদক বিক্রির লাভের একটা অংশ দিয়ে বিদেশী পিস্তলসহ দেশীয় অস্ত্র ক্রয় করছে আর বিভিন্ন বয়সী ছেলেদের দিয়ে প্রতিটি মাদক স্পটের চর্তুপাশে পাহাড়ার সুব্যবস্থা গড়ে তুলে দিব্ব্যি মাদক ব্যবসা করছে। আবার কিছু কিছু মাদক স্পটের আশপাশে নিজেদের সুরক্ষার জন্য সিসি ক্যামেরাও স্থাপন করেছে মাদক ব্যবসায়ীরা।
ফতুল্লা থানাধীন ফতুল্লা রেলষ্টেশনের চর্তুপাশে,আলীগঞ্জ,দাপা,দাপা ইদ্রাকপুর,পাগলার কুতুবপুরের প্রতিটি মহল্লা,মাসদাইর বাজার ও আশপাশ এলাকা,দেওভোগ,ভোলাইল,নরসিংপুর,মুসলিমনগর,ধর্মগঞ্জের প্রতিটি অলিগলিতেই ব্যাপক হারে মাদক বিক্রি হচ্ছে উন্মুক্ত পরিবেশে। আর এ সকল মাদক স্পটগুলোতে বাধা কিংবা প্রতিবাদ করার মানুষও নেই। এ সমস্ত এলাকাগুলোতে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশ ও পুলিশ সোর্স এবং নামধারী সাংবাদিকের ছত্রছায়ায় নাকি মাদক বিক্রি করছে।
কয়েকটি এলাকার সাধারন মানুষের বক্তব্য অনুযায়ী জানা যায়,আমাদের এলাকাতে মাদকের প্রবনতা এতটাই বেড়েছে যা বলাবাহুল্য। স্থানীয় নেতা এবং বিশেষ পেশার কর্তাদের সহযোগিতায় আর পুলিশ ও তাদের সোর্সের সার্বিক সহযোগিতা মাদক ব্যবসায়ীদের আরো গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। মাদক উদ্ধার কিংবা মাদক বিক্রেতাদের গ্রেফতারের জন্য এখানে পুলিশের আনাগোনা দেখা না গেলেও কিছু কনষ্টেবলরা সোর্সের সাথে আসেন এবং মাসোহারা নিয়ে চলে যান।
তারা আরও বলেন,প্রতিটি পাড়া-মহল্লাতে মাদক বিক্রেতা এবং সেবনকারীর সংখ্যা বাড়ার ফলে প্রতিনিয়ত সামান্য বিষয়ে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মোহড়া সেখানে বসবাসকারী প্রতিটি সাধারন মানুষের শান্তি কেড়ে নিচ্ছে। আবার এ সকল ঘটনায় ভুক্তভোগীরাও থানায় আসতে চায়না পুলিশে গাফলতির কারনে। কারন হিসেবে অনেক বলেন,যদি থানায় গিয়ে জিডি কিংবা অভিযোগ করতে কোন প্রকার টাকার প্রয়োজন না হলেও পুলিশকে ঘটনাস্থলে নিতে হলে প্রচুর টাকা গুনতে হয় যা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়না।
তবে থানাধীন বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় বসবাসকারী সাধারন মানুষের মতে,বর্তমানে প্রতিটি পাড়া-মহল্লাতে যে পরিমান অপরাধ প্রবনতা বেড়েছে তার মুলে হচ্ছে মাদক। পুলিশের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে এলাকা গুলোতে যে মাদক বিক্রি হচ্ছে তা বন্ধ না করতে পারলে দিনের পর দিন এ অপরাধের প্রবনতা বাড়তেই থাকবে। তারা বলেন,মাদক সেবনের টাকা সংগ্রহ করতে গিয়ে বিভিন্ন অপরাধীরা পাড়া-মহল্লার অলি-গলিগুলোকে যেন আতংকে রুপ ধারন করে তুলেছে। প্রকাশ্যে ডেকে ডেকে মাদক বিক্রির এ চিত্র বিগত সময়ে কখনও কোন মহল্লাতে দেখা না গেলেও বর্তমানে এর চিত্র অহরহ। এ জন্য পুলিশের নিরবতাকেই দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
ফতুল্লা থানাধীন প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি ও অপরাধ নিয়ন্ত্রন বন্ধে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ,জেলা পুলিশ সুপার ও র্যাব-১১’র সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করেন সেখানে বসবাসকারী শান্তিপ্রিয় সাধারন মানুষ।