ডিসির প্রচেষ্টায় সব বন্ধ
ষ্টাফ রিপোর্টার:
প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উস্কে বহিরাগতদের নিয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রিপারেটরী স্কুলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টির প্রচেষ্টা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সদর এসিল্যান্ড। তিন সদস্য বিশিষ্ট সদস্যদের মাধ্যমে হবে তদন্ত ঘটনার।
১৮ আগষ্ট রবিবার সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে নারায়ণগঞ্জ প্রিপারেটরী স্কুলে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বহিরাগত শিক্ষার্থীদের নিয়ে মিলি আফরোজ ও বহিষ্কৃত শিক্ষিকা ইসমত আরা সহ একাধিক শিক্ষিকার নির্দেশে।
এর আগে সোয়া ১০ টায় প্রিপারেটরী স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্কুলের মূল গেইটের সামনে অব্থান নেন শিক্ষিকা ইসমত আরা। তার নির্দেশে পরে গেইটের সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে দেওয়াল টপকে গেইটের ভিতর প্রবেশ করে কয়েকজন বহিরাগত শিক্ষার্থীরা এবং তারা তালা ভেঙে স্কুল প্রাঙ্গণে প্রবেশ করায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের। সেখানে অবস্থান করে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের অপসারণ সহ মোট ১১ দফা দাবীতে বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু করে আগত প্রাক্তন ও বহিরাগত শিক্ষার্থীরা। এসময় স্কুল চলাকালীন বিক্ষোভ আন্দোলন করায় ক্ষেপে যান অভিভাবকরা এবং তারা এবিষয়ে অবগত নন বলেও জানান।
অন্যদিকে ১৬ ও ১৭ আগষ্ট দুইদিন ধরে চাষাড়া কলেজরোডস্থ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষিকা ও বর্তমানে মুন্সিগঞ্জে একটি স্কুলে কর্মরত শারমিন আক্তারের বাসায় এভিলিন আক্তার রুনা, ইসমত আরা ও মিলি আফরোজ যৌথভাবে মিলে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে সভা করে বিদ্যালয়ের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার ও প্রধান শিক্ষকে অপসারণ করার পরিকল্পনা গ্রহন করে। স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়েও হোয়াটসএপে স্টেপডাউন রাজ্জাক নামে একটি গ্রুপে খোলা হয় যেখানে সরাসরি বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে প্রধান শিক্ষিকের রুমে প্রবেশ করে বন্ধ করার, মহিউদ্দিন নামে এক শিক্ষকে মারা এবং কেউ বাধা দিলেই মাইর দিতে নির্দেশ দেন মিলি আফরোজ। অন্যদিকে স্কুলের ক্ষতি করতে না দেবার জন্য সকাল থেকেই একদল প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন বিদ্যালয়ে।
বিদ্যালয়ের সভাপতি নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হককে বিক্ষোভ আন্দোলনের বিষয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অবগত করলে এসময় বিজিবি ফোর্স নিয়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হোন নারায়ণগঞ্জ সদর এসিল্যান্ড লায়লা তুল হোসেন। ৩ ঘন্টায় চেষ্টায় এসিল্যান্ডের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এসময় তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে বসতে চাইলে তারা জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসবে তাকে নিয়েই বসবে। পরবর্তীতে এসিল্যান্ডের উপস্থিতিতে যুবদলের নেতা শাহেদ আহমেদের মুঠোফোন দিয়ে নারায়ণগঞ্জের সমন্বয়ক ফারহানা মানিক মুনাকে ফোন দেওয়া হলে তিনি বিষয়টি অবগত নন বলে জানান। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে পৌনে ৩টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকে কার্যালয়ে যান সদর এসিল্যান্ড।
দীর্ঘ ১ ঘন্টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও বিদ্যালয়ের সভাপতি মোহাম্মদ মাহমুদুল হক দুই পক্ষেরই কথা শুনেন এবং সভায় একজন ম্যাজিস্ট্রেট ও দুই জন জেলা শিক্ষা অফিসারকে নিয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তী তদন্তের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ প্রিপারেটরী স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে আব্দুর রাজ্জাক থাকবে কিনা তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত দেন অত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক।
একই সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধির কাছে জেলা প্রশাসক অনুরোধ জানান পরবর্তীতে কেউ যেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে অনিয়ম বা অন্যায় না করে সেদিকেও নজর রাখতে বলেন।
এবিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ফারহানা মানিক মুনার সাথে কথা হলে তিনি জানান,এবিষয়ে হয়তো তাদের পরিচিত পোলাপাইনের সাথে কথা হয়েছে। আমি বিষয়টি সম্পর্কে জানি না। আমাকে স্কুল থেকে সকালে জানানো হয়েছে বিষয়টি। আমি বিদ্যালয়ে যাবো এরকম কোন কথা হয়নি কারো সাথে।
জানা যায়, বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষিকা গত বুধবার মিলি আফরোজ ও জয়ার মধ্যে একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনাকে ইস্যু করে এবং সাবেক শিক্ষিকা শারমিন আক্তার, এভিলিন আক্তার রুনা ও ইসমত আরা মিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাককে অপসারণ করার পায়তারা করেন। এতে কয়েকজন প্রাক্তন এবং কিছু বহিরাগত শিক্ষার্থীদের যুক্ত করেন তারা।
এসময় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, বহিষ্কৃত শিক্ষক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ- সমন্বয়ক ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।