ষ্টাফ রিপোর্টার:
ফতুল্লার এনায়েতনগর পঞ্চপটি এলাকার এক নয়া মুর্তিমান আতংকের নাম সারজিল আহম্মেদ অভি। ফতুল্লার শিল্পনগরী এনায়েতনগর ইউনিয়নের রাজনীতিতে অভি পরিচিত মুখ না হলেও তার রাজনীতির সার্টিফিকেট চাচা কিং মেকার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী।
জানা যায়, বাবা প্রয়াত নুর মোহাম্মদ হলেও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর ভাতিজার পরিচয়ে বেশি পরিচিত তিনি। কেউ বাবার নাম জানতে চাইলে আগে চাচা মোহাম্মদ আলীর পরিচয় দিয়ে থাকেন। কিং মেকার মোহাম্মদ আলীর নামে প্রভাব বিস্তারে ভাগিনা ফরিদ, সুমন, রনি, ভাতিজা হাজী রিপন, চেয়ারম্যান লিটনকেও ছাড়িয়ে গেছেন সারজিল আহম্মেদ অভি।
এনায়েতনগর ইউনিয়ন ১ নং ওয়ার্ড বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক হলেও ব্যানার ফেস্টুনে নিজের ছবি দিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সহ বিভিন্ন পদ পদবী ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণ করছেন এনায়েতনগর ইউনিয়নের অপরাধ মুলক কর্মকান্ড।
স্থানীয় বাসিন্দা সুত্রে জানা যায়, তার রয়েছে বিশাল একটি সন্ত্রাসী বাহিনী, এই বাহিনী দিয়ে নিয়ন্ত্রন করছে যমুনা ও মেঘনা তেলের ডিপোর চোরাই তেল সিন্ডিকেট, এনায়েতনগর ইউনিয়নের ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের ছোট, বড় গার্মেন্টসের জুট সেক্টর। জোড়পূর্বক জমি দখলের কন্ট্রাক সহ কেউ বাড়ি নির্মান করতে হলে এই সিন্ডিকেটকে দিতে হয় মোটা অংকের চাঁদা। এমনটাই অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শুধু তাই নয় মাদক ব্যবসা ও জুয়ার আসর নিয়ন্ত্রনেও সেল্টার দিচ্ছেন সারজিল আহম্মেদ অভি ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, আমি আমার সারা জীবনের অর্জিত সঞ্চয় দিয়ে ছোট্র একটি বাড়ি নির্মান করার জন্য কাজ শুরু করেছিলাম। সেখানে অভি ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী এসে বাঁধা প্রদান করে কাজ বন্ধ করে দেয়, তাকে মোটা অংকের চাঁদা দিতে হবে, চাঁদা না দিলে সে বাড়ির কাজ করতে দেবে না। আমি তার বাবার বন্ধু পরিচয় দেওয়ার পরও সে মানেনি বাড়ি নির্মানের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।
অভিযোগে আরও জানা যায়, আওয়ামী দোসর পঞ্চবটী চাঁদনী হাউজিংয়ের অপরাধ জগতের গড ফাদার কারাবন্দী হামিদ প্রধান ওরফে পাগলা হামিদের সাম্রাজ্য এখন অভির দখলে। চাঁদনী হাউজিংয়ের বাসিন্দাদের সুত্রে জানা যায়, ৫ ই আগষ্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী আজমেরী ওসমানের ক্যাডার পাগলা হামিদ গ্রেফতার হলে চাঁদনী হাউজিংয়ে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন সারজিল আহম্মেদ অভি। এখানে জমির প্লট বেচা কেনা করলে, কেউ নতুন বাড়ি নির্মান করলে অভিকে দিতে হয় মোটা অংকের চাঁদা। চাঁদনী হাউজিংয়ে অবস্থিত রপ্তানীমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান বেষ্ট স্টাইল গার্মেন্টস থেকে জোড় পুর্বক জুট নামিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে অভির বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়,চাদঁনী হাউজিংয়ের বেশীরভাগ বাড়িতেই রয়েছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ। বিগত সময়ে পাগলা হামিদ সেই টাকা নিলেও বর্তমানে পটপরিবর্তনের সাথে সাথে সেই অবৈধ গ্যাস সংযোগ বাবদ প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এ অভি। নারায়ণগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি নং ২৩০২ এর পঞ্চবটি শাখা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হয়ে পঞ্চবটি ট্রাক, বাস, সিএনজি, অটো ষ্ট্যান্ড থেকে অভির চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও এখান থেকে দুরপাল্লার যত গাড়ি চলাচল করছে তা পুরোটাই রয়েছে অভির নিয়ন্ত্রনে। যেখান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এ অভি।
এ ব্যাপারে এনায়েতনগর ইউনিয়ন বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, বিগত স্বৈরাচার শেখ হাসির সরকারের শাসন আমলে আমরা দলের প্রতি অনুগত হয়ে সরকার প্রতিটা আন্দোলন কর্মসুচীতে সক্রিয় ভাবে অংশ গ্রহন করেছি। তখন এনায়েতনগর ইউনিয়ন বিএনপি অথবা অংগ সংগঠনে সারজিল আহম্মেদ অভি নামে কোনো অস্তিত্ব ছিল না। ফ্যাসিষ্ট সরকারের জেল, জুলুম, হামলা, মামলার শিকার হয়েছি। এলাকা ছেড়ে পালিয়ে ছিলাম, চরম দুঃসময়ে অতিবাহিত করেছি, দল থেকে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করিনি, দল এখনও ক্ষমতায় আসেনি কিন্তু সারজিল আহম্মেদ অভির মত নব্য বিএনপির নেতারা দলের নাম ভাঙ্গিয়ে সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন করছে এটা সত্যিই দুঃখ জনক।
আমরা চাই সন্ত্রাসী যে দলেরই হোক তাকে গ্রেফতারের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা হোক।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সারজিল আহমেদ অভি’র ব্যবহৃত মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। আমি এখনও পর্যন্ত কোন জায়গা থেকে চাদাঁ তুলিনি বা কেউ বলতে পারবেনা। চাদঁনী হাউজিংয়ে এখনও পর্যন্ত পাগলা হামিদের লোকজন গ্যাসের টাকা তুলছে। তাদের এ অপরাধ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করাতে চাইলে কোন সাংবাদিক পাগলা হামিদের বিরুদ্ধে লিখতে চায়না। পাগলা হামিদ নাকি নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবকে মাসে ৭ হাজার টাকা দেয় এ জন্য কেউ তার বিরুদ্ধে নিউজ করতে চায়না। তাছাড়া প্রতিটা সাংবাদিক নাকি তার কাছ থেকে টাকা পায়। রপ্তানীমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান বেষ্ট স্টাইল গার্মেন্টস থেকে ঝুট নামানোর বিষয়ে তিনি বলেন,মালিকের সাথে যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি ভাইয়ের সর্ম্পক ভাল থাকার সুবাদে তিনি তাকে বলে দিয়েছেন মালামালগুলো যেন আমাদেরকে দেন। সেই সুবাদে টাকার বিনিময়ে তা সংগ্রহ করি। প্রয়োজনে আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো আপনি তদন্ত করে দেখেন প্রকার প্রমান পান কিনা।