নামমাত্র মাদক উদ্ধার
ষ্টাফ রিপোর্টার:
মাদক অধ্যুষিত ফতুল্লা মডেল থানা এলাকায় গত একমাসে পৌনে ১০ কেজি গাঁজা ৬২ গ্রাম হোরোইন এবং ২১৭ পিস ইয়াবা উদ্ধারসহ বিভিন্ন অপরাধে ৫৮টি মামলা হয়েছে। গত জুন মাসের ৩০ দিনের থানা পুলিশের দেয়া পরিসংখ্যানের মাধ্যমে জানা গিয়েছে।
এছাড়াও ফতুল্লা মডেল থানাধীন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ১২ গ্রাম হেরোইন ৫ কেজি গাঁজা ৩০ বোতল বিদেশী মদ এবং জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করে মাত্র এক কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছে। গত একমাসে থানায় ৫৮টি মামলার মধ্যে দ্রুত বিচার আইনে ১টি,খুনের ঘটনায় ২টি,গনধর্ষন ১টি,ধর্ষন টি,নারী নির্যাতন ১টি,সড়ক দূর্ঘটনায় ১টি,চুরি ২টি,মাদক সংক্রান্ত ২৬ টি এবং অন্যান্য ২৩ টি মামলা রুজু রয়েছে। এছাড়াও জিআর মামলায় ৫০,সিআর ৪১,জিআর সাজা ১৩ এবং সিআর সাজা মামলায় ৬জনকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ।
ফতুল্লা মডেল থানাধীন এলাকাটি একটি শিল্পাঞ্চল হওয়ার ফলে বিভিন্ন জেলা হতে আগত লোকের সংখ্যা প্রচুর। কর্মের সন্ধানে এখানে আসার ফলে থানাধীন প্রতিটি পাড়া-মহল্লাগুলো জনবহুল এলাকা হিসেবে সমাদৃত। থানাধীন প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় যেভাবে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি,কিশোরগ্যাংয়ের দাপট সে হিসেবে থানা পুলিশ,গোয়েন্দা পুলিশ এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর কর্তৃক উদ্ধারকৃত মাদককে যৎসামান্য হিসেবেই দাবী করছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবী, পুরো মাস নয় প্রতিদিন প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় যেভাবে উন্মুক্ত মাদক বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা আর জুন মাসে যে পরিমান মাদক উদ্ধার করেছে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা তা মাত্র একঘন্টার বিক্রি সামগ্রী। তাদের দাবী,মাদক উদ্ধারে এবং মাদকমুক্ত সমাজ বিনির্মানে পুলিশের ভুমিকা একেবারেই রহস্যজনক। তবে গত ২৭ জুন দুপুরে প্রকাশ্যে আওয়ামীলীগ নেতা সুরুজ মিয়া মাতবরের হত্যাকান্ডটি অনেকটাই ভাবিয়ে তুলেছে থানার আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে। মাদক,কিশোরগ্যাং এবং আধিপাত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিদিনই কোন না কোন অঘটন ঘটছে থানাধীন বিভিন্ন এলাকায়। মাদকের ব্যাপক ছড়াছড়ির কারনেই নাকি এ ধরনের অপরাধ দিনের পর দিন বেড়ে চলছে।
ফতুল্লা মডেল থানাধীন এলাকায় বসবাসকারী সাধারন মানুষের দাবী, পুরো থানা এলাকাগুলো এখন মাদক বিক্রেতাদের নিয়ন্ত্রনে। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় হাত বাড়ালেই মিলছে বিভিন্ন প্রকারের নেশাদ্রব্যাদি। ফতুল্লা থানাধীন সেহাচর তক্কারমাঠ, লালখাঁ, ইয়াদ আলী মসজিদ সংলগ্ন শাহজাহান রোলিং মিলসসহ চন্দ্রাবাড়ী এলাকা, রেল ষ্টেশন, উকিলবাড়ী মোড়, পিলকুনী পুলপার,আলীগঞ্জ রেল লাইন, কুতুবপুরের নূরবাগ কুসুম বাগ, চিতাশাল, নয়ামাটি, বউ বাজার,নন্দালালপুর রেল লাইন, শাহীবাজার,মাসদাইর বাজার,গুদারাঘাট,ইসদাইর রেললাইন,মাসদাইর ঘোষেরবাগ,পশ্চিম মাসদাইর বেকারীর মোড়সহ প্রতিটি এলাকাই এখন মাদকের অভারন্যে রুপান্তরিত হয়েছে। ২৪ ঘন্টাই এ সমস্ত এলাকাগুলো মাদকের সমারোহ চলছে। আর পুলিশের কিছু অর্থলোভী সদস্য তাদের সোর্সের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে এ সমস্ত এলাকা থেকে নিয়মিতভাবে মাসোহারা নিচ্ছে বলেই মাদক বিরোধী অভিযানগুলো একেবারে কম। ঐ সমস্ত এলাকার মাদক বিক্রেতাদেরকে শেল্টার দিচ্ছে কতিপয় রাজনীতিবিদ আর বিশেষ পেশার কিছু কর্তাব্যক্তিরা।
ফতুল্লা রেলষ্টেশন এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনিক বাসিন্দা জানান,এখানে মাদকের ভয়াবহতা চোখে না দেখলে মুখে বলে শেষ করা যাবেনা। বিশেষ পেশার ব্যক্তি এবং সোর্সরাই নাকি এখানকার মাদকের শেল্টারদাতা। রাজনৈতিক ব্যক্তি ছাড়াও এদের কারনেই নাকি এখানে এত মাদকের ভয়াবহতার অন্যতম কারন। তাদের দাবী, যদি পুলিশ সদস্যরা কোন ব্যক্তির কথা না শুনে মাদকের বিরুদ্ধে চিরুনী অভিযানের মাধ্যমে অত্র এলাকা থেকে মাদককে নির্মুল করতে পারবে। আবার কোন মাদক বিক্রেতাকে আটক করলেই বিশেষ পেশার ব্যক্তিদের ফোনের পর ফোন দিয়ে উক্ত পুলিশকে ত্যক্ত-বিরক্ত করে ফেলে এমনটাই বলছেন অনেক এসআই ও এএসআই। ফতুল্লা রেলষ্টেশন এলাকার মতই অবস্থা প্রতিটি পাড়া-মহল্লার।
ফতুল্লা মডেল থানাধীন বিভিন্ন এলাকাতে মাদকের পাশাপাশি স্থানীয়দের মাঝে আরেক আতংকের নাম কিশোরগ্যাং। পর্দার অন্তরালে থেকে লালনকারী এদেরকে দিয়ে বিভিন্ন অপরাধমুলক কাজ করাচ্ছে তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য। সামান্য বিষয়ে জঘন্যতম ঘটনার জন্ম দিচ্ছে মুহুর্তের মধ্যে এ কিশোর অপরাধীরা। পর্দার অন্তরালে থাকা উক্ত নেতাদের নির্দেশে আধিপাত্য বিস্তার লাভের জন্য বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটাতেও দ্বিধাবোধ করেনা এ কিশোর অপরাধীরা। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও এ কিশোর অপরাধীরা তাদের অপরাধকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে স্থানীয়দের দাবী, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ব্যবস্থাকে আরো জোড়দার কওে এবং প্রতিটি থানায় ওপেন হাউজ ডে’র মাধ্যমে সাধারন মানুষের সাথে উন্মুক্ত আলোচনার মাধ্যমেই পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহনের মাধ্যমেই সমাজ থেকে মাদক.কিশোর অপরাধসহ সকল প্রকার অপরাধকে দমন করা সম্ভব নতুবা নয়।