শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন পরিচয়ে নির্বাচনী এজেন্ট
আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সাবেক এমপি শামীম ওসমান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর পরম বন্ধু হিসেবে পরিচিত বুলবুল আহমেদ। তার সাথে রয়েছে আওয়ামী রীগের রথি মহারথিদের পরিচয়। প্রকাশ্যে কোন ঝামেলায় না জড়ালেও এই বুববুল নেপথ্যে কারিগর হিসেবে নানা কর্মকাণ্ড করে বেরিয়েছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে। তবুও তার বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি, প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই দোসর। এবার সেই আওয়ামী লীগের দোসর বুলবুলকে মসজিদ কমিটিতে পদায়ন করতে চাইছেন একদল বিএনপি নেতারা। এতে করে নানা মহলে প্রশ্ন উঠছে।
জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমানের বিশ্বস্ততা অর্জন করায় তাঁর হাত দিয়েই কেনা হয় শত শত বিঘা জমি। বাদ পড়েনি অনুসারীরাও। শামীম ওসমানের ডান হাত খ্যাত ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত শাহ নিজামেরও কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। দিনরাত আড্ডা জমান দখলকৃত জমির উপর নির্মিত নম পার্কে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সেক্টরে টাকা প্রদানের কাজটিও করা হতো বুলবুলের হাত দিয়েই। ৫ আগস্টের পর ওসমান ভ্রাতৃদ্বয়রা পলাতক ও আত্মগোপনে থাকলেও দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন বুলবুল।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে নারায়ণগঞ্জ–৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন এই বুলবুল। নৌকা প্রতিকের এই প্রার্থীর ব্যাচ গলায় ঝুলিয়ে বিভিন্ন ক্যাম্পের নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বুলবুল। সে সময় তিনি ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচয় দিতেন। তবে ৫ আগস্টের পরে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে তিনি ভোল পাল্টে ফেলেন।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৪ ডিসেম্বর বিকেলে শহরের চাষাঢ়ায় বিএনপির মিছিল বের হওয়ার সময়ে জিয়া হলের সামনে কালো গাড়িতে বসেছিলেন শামীম ওসমান। পাশের সিটেই ছিলেন বুলবুল। তারা বেশ কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করেন। পরে গাড়ি চলে যায় চাষাঢ়ার ভেতরে। সেখানে রাম বাবুর পুকুরপাড় এলাকাতে সেলিম ওসমানের যে বাড়ি ছিল সেটা ইতোপূর্বে বিক্রি হয়ে গেছে। ফকির গ্রুপ ওই বাড়ি ক্রয় করেছে এ মর্মে সেখানে সাইনবোর্ডও সাটানো আছে। এ ফকির গ্রুপের সঙ্গেও রয়েছে বুলবুলের গভীর সখ্যতা। আর শামীম ওসমান যেসব স্থানে জমি ক্রয় করেছেন তার পুরো হিসেব রয়েছে বুলবুলের কাছে।
সেলিম ওসমানেরও ঘনিষ্ঠ ছিলেন বুলবুল। বন্দরের বিভিন্ন এলাকাতে সেলিম ওসমানের যে জমি রয়েছে সেগুলোও কেনা হয়েছে বুলবুলের মাধ্যমে। দলিল, পর্চা সহ জমি সংক্রান্ত নথিপত্র ভালো আয়ত্বে নেওয়ার কারণে ওসমানদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হন তিনি।
শুধু জমি বিক্রি না বরং প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক টাকার লেনদেনও এ বুলবুলের হাত ধরেই হতো। শ্যামল কান্তি ভক্ত নামের শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন সেলিম ওসমান। পরে তাঁর পক্ষে মাঠে নামেন হেফাজতের নেতারা। শহরের ডিআইটি মসজিদের সামনে সমাবেশ করেন হেফাজত। ওই সমাবেশের পর হেফাজতকে দেওয়া টাকাও বুলবুলের হাত দিয়েই প্রদান করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে শহরের চাষাঢ়ায় সমাবেশ করে তার হাত পা ভেঙে শীতলক্ষ্যায় ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল হেফাজত। কথিত সেই সমাবেশের পুরো খরচ সহ নেতাদের হাদিয়ার টাকাও বুলবুলের হাতেই লেনদেন ঘটে।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজামের খুব কাছের লোক ছিলেন এই বুলবুল। নিজামের সহযোগি মীর সোহেল, শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটু সহ সকলের জমির কাজগুলো বুলবুল করতেন। তবে সংশ্লিষ্টদের দাবী, বুলবুল এক সময়ে নিজামের নম পার্কেই বেশী অবস্থান করতেন। পাগলা ও আলীগঞ্জ এলাকাতে বেশ কয়েক জনের বিরোধপূর্ণ জমিতে হানা দেয় নিজাম। আর সেসব জমির কাগজ ম্যানেজ করা থেকে শুরু করে পুরো পরিকল্পনার নেপথ্যে ছিল এই বুলবুল।
সম্প্রতি ফতুল্লায় মিছিল করতে গিয়ে মীর সোহেল আলীর ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদেরকে নম পার্কের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। নিজাম দেশ ছাড়লেও নিয়মিত তার এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। দেশে অনুসারীদের কাছে পাঠানো হচ্ছে অঢেল টাকা। এসব টাকায় আওয়ামী লীগের নামধারীরা বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করতে পারেন। সে হিসেবে বুলবুলের বিরুদ্ধেও তদন্ত চেয়েছেন অনেকে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে অনেকে ক্ষোভ ঝারেন।
এতো অভিযোগের পরে আওয়ামী দোসর বুলবুলের মনে দেওভোগ মাদ্রাসার সেক্রেটারী হওয়ার খায়েস জেগেছে। আর তাকে সহযোগীতা করছেন ফতুল্লা থানা বিএনপির সহ সভাপতি আলাউদ্দিন খান শিপন। সম্প্রতি এক মিটিংয়ে এই দোসরের নাম প্রস্তুাব করেছেন বিএনপি নেতা আলাউদ্দিন খান শিপন। এতে নানা মহলে চলছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়।
এ বিষয়ে জানাতে চাইলে ফতুল্লা থানা বিএনপির সহ সভাপতি আলাউদ্দিন খান শিপন বলেন, আমি দেওভোগ মাদরাসার প্রস্তুবনা কমিটির সদস্য পদে আছি। কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে বুলবুলের নাম আমি প্রস্তুাব করেছি। কারণ সে বিগত সময়ে মাদরাসার উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। সভাপতি নির্ধারণ করা হয়েছে শাহজাহান ভাই। আর বাকি পদে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বুলবুল আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে বিতর্কিত ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও তাকে কেন প্রস্তাব করলেন– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি একজন ব্যবসায়ী। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সহ সবার সাথে তার সম্পর্ক রয়েছে। সামাজিকভাবে বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসায় তার অনুদান রয়েছে বলে তাকে সিলেক্ট করা হয়েছে।