ষ্টাফ রিপোর্টার:
“কুষ্ঠ পরাজিত, জীবন রূপান্তরিত হয়েছে”এই প্রতিপাদ্যে মানুষের মাঝে সচেতনতা পৌঁছিয়ে দিতে নারায়ণগঞ্জ জেলায় ইলেক্ট্রনিক,প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকদের নিয়ে কুষ্ঠরোগ বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১১ জুলাই বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় ফতুল্লা থানা সংলগ্ন যুবলীগ কার্যালয়ে দ্যা লেপ্রসি মিশন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সার্বিক সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয় এ আলোচনা সভাটি ।
আলোচনা সভায় দ্যা লেপ্রসী মিশন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি মি.খোকন বাড়ৈ এর পরিচালনায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলী। এছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন , দ্যা লেপ্রসী মিশন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের টেকনিক্যাল সাপোর্ট অফিসার মি.এ্যান্থনী কুইয়া সহ জেলার প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক এবং অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
এসময় কুষ্ঠ রোগ সম্পর্কে মি.এ্যান্থনী কুইয়া বলেন,কুষ্ঠরোগ বা হ্যানসেনের রোগ (এইচডি) নামেও পরিচিত মাইকোব্যাক্টেরিয়াম লেপ্রি বা মাইকোব্যাক্টেরিয়াম লেপ্রোমাটোসিস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণে স্নায়ু, শ্বাস প্রশ্বাসের নালী, ত্বক এবং চোখের ক্ষতি করতে পারে।এই রোগটি দুই ভাগে হয় পসি ব্যাসিলারি বা পিবি এবং মাল্টি ব্যাসিলারি বা এমবি। পসি ব্যাসিলারি রোগীদের ত্বক বা চামড়া দাগের সংখ্যা ১ হতে ৫ এর মধ্যে সীমিত থাকে আর এদের শরীরে খুব কম সংখ্যাক জীবানু থাকে। কিন্তু মাল্টি ব্যাসিলারি ত্বক বা চামড়ায় ৬ হতে অসংখ্যের মধ্যে সীমিত থাকে আর এদের শরীরে দাগের পরিবর্তে গুটি বা চামড়া মোটা হয়ে যেতে পারে। এই রোগে চামড়া ফ্যাকাশে দাগ-ছোপ দেখা দেয়,ত্বকে ছোট ছোট ফোঁড়ার মতো হয়,চামড়া শুষ্ক ও শক্ত হয়ে যায়,পায়ের পাতার নিচের অংশে ঘা হয়, মুখের বা কানের কিছু স্থানে ফুলে ওঠে, চোখের পাপড়ি ও ভ্রু পড়ে যায়,সংক্রমিত স্থান অসাঢ়তা অনুভব ও ঘাম হয়, অনেকে পঙ্গু হয়ে যান,পেশী দুর্বল হয়ে যায়, মুখের নার্ভ বা স্নায়ুতে প্রভাব পড়ায় অন্ধত্বের ঝুঁকি বাড়ে। কুষ্ঠ রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করলে-হাত-পা অকেজো হয়ে যায়, আঙুল ও পা ছোট হয়ে যেতে পারে, পায়ের আলসার বা ঘায়ের কারণে তা কাটা পড়ে,নাক বিকৃত হয়ে যায়, চামড়ায় জ্বালা-যন্ত্রণা হয়।তাই এই রোগের লক্ষণ দেখা দিলেই সরকারি হাসপাতাল,বেসরকারি হাসপাতাল,উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দ্রুত বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিতে হবে এবং রোগীদের বিনামূলে ওষুধ প্রদান করা হয়।
তিনি আরো বলেন,পসি ব্যাসিলারি লেপ্রসির জন্য ৬ মাস এবং মাল্টি ব্যাসিলারির জন্য ১২ মাস চিকিৎসা মেয়াদ। এর মধ্যে এমডিটি ব্লিস্টার প্যাকের ওষুধ সেবন করতে হয়। পসি-ব্যাসিলারি রোগীদের ২টি ও মাল্টি-ব্যাসিলারি রোগীদের ৩টি ঔষধের সমন্বয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। রিফামপিসিন ও ড্যাপসন সমন্বয়ে চিকিৎসাকে বলা হয় পসি-ব্যাসিলারি রেজিমেন- বা পিবিআর এবং রিফামপিসিন, ড্যাপসন ও ক্লোফাজেমিন সমন্বয়ে চিকিৎসাকে বলা হয় মাল্টি-ব্যাসিলারি রেজিমেন বা এমবিআর। বাংলাদেশের সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বক্ষব্যাধি ক্লিনিক, সরকারী ও বেসরকারী কুষ্ঠ হাসপাতালে কুষ্ঠরোগের চিকিৎসা বিনামূল্যে পাওয়া যায়। নারায়ণগঞ্জের ৫টি উপজেলায় কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসার জন্য ৫টি চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে যেখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ সকল চিকিৎসা কেন্দ্রে এমডিটি সহ অন্যান্য উপকরণ সরকার কর্তৃক বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে কুষ্ঠরোগের চিকিৎসা নেয়া একান্ত জরুরী। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা নিলে কুষ্ঠরোগে অঙ্গ বিকৃতি বা বিকলাঙ্গতা হয় না।
জেলার কুষ্ঠ রোগীদের অবস্থান জানিয়ে খোকন বাড়ৈ বলেন, বাংলাদেশ সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে কুষ্ঠ নির্মূলে জোরালো কর্মসূচি চলমান রয়েছে। সেই সাথে প্রধানমন্ত্রী ২০৩০ সালের মধ্যে কুষ্ঠমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সবাইকে কাজ করে যেতে আহ্বান জানিয়েছেন। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই নারায়ণগঞ্জ জেলাতে কুষ্ঠ রোগ নিয়ে আমরা কাজ করছি। বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলায় ২৪ জন কুষ্ঠ রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে এবং ইতিমধ্যে ৭ জন রোগী চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছে। চিকিৎসাধীন যারা আছে তারাও খুব শীঘ্রই চিকিৎসা সেবা নিয়মিত গ্রহন করলে সুস্থ্য হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবে। আমাদের নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে জেলা সদর হাসপাতালে কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। এ সব হাসপাতালে রোগ নির্ণয়ের জন্য জীবাণু নিরূপণ, স্কিন বায়োপ্সি, নার্ভ বায়োপ্সি ও অন্যান্য ইমিউনোলজিক্যাল পরীক্ষারও ব্যব¯’া আছে। দ্য লেপ্রোসি মিশন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিএলএমআই-বি) সহ বিভিন্ন বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মাধ্যমে কুষ্ঠরোগীর চিকিৎসা করে যাচ্ছে। উপরন্ত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অর্থায়নে কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধগুলো (এমটিডি) বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। তাই আপনাদের দৃষ্টিগোচর কেউ হলে আমাদের জানাবেন এবং কুষ্ঠরোগীকে চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে পাঠাবেন।
এসময় উপস্থিত জেলার বিভিন্ন সাংবাদিকদের মীর সোহেল অনুরোধ জানিয়ে বলেন, কুষ্ঠ রোগ নিয়ে এখনো অনেকের মধ্যে কুসংস্কার এবং অজ্ঞতা রয়েছে। অনেকেই ভয় বা সমাজের ভয়ে সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে না। আমি সাংবাদিক ভাইদের অনুরোধ করবো আপনেরা আপনাদের লেখনীর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে কুষ্ঠ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেন যাতে এই রোগ সম্পর্কে সবাই অবগত হয় এবং রোগীরাও চিকিৎসা সেবা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।