নিজস্ব সংবাদদাতা // শহরের বহুল আলোচিত এই হোন্ডাবাহিনীহ বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বিভিন্ন সভা সমাবেশে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। তাদের একের পর এক ‘হুঁশিয়ারি’, ‘জেহাদ’ কিংবা নতুন নতুন পরিভাষা ব্যবহার করে দেওয়া ঘোষণা সবকিছুই যেন শুধু বক্তব্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল । ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার বৈষম্যের বিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। তার সাথে সাথে লাপাত্তা হয়ে যায় আলোচিত হোন্ডা বাহিনীর সদস্যরা। এখনই তাদের এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন মনে করছে নগরবাসী। হোন্ডা বাহিনীর মূল হোতা পিজা শামীম ও আক্তার নূরকে আইনের আওতায় আনলেই বেরিয়ে আসবে অনেক অজানা তথ্য। বিশাল আগ্নে অস্ত্র এ বাহিনীর কাছে ছিল। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে পিজা ও নূরকে দ্রুত গ্রেফতারের জন্য সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানের দাবী জানিয়েছেন সচেতন মহল।
স্থানীয় সূত্র বলছে, শহর -বন্দরে প্রায়শই দাপিয়ে বেড়াত অর্ধশতের অধিক মোটরসাইকেল। তবে যেসব এলাকায় প্রয়োজন দাপট খাটানো, সেখানেই যৌথ মহড়া চলে। কখনও সেটা হয় কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের সামনে। দলবল নিয়ে বহরে সাধারণত একজন মোটরসাইকেল চালায়। পেছনে থাকে অন্য একজন। এখন মোটরসাইকেল বাহিনীতে যুক্ত হয়েছে প্রাইভেটকারও। সবশেষ নারায়ণগঞ্জের আলোচিত হোন্ডা বাহিনীর মূল নেতৃত্বদানকারী পিজা শামীমের বিরুদ্ধে আবারও অন্যের সম্পত্তি ও ফ্যাক্টরি দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল। সেই পিজা শামীম ও আক্তার নূর এখনো অধরা। এবারও পিজা শামীম তার বাহিনী নিয়ে দিনে দুপুরে অন্যের জমির ওপর দেয়াল নির্মাণ ফ্যাক্টরির মালামাল লুট করেছেন। এ সময় ভুক্তভোগীরা ৯৯৯ ফোন করেও কোনো প্রতিকার পাননি।
গত বছরের ২২ অক্টোবর দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে ফতুল্লার বিসিক শাসনগাঁওয়ের দেওয়ান বাড়ি এলাকার মো. ইমরান দেওয়ান এই অভিযোগ করেন। মো. ইমরান দেওয়ান অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাতের বেলা আমার নিজ বাড়িতে ১ কোটি টাকা চাঁদা চাইতে এসেছিলো কিছু চিহ্নিত চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী। যদি চাঁদা না দেই তাহলে তারা ফতুল্লার বক্তাবলী ইউনিয়নের চর রাজাপুর এরাকায় আমার ১৭ শতাংশ সম্পত্তির উপর ফ্যাক্টরি দখল নেবে ও আমার প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এ ঘটনায় থানায় আমি অভিযোগ দায়ের করি। সন্ত্রাসীরা হলো শাহীন, হামিদ প্রধান, নাসির, পিজ্জা শামীমসহ আরও অজ্ঞাত ২০-২৫ জন। কিন্তু এই অভিযোগ করার পর পুলিশ কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় সন্ত্রাসীরা গত ১৯ অক্টোবর বিকেলে নাম উল্লেখিত অভিযুক্তরা দেশীয় অস্ত্রে শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অজ্ঞাতনামা ৩০-৩৫ জন আমার ফ্যাক্টরির ভাড়াটিয়াদের মারধর করে বের করে দেয়। যে বাহিনীর মূল নেতৃত্বে ছিলেন পিজা শামীম। সেই সাথে জোরপূর্বক ফ্যাক্টরির মেইন গেইটের সামনে ইট ও সিমেন্ট দিয়ে পাকা দেয়াল নির্মাণ করে। আমার ফ্যাক্টরির প্রায় ৩৫-৪০ লাখ টাকা মূল্যের ঢেউটিন ও প্রোফাইল টিন এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের যেন প্রমাণ না থাকে সেজন্য সিসি ক্যামেরা ডিভিআর মেশিন ভেঙে ফেলে। জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে এক সময়ে হোন্ডা বাহিনীর নেতৃত্ব দেন আকতার নূর, লিমন, নাসির, আমির, বারিশ সহ কয়েকজনকে সেই নেতৃত্বে দেখা গেছে। তবে এবার সেই বাহিনীর নেতৃত্বে ছিল আলী হায়দার শামীম ওরফে পিজা শামীম। তিনি এখন নতুন গডফাদার হিসেবে নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করছেন এবং তা দেখিয়েছেন । প্রতিদিন তার নেতৃত্বে শহরের বিভিন্ন স্থানে হানা দেওয়া হচ্ছে। তার গাড়িতে চড়ে বিভিন্ন জনকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও আছে। তার বাড়িতে নিয়মিত লোকজন যাচ্ছে নানা ধরনের বিচার শালিস নিয়ে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তিনি এক পক্ষের হয়ে কাজ করে দিচ্ছেন। দিকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান একের পর এক বিভিন্ন সভা সমাবেশে সন্ত্রাসী হোন্ডা বাহিনীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে যাচ্ছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসকল হুঁশিয়ারির কোনোটাই যেন কাজে আসছে না। তিনি পরপর কয়েকটি সভায় হাম্মাজান, খান সাহেব ও সবশেষ মাস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তারপরেও একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটেই চলেছে। গত বছরের ১৬ মার্চ দুপুরে সাড়ে ১২টায় বীর মুক্তিযোদ্ধ নাসিম ওসমান সেতুর পূর্ব দিকে শীতলক্ষ্যার তীরে বন্দর উপজেলার ফরাজিকান্দা বাজারের পাশে হোন্ডা বাহিনীর তাণ্ডব ঘটে।
এর বর্ণনা দিয়ে মনিরুল হক পারভেজ জানিয়েছিলেন, আমাদের জমিতে এসে সাইনবোর্ড গেঁথে দিয়ে যায়। কে বা কারা এটা উঠিয়ে দেয়। পরে ১৪ মার্চ এসে আমাদের বাড়িতে ৩০-৪০টি মোটরসাইকেলে করে লোকজন এসে হুমকি দেয়। পরে ১৬ মার্চ আমাদের জমি দখল করার জন্য শতাধিক লোকজন এসেছিল। তাদের অনেকেই এসেছিল মোটরসাইকেলে করে। কিছু বুঝে উঠার আগেই ফিল্মী স্টাইলে আমাদের ওপর গুলি ছুড়তে থাকে। এতে আমার পায়ে গুলি লাগে। ওই বাহিনীর নেতৃত্বে ছিল পিজা শামীম। দখলের এই চেষ্টায় নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনিই। এ ঘটনার কয়েকদিন পরই পারভেজ মারা যান। পিজা শামীম ও আক্তার নূরের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী এলাকাবাসী।