চলতি বছরের ৩০ ই জুন জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের জিসান (২১) নামে যুবককে হত্যা করা হয়।
গত ৩১ জুন এ ঘটনায় জিসানের বাবা আলমগীর মোল্লা বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় নামীয় ২জন ও অজ্ঞাত ৩/৪ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় আলমগীর হোসেন উল্লেখ্য করেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে তার ছেলে জিসানকে হত্যা করা হয়। গত ৫ ইং আগষ্ট সরকার পতনের পর সরকারি বিভিন্ন আর্থিক সুযোগ সুবিধা পেতে ও স্থানীয় কয়েকজনের কাছে ২০ লাখ টাকা দাবি করেন বলেও মামলার আসামীরা অভিযোগ করেন। আলমগীর মোল্লা দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় গত ৩ সেপ্টেম্বর ৩০ জনকে আসামী করে আদালতে জিসানের বাবা আলমগীর মোল্লা বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করেন।
৩১ জুলাই থানায় দায়ের করা মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, জিসান একটি বেসরকারি কলেজের ডিগ্রী দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। কলেজ ১০/১২ দিন বন্ধ থাকার কারণে গত ৩০ জুলাই বাড়ির পাশে মিঠাব শিকদার বাড়ির সামনে জিসান ও তার বন্ধু অংকন, রাব্বী, রামীম, নাফিস, জহিরুল মিলে আড্ডা দিচ্ছিল। এসময় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে নাইম (২৪) ও তার বাবা কামাল হোসেন (৫২) অজ্ঞাত ৩/৪ জন মিলে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জিসানকে ছুড়িকাঘাত করে গুরুতর জখম করে। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। পরে এ ঘটনায় জিসানের বাবা আলমগীর বাদী রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এদিকে, আদালতে দায়ের করা মামলার আসামীরা জানান, ৫ ই আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে বৈষমী বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের পরিবারদের বিভিন্ন প্রকার আর্থিক সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। পরে আমিরুল ইসলাম সনজিব, সাগর, তাইজুল ইসলাম, আবু দাউদ মোল্লা, নজরুল, হাবিবুর রহমান খান, হাবিব মোল্লা, রাকিব, মাঞ্জারুল আলম টুটুল, রাকিব, মিঠু মোল্লা, শিপন মোল্লা, লিমন ভুইয়া, সায়মন, খাইরুল মোল্লা, রোমানের কাছ থেকে ২০ লাখ দাবি করেন নয়তো তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার হুমকি প্রদান করে। দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় জমি বিরোধের জেরে হত্যাকান্ডকে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে মৃত্যুর ঘটনা উল্লেখ্য করে গত ৩ সেপ্টেম্বর জিসানের বাবা আলমগীর মোল্লা বাদী হয়ে আমিরুল ইসলাম সনজিবসহ তাদের ৩০ জনকে আসামী করে নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলা দায়ের করেন। পরে জিসানের পরিবারের পক্ষ থেকে জিসানের হত্যাকান্ডকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতের লিষ্টে অন্তর্ভূক্তি করার আবেদন জানানো হয়। পরে আদালতে করা মামলার ১৭ নাম্বার আসামী তাইজুল ইসলাম বাদী হয়ে জিসানের হত্যাকান্ডের ঘটনা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী সদস্য অন্তর্ভূক্তি না করার আবেদন করেন। এদিকে, মামলার আসামীদের দাবি, দাবিকৃত চাঁদা না দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে জমি সংক্রান্ত বিরোধের হত্যাকান্ডের মামলাকে বষম্য বিরোধ আন্দোলনকারী বানিয়ে আদালতে আরেকটি বানোয়াট ও হয়রানীমূলক মামলা দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জিসানের বাবা আলমগীর মোল্লা বলেন, গত ৩১ জুলাই আমি রূপগঞ্জ থানায় যে মামলাটি করেছিলাম। আমাকে চাপের মুখে হত্যাকান্ডের কারণ জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের লিখতে বলা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে আমার ছেলে জিসান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ফেরার পথে তাকে হত্যা করা হয়। আমি কারো কাছে মামলার দেওয়ার নাম করে টাকা চাইনি।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।