ষ্টাফ রিপোর্টার:
শামীম ওসমান ১৯৯৬ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচন হন। ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ৫ বছর ব্যাপক দূর্নীতি করায় ২০০১ সালে রাতের আধারে বোরকা পড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন। পরে ২০১৪ সালে ভোটবিহীন নির্বাচনে ২য়বারের মত এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে নির্বাচনের পুর্বে অথ্যাৎ মাত্র ৫ বছরে নাকি তিনি তার নির্বাচনী এলাকাতে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা উন্নয়ন করেছেন এমনটাই নির্বাচন পুর্বক সভাগুলোতে তিনি তার স্ত্রী এমনটি চেলারাও বলে বেড়ান। ২০১৮ সাল দিবারাত্রির নির্বাচনে ব্যাপক ভোটচুরির মাধ্যমে আবারও নির্বাচিত হন এমপি হিসেবে। তিনি সর্বমোট প্রায় ১৫ বছর ছিলেন নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য। বিগত ১৫ বছওে তিনি তার নির্বাচনী আসনে কি পরিমানে উন্নয়ন করেছেন তা নারায়ণগঞ্জের সকল পেশাজীবি মানুষের কাছে জানা রয়েছে। তবে তিনি উন্নয়নের চেয়ে চুরি-চামারিতে যে পাকা খেলোয়ার ছিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। বিভিন্ন সময়ে উন্নয়নের নামে আনা টাকাগুলো যে তিনি যতœসহকাওে বিদেশ পাচার করেছেন এ চিরন্তন সত্য। দীর্ঘ ১৫ বছরের একজন এমপির নির্বাচনী এলাকাতে এখনও মানুষতে পানিতে ডুবে থাকতে এবং ভাঙ্গাচুরা রাস্তায় যাতায়াত করতে অনেত সময় ঐ গাড়ীসহ উল্টিয়ে আহতের হয়ে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে হয় এ যেন অন্যরকম এক উন্নয়ন। তিনি ১৫ বছরে এমন উন্নয়ন করেছেন যা তার নির্বাচনী এলাকার ভোটাররা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।
ব্যাপক তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়,ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ ৪ আসন। কিন্তু সিদ্ধিরগঞ্জের প্রতিটি পাড়া-মহল্লা কিন্তু এনসিসি অধীনে পড়ায় এখানে কোন উন্নয়ন করতে হয়নি শামীম ওসমানের। কুতুবপুর ইউনিয়ন,এনায়েতনগর ,ফতুল্লা.কাশিপুর ও বক্তাবলী ইউনিয়ন পড়েছে শামীম ওসমানের নির্বাচনীয় আসনে। সিদ্ধিরগঞ্জ ছাড়া মাত্র এ ৫টি ইউনিয়নের জন্য শামীম ওসমান যে পরিমান টাকা এনেছিলেন উন্নয়নের জন্য তার শতকরা ২৫ ভাগ উন্নয়ন হয়েছে বাকী ৭৫ ভাগ গিয়েছে তার স্ত্রী ও সন্তানের একাউন্টে। তার সময়ে ডিএনডি উন্নয়নের প্রকল্পের জন্য দুইধাপে ১৩শত কোটি দেয়া হয়েছিলো ডিএনডি প্রকল্পের পানি নিস্কাসনের জন্য। অথচ এখানে কি পরিমান উন্নয়ন হয়েছে তা বলাবাহুল্য হলেও এ প্রকল্প থেকে শামীম ওসমান ১০ ভাগ অথ্যাৎ ১৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এটা সত্য। যা তার ( নিকটাত্মীয়ের বক্তব্য)। অথচ সেই ডিএনডিবাসী আজও রয়েছেন কোমড় পর্যন্ত পানির নিচে। আবার ২০২৩ সালে তিনি ফতুল্লায় একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন যে, ৫টি ইউনিয়নের ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য ১৭৫ কোটি টাকা বরাদ্ধ এনেছেন। আজো সেই টাকার কোন উন্নয়নের ছোয়া কোন ইউপিতে পড়েছে কিনা তাও অজানা। পঞ্চবটী-মুন্সিগঞ্জের দ্বিতল সড়ক নির্মানের যে প্রকল্প চলছে সেখান থেকেও নাকি ১২০ কোটি টাকা পার্সেন্টিজ পেয়েছেন ১০ ভাগ হারে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডের উন্নয়নকল্প থেকেও তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। যদি লিংকরোডের উন্নয়নটি সড়ক ও জনপথের অধীনে থাকার ফলে এটা সবাই দেখছেন। কিন্তু তার নির্বাচনী আসনের ৫টি ইউনিয়নের দৃশ্যগুলো যেন অনেকটাই ভাঙ্গাচুরা।
সরেজমিনে ফতুল্লা-কুতুবপুর-এনায়েতনগর-কাশিপুর ও বক্তাবলীর অনেক এলাকা ঘুরে দেখা যায় শামীম ওসমানের উন্নয়ন নামক অভিসাপগুলো। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির ফলে কুতুবপুর-ফতুল্লা ও কাশিপুর ইউনিয়নের অনেক রাস্তাঘাট ও বসতবাড়িগুলো কোথাও হাটু আবার কোথাও কোমড় পানি নিচে অবস্থান করছে। ভাংগাচুরা রাস্তাগুলোর উপর দিয়ে এলাকাবাসীর চলাচল যেন অনেকটা মৃত্যুর ফাঁদে রুপ নিয়েছেন। পচা-র্দুগন্ধযুক্ত পানি মাড়িয়ে চলাচলে প্রতিটি পরিবারেই চর্মরোগসহ নানা প্রকার পানি বাহিত রোগের সম্মুখীন হচ্ছেন বাসিন্দারা। আবার ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ এর পুরোনো সড়কের পঞ্চবটী বনবিভাগ হতে পঞ্চবটী মোড় পর্যন্ত রোডটি যেন অকাল মৃত্যুর আরেকটি যন্ত্রে রুপান্তরিত হয়েছে। ফতুল্লার পোষ্টঅফিস থেকে শিবু মার্কেট পর্যন্ত রোডটিও যেন আরেক মৃত্যুফাঁদে পরিনত হয়েছে। পঞ্চবটী মেথরখোলা থেকে বক্তাবলীর সামসুলের মোড় পর্যন্ত হাটু পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় ভাঙ্গাচুরা সড়কে গাড়ির চাকাগুলো গর্তে পড়ে সাধারন মানুষ বিভিন্নভাবে আঘাত পাচ্ছে পাশাপাশি চলাচলকারী গাড়িগুলোরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ সকল এলাকার অনেক বাসিন্দা বলেন, মুলত শামীম ওসমানের নামকাওয়াস্তে উন্নয়নগুলো করতেন তার খালাতো ভাই,ছেলে অয়ন ওসমানের দুই গার্ডম্যান জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আশরাফুল ঈসমাইল রাফেল,মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ। বিভিন্ন ইউপিতে যে পরিমান টাকা উন্নয়নের জন্য বরাদ্ধ হতো তার অন্তত ৬০ ভাগ টাকা আত্মসাৎ করে নামমাত্র উন্নয়ন করতো তারা। যার ফলে অল্প সময়ের মধ্যে সেই উন্নয়নে ফাটল দেখা দিতো আবার কোথাও কোথাও ভেঙ্গে পড়তো। কারন তারা কাজেরস্থানে কখনও তদারকি করতে আসতেন না। যার ফলে নামকাওয়াস্তের উন্নয়নে আজ আমরা অবহেলিত।
তারা আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নগুলো দেখুন কতইনা নিখুতমানের। আর আমাদের এমপি সাবের উন্নয়নগুলো দেখুন কতটা নিন্মমানের যা মুখে বলার মত নয়। আসলে শামীম ওসমান ছিলেন টাকাপ্রেমী। তিনি উন্নয়নের নামে সরকারের কাছ থেকে টাকা এনে নিজের এবং পরিবারের আখের ঘুচিয়েছেন। ফলে দুবাই-আমেরিকাসহ কয়েকটি দেশে বাড়ি করেছেন পাশাপাশি বিলাশবহুল প্রমোদতরীও তিনি তৈরী করেছেন তার নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের টাকা আত্মসাৎ করে। অনেকে আক্ষেপ করে বলেন, “শামীম ওসমানের উন্নয়ন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে জনগন”। যদি তিনি প্রকৃত উন্নয়নই করতেন তাহলে আমাদেরকে এখনও পর্যন্ত এত ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হতোনা।