ষ্টাফ রির্পোটার:
টানা সাড়ে ১৫ বছর কর্তৃত্ববাদী হাসিনা সরকারের দমনপীড়নে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি বিএনপি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও দলটির নেতাকর্মীর ফাঁড়া কাটছে না। শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারানোয় বিএনপি নেতাকর্মীর মনে স্বস্তি ফিরলেও নাসিক ৬নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতাকর্মীদের পিছু ছাড়ছে না মামলা আতঙ্ক।
স্থানীয়রা বলছেন, বিএনপির নেতাদের মধ্যে কোন্দল ও চেইন অব কমান্ড না থাকায় কিছু সুবিধাভোগীদের কারণে এ ধরনের বিশৃঙ্খলা ঘটছে। আর এর দায়স্বরূপ অহেতুক মামলায় জড়িয়ে বিএনপি নেতাদের ঘায়েল করা হচ্ছে। দলের অনেকেই বলছেন শামীম ওসমানের মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে আবারো। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সবচেয়ে আলোচিত ওয়ার্ড ৬নং। ইপিজেড সহ একাধিক সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অবস্থিত হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটের রাজনীতিতে এ ওয়ার্ড ব্যাপক গুরুত্ব বহন করে। গেল ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গাঁ ঢাকা দেয় এ ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কর্তৃক হামলা মামলায় নির্যাতিত বিএনপির নেতাকর্মীরা চলে আসেন ফ্রন্টলাইনে। এ ওয়ার্ডে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন পন্থী বিএনপি নেতাকর্মীর তেমন দেখা না মিললেও রাজপথে ব্যাপকভাবে সরব রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ পন্থী বিএনপি নেতাকর্মীরা।
সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপির প্রতিটি মিছিল মিটিং ও সমাবেশে হাজার হাজার কর্মীর ঢল নামে ৬নং ওয়ার্ডের মামুন মাহমুদ পন্থী বিএনপি নেতাকর্মীদের। এসব মিছিল মিটিং ও সমাবেশে ৬নং ওয়ার্ড থেকে নেতৃত্ব দেয়া বিএনপির প্রথম সারির নেতা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ৬নং ওয়ার্ডের বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত কাদির মেম্বারের ছেলে ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক শাহ আলম মানিক। ইতোমধ্যে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তাঁকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করতে আওয়ামী লীগ আমলে মামলা হামলায় নির্যাতিত বিএনপির ত্যাগী এ নেতাকে ঘায়েল করতে শুরু করেছে নানাবিধ ষড়ন্ত্র। দলবাজ পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর গুলি এবং নির্যাতনে গণহত্যার বিরুদ্ধে সারাদেশে করা মামলায় বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে আসামি করে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েল করতে মামলাকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করছে। আবার নিজ নিজ এলাকায় আধিপত্য জারি রাখতে কৌশলে ঠুকে দেওয়া হচ্ছে মামলা। কিছু মামলায় নিরীহ ও সাধারণ মানুষের নামও ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সিদ্ধিরগঞ্জে শাহ আলম মানিকসহ নাসিক ৬নং ওয়ার্ডে বিএনপির রাজনীতিকে দুর্বল করতে আসামির তালিকায় ওপরে শেখ হাসিনা, শামীম ওসমান সহ ওই দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নাম রেখে সুকৌশলে বিএনপি নেতাকর্মীর নাম জুড়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এরকম কয়েকটি মামলার খসড়া তালিকা ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিএনপি নেতা শাহ আলম মানিক সহ যারা বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলেন, সক্রিয় রাজনীতিতে আছেন এমন নেতার নাম দেখে বিস্মিত দলটির নেতাকর্মীরা।
সম্প্রতি সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় জড়ানোর পায়তারা করছে একটি কুচক্রী মহল। জাতীয়তাবাদী দলের নেতা কর্মীদের এবং দলীয় ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য প্রতিনিয়ত তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সিদ্ধিরগঞ্জের বিএনপি নেতারা মনে করছেন, এ রকম ঘটনা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। পুরো মামলা প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করতে এ কান্ড ঘটানো হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগেরও প্রমাণ মিলছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিএনপির কতিপয় নেতা পলাতক আওয়ামী লীগের স্থানীয় বিত্তশালী নেতার সঙ্গে যোগসাজশে তাদের নাম মামলা থেকে বাদ দিচ্ছেন। টাকার বিনিময়ে তাদের অপকর্ম দেওয়া হচ্ছে ছাইচাপা। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিএনপির হাইব্রিড কতিপয় অসাধু নেতারা বাদীকে নানাভাবে প্রভাবিত করে পছন্দমতো মামলায় আসামি হিসেবে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটলেও তাদের প্রেতাত্মারা এখনও রয়ে গেছে। তারা বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করছে। তবে এসব করে লাভ হবে না। পাপের শাস্তি পেতেই হবে। যারা শাহ আলম মানিককে নিয়ে কথা বলছে তারা কয়দিন ধরে বিএনপি করে? আর শাহ আলম মানিক কয়দিন ধরে বিএনপি করে? তাদের নামে কয়টা রাজনৈতিক মামলা আর শাহ আলম মানিকের নামে কয়টা রাজনৈতিক মামলা আছে সেটা দেখার দরকার। শুধুমাত্র রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্যই মানিককে নিয়ে একটি কুচক্রী মহল ষড়যন্ত্রের পায়তারা করছে। তারা এসব করে কখনই সফল হবে না।
বিএনপি নেতা শাহ আলম মানিক বলেন, আমার ইপিজেডে একটি প্রতিষ্ঠানে ব্যবসা আছে। আমি বৈধ উপায়ে সেই ব্যবসা করছি। হয়তো আমার কারণে তাঁদের একটি পক্ষের ব্যবসায় কোনো প্রভাব পড়ছে। অথবা আমি মামুন মাহমুদের সাথে অনেকদিন ধরেই রাজনীতি করি। ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীরা আমাদের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে এটাও তাদের চক্ষুশূলের কারণ হতে পারে। তিনি বলেন, আমার রাজনীতি শুরু হয়েছে ছাত্রদলের মধ্য দিয়ে। আমি দীর্ঘদিন ছাত্রদলের সভাপতি ছিলাম যুবদলের সভাপতি ছিলাম। অধ্যাপক মামুন মাহমুদ যখন থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক তখন আমি যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলাম। থানায় মূলদলের কমিটিতে ছিলাম জেলায় মূল দলের কমিটিতে ছিলাম।