স্টাফ রিপোর্টার : দীর্ঘ বছর স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় একেবারে ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ছাত্র-জনতার গনঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ পতনের পর থেকেই দল গুছাতে শুরু করে দিয়েছে। ধীরে ধীরে একে দিকে চাঙ্গা হচ্ছে বিএনপি অন্যদিকে ছড়াচ্ছে বিতর্ক নিজেদের মধ্যে ঘরোয়া বিবাদে। যেমনটা সোনারগাঁ বিএনপিও।
নিষ্ক্রিয় ও ভঙ্গুর দলকে গুছানো নিয়ে যেমন কেন্দ্র উঠে পড়ে লেগেছে। আবার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় দীর্ঘ সময়ে দলের পাশে না থেকে ইঁদুরের থলি থেকে বের হয়ে আসছে অনেকেই আবার দলের দুঃসময়ে পাশে থেকেও বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্যও অনেকেই বিতর্কিত হয়ে আছে।
প্রয়োজনে ও দলের দুঃসময়ে অনেক প্রবীণ নেতাকর্মীদের পাশে না পেয়েও দুষচ্ছেন অনেকেই।আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সোনারগাঁয়ে অনেক প্রবীণ নেতাদের দলের কর্মীদের দুঃসময়ে পাশে থাকতে দেখা যায়নি এমনকি তারা নিজেরাই ইঁদুরের গর্তে অবস্থান করেছে বলেও অনেকে জানিয়েছে।আবার কেউ কেউ অসুস্থ্য বলে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন দলীয় কর্মসূচি ও নেতাকর্মীদের সহযোগিতা থেকে। সিনিয়রদের সরিয়ে যাওয়াতে আবার অনেকে নেতৃত্ব দিয়ে আওয়ামী সরকারের আমলে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে সরব ভূমিকা পালন করেছেন। খেয়েছেন মামলা,হয়েছেন হামলারও শিকারও তবুও মাঠ পর্যায় নেতাকর্মীদের দুঃসময়ে পাশে থেকে যেন অনেকটা বিশ্বাস ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
বিগত ১৬/১৭ বছর স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক হামলা, মামলা ও খুন,গুমের শিকার হয়েও অনেক দলীয় কর্মীরা নিজ পরিবার নিয়ে পলায়ন ছিলেন আবার কেউ পরিবার থেকেও বিচ্ছিন্ন ছিলেন, কেউবা কারাগারে জীবন অতিবাহিত করেছে এক ফোঁটা আলোর মুখ দেখতে। দায়িত্বশীল নেতাদের অকার্যকর ভূমিকা, কর্মীর পাশে না দাঁড়ানো এবং সমন্বয়হীনতায় জাতীয় নির্বাচনের পর দলে বড় ধরনের তালগোল পাকিয়ে ধাক্কা খায়। পাশাপাশি মামলা-হামলা মোকাবিলা করতে করতে একরকম ‘কুপোকাত’ দলটির কর্মীরা। বর্তমান দলটির ঘরোয়া বিবাদ আরও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে গেছে। অভিযোগ আছে, এ দলাদলিতে আশকারা দিচ্ছেন খোদ কেন্দ্রীয় নেতারাই।
এদিকে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপি মানে আলোচিত বিএনপির দুই মুখ অধ্যাপক রেজাউল করিম ও আজহারুল ইসলাম মান্নান। হয়েছেন বিভক্ত দুইজনে দুই গ্রুপে। যার ফল স্বরূপ বর্তমান সোনারগাঁয়ে বিএনপি দুইটি গ্রুপে। আবার দুইজনে দল গুছানো নিয়ে ব্যাপকভাবে তোড়জোড় চালাচ্ছেন। কেউ কেউ নতুন- পুরাতন বিএনপি নেতাদের টানছেন আবার কেউ আওয়ামী লীগের নেতাদের মোটা অঙ্গের অর্থ এর বিনিময়ে দলে ভিড়াচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
অধ্যাপক রেজাউল করিম বিএনপির একজন প্রবীণ ও ঝানু নেতা বললেও চলে। তিনবারের সফল এমপি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সফল সভাপতি তিনি। অন্যদিকে আজহারুল ইসলাম মান্নানও দুঃসময়ের বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তিনি সোনারগাঁ উপজেলার দুইবারের চেয়ারম্যান,কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি। দুইজনই বিএনপির চৌকোষ নেতা। তবে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ছাত্র-জনতার গনঅভ্যুত্থানের পর দুইজনই নেতৃত্ব নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সোনারগাঁয়ে।
এতদিন যাকে অসুস্থ্য বাহানায় মাঠে ঘাটে নেতাকর্মীদের পাশে পাওয়া যায়নি এমনকি দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি সেই রেজাউল করিম ছাত্র-জনতার গনঅভ্যুত্থানের পর হঠাৎ করে সরব হয়ে উঠেছে। এনিয়েও শঙ্কিত অনেক প্রবীণ বিএনপির নেতারা। তাদের মতে, সাধারণত সাংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেই রেজাউল করিমকে দেখা যায় মাঠে। তবে এক সময়ের দাপটে ও ক্ষমতাধর বিএনপি নেতা ছিলেন রেজাউল করিম।বয়সের ছাপে ও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিএনপি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেন। বহু বছরের অভিজ্ঞ এ নেতার বিএনপির দুঃসময়ে নিজেকে বয়সের ছাপে ও অসুস্থ্যতায় গুছিয়ে নিতে দেখায় অনেকে হতাশ হোন। তার সরিয়ে যাওয়াতে সোনারগাঁ সহ জেলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের পোহাতে হয়েছে অনেক বিপদে। যার দাপটে অনেক আওয়ামী লীগ নেতাও ভয় পেতো সে দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের পাশে না থাকায় অনেক মামলা ও হামলার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
তবে ১/১১ সময় বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে মাইনাস ফর্মুলার সংস্কারবাদীদের অন্যতম নেতা ছিলেন এই অধ্যাপক রেজাউল করিম, যিনি গত ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা আসার পর রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচিতরই মাঠেই ছিলেন না তিনি। শুধু মাত্র নির্বাচন আসলেই তিনি গর্ত থেকে উঁকি ঝুঁকি মারেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। তিনি যে আবার দল বড় ধরনের বিপদের সম্মুখীন হলে নেতাকর্মীদের ফেলে শয্যাশায়ী হবার অভিনয় করবে না তারও নেই নিশ্চয়তা। তাই তাকে নিয়েও স্বয়ং প্রবীণ বিএনপি নেতা থেকে ধরে নতুনেও শঙ্কিত।
এদিকে সোনারগাঁ দলের দুঃসময়ে সব সময় পাশে পেয়েছেন আজহারুল ইসলাম মান্নান।তার নামে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ থাকলেও জনপ্রিয়তায় সব সময় এগিয়ে থাকেন তিনি। অনেক নেতাদের মতে, ১/১১ এর দুঃসময় থেকে ধরে সোনারগাঁ বিএনপিকে মাঠে থেকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন তিনি। খেয়েছেন অনেক মামলা ও জেলও খেটেছেন। তবুও তার নামে অভাব নেই অভিযোগ এর। অভিযোগের যেন পাহাড় জমা আছে আজহারুল ইসলাম মান্নানের বিরুদ্ধে। আওয়ামী সরকারের আমলে বিএনপির দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের পাশে থাকলেও বর্তমান আওয়ামী লীগের লোকদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে দলে ভিড়াচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠছে য়ার বিরুদ্ধে। এছাডাও রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের লোকদের গাঁ ঘেষার অভিযোগ আজহারুল ইসলাম মান্নানের বিরুদ্ধে। একই ভাবে তার ছেলে যুবদল নেতা সজীবের বিরুদ্ধে রয়েছে চাঁদাবাজি পাহাড় সমান অভিযোগ।এই বাপ-বেটার চাঁদাবাজিতেও সোনারগাঁ বিএনপির অনেক নেতাই শঙ্কিত পরবর্তী দলের অবস্থা নিয়ে।
ইতিমধ্যে দুই নেতার বিরুদ্ধেও উঠেছে অভিযোগ তাদের অনুসারীদের দিয়ে দলের নেতাকর্মীদের নামে পাল্টাপাল্টি মামলার। আবার গত ১৯ আগস্ট রাতে সোনারগাঁয়ে এই দুই দলের অনুসারীদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তিনটি বাড়ি, দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। হামলায় নারীসহ ১২জন আহত ও হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
চলমান দেশের এই অবস্থায় বিএনপির এধরনের কর্মকান্ডকে ভালো দৃষ্টিতেও দেখচ্ছে না রাজনীতির বিশেষজ্ঞরা।তাদের মধ্যে দল গুছানো বাদ দিয়ে এভাবেই কাঁদা ছোড়াছুঁড়ি করতে থাকলে অধুর ভবিষ্যৎতে বিএনপির জন্য মোটেও ভালো কিছু প্রত্যাশা করা যাবে না।এতে জনগনের থেকে আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষোভ ও জনপ্রিয়তা হারিয়েছে এই সুযোগে যদি বিএনপি কাজ করতে না পারে তাহলে যেকোন সময় বিএনপির অধঃপতন ঘটতে পারে বলেও মনে করেন তারা।তাই সময় থাকতে মানুষের কাছ থেকে বিশ্বাস ও আস্থা ফিরে পেতে কাঁদা ছোড়াছুঁড়ি বাদ দিয়ে এক সাথে মিলে কাজ করা উচিত।এতে দলের জন্যই মঙ্গল।