জাগো নারায়ণগঞ্জ
নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও পৌর কার্যালয়ে বসতি গড়ে তুলেছেন পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী প্রকৌশলী ও কনজার্ভেন্সি ইন্সপেক্টরসহ পৌর চার কর্মকর্তা।
একই সাথে তারা পৌর কার্যালয়ের বিদ্যুত, গ্যাস ও পানিসহ সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছেন। এমনকি নিজেদের রান্না-বান্নার কাজ সেরে নিচ্ছেন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর মাধ্যমে।
উল্লেখিত পদের কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে পৌরসভায় বসবাস করলেও মে মাস থেকে প্রতি কক্ষের জন্য এক হাজার টাকা করে ভাড়াও পরিশোধ করছেন তারা। তবে পৌর প্রশাসক ও সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ এর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি অবগত নন বলে জানান।
সরেজমিনে সোনারগাঁও পৌরসভা কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী তানভির আহমেদ তার কর্মজীবনের অর্ধযোগের পুরোটা সময় কার্যালয়ে বসবাস করে আসছেন। তার সাথে পাল্লা দিয়ে পৌরসভার কনজার্ভেন্সি ইন্সপেক্টর মোঃ সেলিম ৩ বছর, হিসাব রক্ষক গোলাম হাসনাইন ৬মাস ও পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মাশরেকুল আলম দেড় বছর ধরে কার্যালয়ে বসবাস করছেন। তাদের কর্মজীবনের পুরোটা সময় কার্যালয়ের চারটি কক্ষে বাসা বাড়ির ন্যায় বিদ্যুত, গ্যাস ও পানিসহ সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছেন। এমনকি পৌরসভার অর্থায়নে মাস্টাররুলে কাজ করা চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী রেখা আক্তারকে দিয়ে নিজেদের রান্না-বান্নার কাজও করে নিচ্ছেন।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে পৌর কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় উপস্থিত হলে রেখা আক্তারকে ওই চার কর্মকর্তার রান্নার কাজে ব্যাস্ত থাকতে দেখা যায়। এসময় তাকে জিজ্ঞেস করলে সাংবাদিকদের জানান, পৌরসভার স্যারদের জন্য আমি সবসময় রান্না করে আসছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার এক কর্মচারী জানান, সহকারী প্রকৌশলী তানভির আহমেদ পৌর কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় বসবাস করার সুবাধে তিনি তার মন-মর্জি মতো অফিস করেন। প্রায় সময়ই তিনি মধ্যাহ্ন ভোজ সেরে দুইটায় অফিসে করেন বলেও এ তিনি দাবী করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌরসভার এ কর্মকর্তা রাতে কার্যালয়ে অবস্থানকালে অফিস ষ্টাফদের বাহিরের লোকজনও তার কক্ষে আসা যাওয়া করেন। এমনকি তিনি কার্যালয়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগকৃত সাবেক এক নারী কর্মচারীর সাথে অশালীন আচরণ করার অভিযোগ রয়েছে। ভাড়া দিয়ে থাকার বিষয়টি জানতে হিসাব রক্ষক গোলাম হাসনাইনের সাথে কথা হয়।
তিনি জানান, গত মে মাস থেকে তারা পৌর প্রশাসকের লিখিত অনুমতি নিয়ে ১ হাজার টাকা ভাড়ার বিনিময়ে কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলার পৃথক কক্ষে বসবাস করছেন। এ মর্মে চারটি অনুমতি পত্র দেখান তিনি। তবে মে মাসের পূর্ববর্তী সময়ে বিনা ভাড়ায় থাকার বিষয়ে কোন সদোত্তর দিতে পারেননি। একই ভাবে পৌরসভার অর্থায়নে অস্থায়ী ভাবে নিয়োগকৃত এক নারী কর্মচারীকে দিয়ে রান্নার কাজ করার বিষয়টি স্বীকার করেন। আবার সুযোগ সুবিধা ভোগ করার তুলনায় ভাড়া বৃদ্ধি করা উচিত বলেও তিনি মনে করেন।
বিশেষ করে সহকারী প্রকৌশলী তানভির আহমেদ দীর্ঘ ৬ বছর ৭মাস কর্মজীবনে কার্যালয়ে অবৈধভাবে বসবাস ও স্বেচ্ছাচারিতায় ক্ষুদ্ধ পৌর কর্মচারীদের অনেকেই। তবে তারা এ ব্যাপারে কোন প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেনা বলে জানান।
তারা আরও অভিযোগ করেন, নামমাত্র ১ হাজার টাকায় বাসা ভাড়ার মধ্যে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ও রান্নার কাজ করিয়ে নেওয়া সম্পূর্ন অনৈতিক কাজ। এ বিষয়ে পৌর প্রশাসকের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
এ ব্যাপারে সহকারী প্রকৌশলী তানভির আহমেদ জানান, তিনি ভাড়া দিয়েই পৌরসভায় বসবাস করে আসছেন। বিস্তারিত জানতে পৌর প্রশাসকের সাথে যোগাযোগের কথা বলেন। এসময় তিনি তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে পৌরসভার প্রশাসক ও সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ এর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি অবগত নন বলে জানান।