জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার পৃথক দুই স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় গ্রুপের কমপক্ষে ১৩ জন আহত হয়েছে। এ সময় কয়েকটি বাড়িঘরে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
রোববার দিবাগত (৮ জুন) রাতে উপজেলার বারদী ইউনিয়নের চেঙ্গাকান্দি গ্রামে ও পরের দিন সোমবার সন্ধ্যায় বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের মামরকপুর গ্রামে পৃথক এ দুটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আব্দুল কাদির গ্রুপের মো. ফাহমিদ তুহিন ও তোফাজ্জল হোসেন গ্রুপের মো. রনি বাদী হয়ে মঙ্গলবার সকালে সোনারগাঁও থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করেন।
আহতদের মধ্যে গুরুতর ৬ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকিদের সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় সোনারগাঁও থানায় পৃথক তিনটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বারদী ইউনিয়নের চেঙ্গাকান্দী গ্রামের বাসিন্দা ও ৫নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনের সঙ্গে ছাত্রদল নেতা ইউনুস মিয়ার দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এ বিরোধের জের ধরে রোববার রাতে ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে জামাল হোসেন, কামাল হোসেন, জুয়েল রানা, মুসা মিয়া ও রূপ মিয়াসহ ১০–১২ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র দা, চাপাতি, ছোড়া, হকিস্টিক নিয়ে ছাত্রদল নেতা ইউনুসের বাড়িতে হামলা চালায়। হামলায় কমপক্ষে ৫ জন আহত হয়। হামলাকারীরা এ সময় ইউনূস মিয়ার চাচাতো ভাই মো. মঞ্জুর ভূঁইয়াকে কুপিয়ে আহত করে ও পায়ের রগ কেটে দেয়। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় আহতের চাচাতো ভাই ছাত্রদল নেতা মো. ইউনুস মিয়া বাদী হয়ে সোনারগাঁও থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
ছাত্রদল নেতা ইউনুস মিয়া জানান, পূর্ব শত্রুতা ও জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে তার বাড়িতে ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়েছে। এ সময় হামলাকারীরা তার চাচাতো ভাইকে কুপিয়ে আহত করেছে ও ডান পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। একপর্যায়ে হামলাকারীরা আমাদের বাড়িঘরে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে। হামলাকারীরা ঘরে থাকা স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা, টিভি, ফ্রিজসহ প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। এছাড়াও কুরবানির মাংসও লুট করে নিয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা মো. ইকবাল হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে ক্ষুদে বার্তা দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এদিকে উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের মামরকপুর গ্রামে আব্দুর কাদিরের সঙ্গে একই এলাকার তোফাজ্জল হোসেনের জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ চলে আসছিল। এ বিরোধের জের ধরে গত সোমবার সন্ধ্যায় উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে উভয় গ্রুপের লোকজন লোহার রড, চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল, এসএস পাইপসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে তোফাজ্জল হোসেন গ্রুপের খোরশেদ আলম, মোশারফ হোসেন, সমাজসেবক ও মো. সানাউল্লাহ বেপারী, জানে আলম, তোফাজ্জল হোসেন ও মোসা. কুহিনুর এবং আব্দুর কাদির গ্রুপের জুয়েল, নুরুল হক, হাজী সেলিম, সৈকত মোল্লা, মোসা. খুকি বেগম ও শারমিন মারাত্মকভাবে আহত হয়।
আহতদের মধ্যে তোফাজ্জল হোসেনের পক্ষের খোরশেদ আলম, মোশারফ হোসেন, মো. সানাউল্লাহ, জানে আলম, তোফাজ্জল হোসেনকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ সময় তোফাজ্জল হোসেন গ্রুপের বাড়িঘরে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
সোনারগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মফিজুর রহমান জানান, পৃথক দুটি স্থানে সংঘর্ষের ঘটনার সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় পৃথক তিনটি অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অভিযোগগুলো তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।