ক্যানসার এক ঘাতক রোগের নাম। মানবদেহের অনেক রকম ক্যানসারের মধ্যে ব্লাড ক্যানসার অন্যতম। এটি হেমাটোলজিক্যাল ক্যানসার নামেও পরিচিত। তবে বর্তমান সময় রক্তের ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন। এই রোগে আক্রান্ত হলেই অজানা মৃত্যুভয় গ্রাস করে বসে রোগীকে। যে কোনো বয়সেই হতে পারে ‘ব্লাড’ ক্যানসার। শিশুদের মধ্যে এই ক্যানসারের আশঙ্কা বেশি। এই রোগে আক্রান্ত হলে রক্তের মধ্যে থাকা উপাদানগুলোর অনিয়ন্ত্রিত গঠন এবং বিস্তার হতে থাকে।
ব্লাড ক্যানসারের আবার অনেক রকম প্রকারভেদ আছে, এগুলোকে লিউকেমিয়া, মাল্টিপল মায়েলোমা ও লিম্ফোমা বলা হয়ে থাকে। প্রতিটির রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য, যেগুলোর মাধ্যমে এগুলোকে আলাদা করা যায়। তাই রক্তের ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখা দরকার।
ব্লাড ক্যানসার বা লিউকেমিয়া কী?
লিউকেমিয়া সাধারণত শ্বেত রক্তকণিকার অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে হয়ে থাকে। শ্বেত রক্তকণিকা অস্থি মজ্জায় উৎপন্ন হয় এবং এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধকারী যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত। সাধারণত শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী এগুলো বৃদ্ধি পায় এবং সুশৃঙ্খলভাবে বিভক্ত হয়। কিন্তু লিউকেমিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের অস্থি মজ্জা অতিরিক্ত পরিমাণে শ্বেত রক্তকণিকা তৈরি করে, যা সঠিকভাবে কাজ করে না। লিউকেমিয়া প্রায়ই ৫৫ বছরের বেশি বয়সিদের মধ্যে দেখা দেয়, তবে এটি ১৫ বছরের কম বয়সি শিশুদেরও হতে পারে।
কী কী উপসর্গ দেখা যায়?
ক্রমাগত ক্লান্তি ও দুর্বলতা ব্লাড ক্যানসারের একটি সাধারণ লক্ষণ, যা শরীরের অস্বাভাবিক রক্তকণিকা উৎপাদনের প্রভাবকে প্রকাশ করে।
আকস্মিক ওজন হ্রাস
শরীরের স্বাভাবিক বিপাকীয় প্রক্রিয়া বজায়ের অক্ষমতার কারণে হঠাৎ করে ওজন অতিরিক্ত কমে যেতে পারে।
ঘন ঘন ইনফেকশন
দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্লাড ক্যানসারের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যার ফলে রোগী ঘন ঘন বিভিন্ন রকম ইনফেকশনে আক্রান্ত হতে পারে এবং চিকিৎসা করাও কঠিন হয়ে পড়ে।
ক্ষত ও রক্তপাত
ব্লাড ক্যানসার হলে রক্তকণিকা উৎপাদনে অস্বাভাবিকতার কারণে সহজে ঘা ও ছোটখাটো কাটা থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ দেখা দিতে পারে বা ঘন ঘন নাক দিয়ে রক্তপাত হতে পারে।
লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া
লিম্ফ নোড ফুলে বা বড় হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে ঘাড়, বগল বা কুঁচকিতে অবস্থিত লিম্ফ নোড ব্লাড ক্যানসারের উপস্থিতি নির্দেশ করতে পারে।
রাতে ঘাম হওয়া
পরিবেশগত কারণ ছাড়া রাতে অতিরিক্ত ঘাম রক্তের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।
হাড়ের ব্যথা
ব্লাড ক্যানসারের হাড়কেও প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে হাড়ে প্রচন্ড ব্যথা ও অস্বস্তি হতে পারে। এই ব্যথা প্রায়ই স্থায়ী হয় এবং সময়ের সাথে অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে।
নিঃশ্বাসের সমস্যা
অস্বাভাবিক রক্তকণিকা উৎপাদনের কারণে অক্সিজেন বহন ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
এছাড়াও রক্তস্বল্পতার জন্য দুর্বলতা, খাবারে অরুচি, পায়ে পানি জমা, দীর্ঘদিনের জ্বর বা ঘন ঘন জ্বর, দাঁতের গোড়া থেকে রক্তপাত, প্রস্রাব পায়খানার সাথে রক্তপাত, লিভার-প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গও দেখা দিতে পারে।
ব্লাড ক্যানসার কেন হয়?
বিজ্ঞানীরা লিউকেমিয়ার সঠিক কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেননি। তবে সাধারণত এটি বংশগত ও পরিবেশগত কারণগুলোর সংমিশ্রণ থেকে হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। যদিও এই মিউটেশনগুলোর সঠিক কারণ সবসময় স্পষ্ট নয়, তবে কিছু কারণ রয়েছে যা বিশেষ অবদান রাখতে পারে, যেমন-
জিনগত কারণ
জেনেটিক মিউটেশন ব্লাড ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যাল এক্সপোজার
রাসায়নিক কেমিক্যাল বা পেস্টিসাইডের সংস্পর্শে বেশিদিন থাকলে তা থেকে ক্যানসার হতে পারে।
পূর্বের ক্যানসার চিকিৎসা
অনেক সময় অন্যান্য ক্যানসারের জন্য নির্দিষ্ট ধরনের কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশন থেরাপি নেওয়া ব্যক্তিদের লিউকেমিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
কারা ঝুঁকিতে রয়েছেন?
বয়স
ব্লাড ক্যানসারের ঝুঁকি বয়সের সঙ্গে বৃদ্ধি পায়।
জেন্ডার
কিছু ব্লাড ক্যানসার, যেমন লিম্ফোমা পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
পারিবারিক ইতিহাস
পরিবারের কারো ব্লাড ক্যানসার থেকে থাকলে বাকি সদস্যদেরও ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে তা সম্পূর্ণই বংশগত কারণে। অনেকে একে ছোঁয়াচে রোগ মনে করেন যা সঠিক নয়।
ভাইরাল ইনফেকশন
নির্দিষ্ট ভাইরাসের সংক্রমণ, যেমন- অ্যাপস্টাইন বার ভাইরাস ব্লাড ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ইমিউন সিস্টেমের রোগ
যে রোগগুলো ইমিউন সিস্টেম দুর্বল করে, যেমন-এইডস বা অটোইমিউন ডিজঅর্ডারের ফলে ব্লাড ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।