ষ্টাফ রিপোর্টার:
নিষিদ্ধ হয়েছে আওয়ামীলীগের রাজনীতি। এর সাথে সাথে পরিসমাপ্তি ঘটলো দেশের পুরোনো এ রাজনৈতিক দলটি। পিলখানা হত্যাকান্ড, হেফাজতকান্ড,জুলাই-আগষ্টে ছাত্র-জনতার উপর নির্বিগেন হামলা চালিয়ে বিভিন্ন বয়সী মানুষকে নির্বিচারে হত্যা এবং বিগত ১৭ বছরে দেশের অর্থ বিদেশে পাচারের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভঙ্গুরসহ পরিবারতন্ত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন দূর্নীতি অভিযোগসহ আরও কতই না কি। ৫ আগষ্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। তার সাথে পালিয়ে যায় বিগত ১৭ বছরে দেশের অপরাধ জগতের হোতারা। সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জের চলছে অপরাধীদের গ্রেফতারের জন্য “অপারেশন ডেভিল হান্ট” কার্যক্রম চলাকালেও গ্রেফতার হয়নি বৃহত্তর পশ্চিম মাসদাইরসহ আশপাশ এলাকায় ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী দোসররা সেই অপরাধীরা দেশের বাহিরে থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের যে নির্দেশনা দিচ্ছেন তা শুনেই দেশের প্রত্যন্ত স্থানে নানাবিধ অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে। জেলার অন্যান্য থানাগুলোতে ডেভিল হান্টের কার্যক্রম চোখে পড়ার মত হলে ব্যতিক্রম শুধুমাত্র ফতুল্লা থানাতে। এখানে আইনের প্রতি নজর না দিয়ে নেতাদের আত্মীয়তার প্রতি নজর দেয়া হয়েছিলো বেশী। এখানে আওয়ামীলীগের ডেভিলগুলো বিএনপির নেতাকর্মীদের আত্মীয়-স্বজন হওয়ার সুবাদে সাধারন ক্ষমা পেয়ে গোপনে তারা তৈরী হচ্ছে অন্তবর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জন্য এমনটাই মনে করছেন শান্তিকামী সাধারন মানুষ। আবার বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বিএনপির বিভিন্ন নেতাকর্মীরা আওয়ামী বিরোধী বক্তব্য দিয়ে নিজেদেরকে প্রতিবাদী হিসেবে জাহির করার অপচেষ্টায় রয়েছেন বলে জানান স্থানীয়রা।
একাধিক সুত্রে জানা যায় যে, অপারেশন ডেভিল হান্টের কার্যক্রম থেকে একেবারে মুক্ত ছিলো মাসদাইর ও আশপাশ এলাকার আওয়ামী ডেভিলরা। বিগত ১৭ বছরে গডফাদার শামীম ওসমান সহ তার সঙ্গীদের পাশে থেকে ভুমিদস্যুতা,ঝুট সেক্টর ও চোরাই তেলের ব্যবসায়ীরা এখনও নিরাপদে নির্বিগ্নে রয়েছেন তাদের স্বজনরা বিএনপি নেতা হওয়ার সুবাদে। এখন নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী ডেভিলদেরকে গ্রেফতারে প্রশাসনকে কতটুকু করবে কিংবা স্বজন দাবী করে ডেভিলদেরকে কতটুকু নিরাপদে রাখবে সেটাই দেখার বিষয় বলে অভিমত স্থানীয়দের।
তবে স্থানীয়দের দাবী, ফতুল্লা থানাধীন পশ্চিম মাসদাইর,বাজার বাজার ও এর আশপাশ এলাকা,ইসদাইর ও দেওভোগের প্রতিটি এলাকাতেই আওয়ামী ডেভিলরা অনেকেই আত্মীয় পরিচয়ে আবার অনেকে বিএনপির নেতাদেরকে মোটা অংকের টাকা লেনদেনের মাধ্যমে নিজেরা এলাকাতে বসবাসের পাশাপাশি পুর্বের ন্যায় বর্তমানেও ব্যবসা-বানিজ্যে চালিয়ে যাচ্ছেন।
এনায়েতনগর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লিটন যিনি ছিলেন সাংসদ শামীম ওসমানের আস্থাভাজন। বিগত সময়ে বীরদর্পে থাকলেও বর্তমানে যে নিরবতা পালন করছেন তা নয়। বরং নারায়ণগঞ্জের গেম মেকার উপাধীপ্রাপ্ত চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মোহাম্মদ আলীর সুবাদে তিনি বর্তমানে একেবারেই নিরাপদ রয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার উপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা কয়েকটি মামলায় হাবিবুর রহমান লিটনও আসামী হয়েছেন। শুধুমাত্র চাচার সুবাদে মামলা আসামী এবং আওয়ামী ডেভিল হওয়ার পরও তিনি স্বাধীনভাবে প্রকাশ্যে চলাচল করছেন এবং ফতুল্লার পঞ্চবটী-ধর্মগঞ্জ ও শিষমহল এলাকার অনেক কিছু নিয়ন্ত্রন করছেন আওয়ামী এ দোসর লিটন।
মতিউর রহমান মতি যিনি সাবেক সাংসদ ও গডফাদার শামীম ওসমানের আস্থাভাজন ভুমিদস্যু ছিলেন। এমপির কাছের লোক হওয়ার সুবাদে মাসদাইরসহ আশপাশ এলাকার নিরীহ মানুষের জমি দখল করতে জমির মালিককে ভুয়া অভিযোগে জেলে পালিয়ে জাল দলিলের মাধ্যমে উক্ত জমি দখল করে অন্যত্র বিক্রি করে এবং বিসিক,মাসদাইর চৌধুরী কমপ্লেক্স ও টাগারপাড় এলাকার বিভিন্ন গার্মেন্টস থেকে ঝুট নামিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে এখন তিনি শত কোটি টাকার মালিক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মাসদাইর কবরস্থান এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে হামলা চালিয়েও তিনি এখন প্রকাশ্যেই চলাচল করছেন। পাশাপাশি নিজ জমিতে বহুতল ভবনের নির্মান কাজও করছেন বাধাহীনভাবে। আওয়ামী এ ডেভিল অনেকটা নিরাপদে রয়েছেন ভাগিনা মশিউর রহমান রনির আর্শীবাদে। কারন রনি জেলা যুবদলের সদস্য সচিব।
রনজিত মন্ডল যিনি নারায়ণগঞ্জের অপরাধের শিরোমনি গডফাদার শামীম ওসমানের আর্শীবাদে জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টার ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক হিসেবে থেকে চোরাই তেল,ভুমিদস্যুতা ও ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রন করে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার উপর হামলার দায়ে ফতুল্লা মডেল থানায় দায়েরকৃত কয়েকটি মামলারও আসামী এ রনজিত মন্ডল। শুধুমাত্র সংখ্যালঘুর সাইনবোর্ডটি কাধে থাকার সুবাদে এবং স্থানীয় বিএনপির নেতাদের আশ্রয়ে সে এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যেই চলাচল করছেন। গত প্রায় তিন মাস আগে নাকি হিন্দু নেতাদেরদেরকে তার বাড়িতে ডেকে এনে একটি গোপন সভাও করেছেন। নেই সভাকে হিন্দু নেতৃবৃন্দ ছাড়াও সাবেক মেয়র আইভীর ছোটভাই আলী রেজা উজ্জল এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ইয়াসির আরাফাতের শশুর যুবলীগ নেতা বড় মিজান ও গাফফারও নাকি উপস্থিত ছিলেন এমন একটি গুঞ্জনও রয়েছে বাড়ৈভোগ এলাকা জুড়ে। রনজিত মন্ডলের অপর বন্ধু এনায়েতনগর ইউপির ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার জাকারিয়া জাকিরও শামীম ওসমানের আরেক ঘনিষ্টজন। যিনি বিগত সময়ে ভুমিদস্যুতা ও ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রনে নিয়ে প্রায় শত কোটি টাকার মালিক বনেছেন। যারা উভয়েই নাকি স্থানীয় যুবদলের এক নেতাকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে এলাকাতে বসবাস করছেন এমনটাই গুঞ্জন ছেয়ে পড়েছে এলাকা জুড়ে।
যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমান মিজান ওরফে বড় মিজান গাফফারগং। এরা সবাই শামীম ওসমানের ভুমিদস্যুতার আস্থাভাজন মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজামের বলয়ে থেকে বিসিকসহ মাসদাইর ও আশপাশ এলাকার ঝুট নিয়ন্ত্রক ছিলেন বলে জানান স্থানীয়রা। এ ঝুট নিয়ন্ত্রন নিয়েই নাকি সৈনিক লীগ নেতা মোকলেসুর রহমান মোকলেস হত্যা করে মিজান-গাফফারগং। এ নিয়ে হত্যা মামলা হলেও কয়েকদিন পর তা চুপসে পড়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন নস্যাৎ করতে বড় মিজানের নেতৃত্বে যুবলীগের ডেভিল সদস্যরা জুলাই-আগষ্টে মাসদাইর কবরস্থান এলাকায় দেশীয় অস্ত্র হাতে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার উপর হামলার ঘটনাও ঘটায় মিজান-গাফফারগং। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় কর্তৃক ঘোষিত চলমান অপারেশন ডেভিল হান্টের এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যেই পুর্বেও ন্যায় ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রন করছেন মিজান-গাফফারগং। পাশাপাশি গাফফার মাসদাইর কবরস্থান এলাকায় আবদুল মোতালিব আয়রন ষ্টোর নামক একটি ইট-বালুর দোকানেই প্রকাশ্যে বসে থাকেন নিয়মিত।
স্থানীয়দের দাবী,আওয়ামী দুঃশাসনামলে যুবলীগের এ ডেভিল মিজান-গাফফারদের ভয়ে আমরা কেউ কিছু বলতে সাহস পাইনি তাদের অপরাধের প্রতিবাদ করতে। যেখানে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্নস্থানে ডেভিলদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে সেখানে মাসদাইর ও আশপাশ এলাকার ডেভিলরা প্রকাশ্যেই পুর্বের ন্যায় যার যার কর্ম নিয়ে ব্যস্ত। তারা আরও বলেন,বড় মিজান হচ্ছেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ইয়াসিন আরাফাতের শশুর। যার ফলে ১৭ বছরে ব্যাপক অপরাধ করার পরও জামাতার কারনে নিশ্চিন্তে নিরাপদে আয়েশী জীবন যাপন করছেন শশুর বড় মিজানসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা। জামাতার সুবাদে মামলাযুক্ত এবং প্রকাশ্যে রয়েছেন শশুর মিজান।
সিফাত যিনি ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ইয়াসির আরাফাতের ছোট ভাই এবং সাবেক ছাত্রলীগের ডেভিল রিয়াদ-রাফেলের অন্যতম সহযোগি। অয়ন ওসমানের নির্দেশে যাবতীয় অপরাধের মাষ্টারমাইন্ড রিয়াদ-রাফেল গ্রুপের অন্যতম সদস্য সিফাত বর্তমানেও দূর্দান্ত প্রতাপের সাথে চলাচল করছেন ভাই আরাফাত ও মামা মশিউর রহমান রনির কারনে। বিগত সময়ে বর্তমানে অনেকটা বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে এ সিফাত। মাসদাইর কবরস্থান ও আশপাশ এলাকায় সিফাত যেন একটি আতংকের নামে পরিনত হয়েছে বর্তমানে। রিয়াদ-রাফেলের সময়ে যাদের নিয়ে অপকর্ম করে বেড়াতো বর্তমানেও তাদেরকে নিয়েই পুর্বের মতই আতংক ছড়াচ্ছে এ সিফাত। শুধুমাত্র বড়ভাই ও মামার আর্শীবাদেই নাকি প্রকাশ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের এ ডেভিল সিফাত।
তারা দেশের প্রশাসনের কাছে জানতে চান যে,অন্তবর্তী সরকারের অধীনে চলমান দেশের শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করতে সারা দেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জেও আওয়ামী দোসররা মিছিল বের করছে এবং স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষে কাজ করছে। বিএনপির নেতাদের আত্মীয়-স্বজন পরিচয়ে এবং আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী দোসরদেও কেন গ্রেফতার করা হচ্ছেনা তা সাধারন মানুষের বোধগম্য হচ্ছেনা। তারা আরও বলেন, অপরাধ করার পর সে যদি কোন নেতার স্বজন হয়ে থাকে তাহলে তার পুর্বের অপরাধগুলো ক্ষমার যোগ্য হয়ে যায়। নিশ্চই না ? যদি আইন সবার জন্য সমান হয়ে থাকে তাহলে আওয়ামী ডেভিল-লিটন-মতি-রনজিত-মিজান-জাকির-গাফফার-সিফাতগং কেনই এতটা নিরাপদে রয়েছে তার উত্তরটুকু আমরা প্রশাসনের কাছে চাই। দেশের শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখতে অনতিবিলম্বে আওয়ামী ডেভিলদেরকে দ্রুত গ্রেফতার করা হোক।