সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি :
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) সিদ্ধিরগঞ্জের এক নম্বর ওয়ার্ডের সিআইখোলা এলাকায় ইজারার শর্ত ভঙ্গ এবং স্থানীয়দের আপত্তি উপেক্ষা করে পবিত্র ঈদুুল আজহা উপলক্ষে ডিএনডি লেক ও চলাচলের রাস্তা দখল করে বসানো হয়েছে অস্থায়ী পশুর হাট। ডিএনডি সেচ খালের সৌন্দর্য বর্ধনে লাগানো গাছ বিনষ্ট ও জনদুর্ভোগ লাগবে এখানে হাট না বসানোর জন্য সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ করলেও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সিটি কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে নির্মিত লেকের পাড় ও জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা দখল করে হাট বসিয়েছে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামের মনোনীত ইজারাদার। এতে এলাকায় চলছে সমালোচনা। বিরাজ করছে ক্ষোভ।
সোমবার (১১ জুন) দুপুরে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সিআই খোলা হাটের ইজারাদার মহল্লার ভিতরের বিভিন্ন রাস্তার উপর হাট বসিয়েছে। এছাড়াও হাট বসানো হয়েছে ডিএনডি লেকের পশ্চিম পাড়ে। ডিএনডি খালের সৌন্দর্য্য বর্ধন প্রকল্পের অধীনে লাগানো গাছ কেটে কোন কোন স্থানে সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে এসব স্থানে গরুর হাট বসানো হয়েছে। গরু ও মানুষের চলাচলের কারণে এসব স্থানের খালের পাড়ের মাটি ভেঙ্গে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে হাট বসানোর অনুমতি না দিতে এলাকাবাসী গণস্বাক্ষর দিয়ে গত ৬ জুন সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত আবেদন করেন। স্থানীয়দের দাবী, সিটি কর্তৃপক্ষ জনসাধারণের দূর্ভোগের বিষয়টি আমলে না নেয়ায় ইজারাদার কর্তৃপক্ষ স্থানীয় জনসাধারণ ও সিটি কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করার মত দৃষ্টতা দেখিয়েছে।
জানা যায়, পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ১৪টি পশুর হাটের ইজারা দেয়। সিটি কর্পোরেশনের দেয়া শর্ত অনুযায়ী নির্ধারিত স্থান ব্যাতীত সড়ক, মহাসড়ক কিংবা জোর পূর্বক অন্য কারো জায়গায় হাট বসানো যাবে না এবং ময়লা আবর্জনা পরিস্কার রাখতে হবে। এসব কোন শর্তই মানছে না নাসিক ১ নম্বর ওয়ার্ডের সিআই খোলা বালুর মাঠ পশুর হাট ইজারাদার। সিটি কর্পোরেশন সিআইখোলা বালুর মাঠের নামে পশুর হাটের ইজারা দিলেও প্রকৃত পক্ষে কোন বালুর মাঠের অস্তিত্ব নেই। মো: সালাম নামে স্থানীয় কাউন্সিলরের এক নিকট আত্মীয়র নামে হাট ইজারা এনে কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলাম পেশী শক্তির প্রভাব খাটিয়ে সিআইখোলা এলাকার চলাচলের রাস্তা এবং সিটি কর্পোরেশনের অর্থায়নে নির্মিত প্রায় এক কিলোমিটার লেকের পাড় দখল করে বসানো হয়েছে পশুর হাট। এতে জনসাধারণের চলাচলে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
আরো জানা যায়, শতকোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের অধীনে ডিএনডি খালের পশ্চিম পাড়ে জমিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও লাইট পোষ্ট স্থাপন করে খালের সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পের স্থানে লাগানো গাছ কেটে মাঠ চিহ্নিত করে গরুর হাট বসানো হয়েছে। গাছ কেটে ও পাড়ের সৌন্দর্য্য নষ্ট করে হাট বাসনোর কারণে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি এলাকাবাসী দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন থেকে কোরবানীর পশুর হাটের জন্য নাসিক এক নম্বর ওয়ার্ডের আবাসিক এলাকার সিআই খোলা বালুর মাঠের নামে ইজারা আনলেও অবৈধভাবে এখন ডিএনডি প্রকল্পের খালের পাড় ও এলাকার চলাচলের রাস্তা দখল করে গরুর হাট বসিয়েছেন ইজারাদার কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবী, পশুর হাটের জন্য সিআই খোলা বালুর মাঠ ইজারা আনলেও ডিএনডি খালের পাড়ে এবং রাস্তা দখল করে হাট বসানো অবৈধ। এসব স্থানের সৌন্দর্য্য রক্ষায় সিটি কর্পোরেশনকে উদ্যোগ নেয়ার দাবী জানান স্থানীয়রা। এছাড়াও আবাসিক এলাকার মহল্লার ভিতরে পশুর হাট বসার কারণে চলাচলে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে জনসাধারণ। পশুর ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে এলাকায় বসবাস করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানায়, সিআইখোলা এলাকায় ডিএনডি সেচ খালের পাড় ও সড়ককে বালুর মাঠ উল্লেখ করে পশুর হাটের ইজারা নিয়েছেন নাসিক এক নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামের ভাগিনা মো: সালাম। হাটটির ইজারাদার মো: সালাম হলেও মূলে রয়েছেন কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলাম। একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে এ কাউন্সিলর সড়ক দখল করে পশুর হাট বসিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছেন। এছাড়াও সিটি কর্পোরেশনের অর্থায়নে নির্মিত আরসিসি ঢালাই করা জনবহুল সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত করে বাঁশের খুঁটি লাগিয়ে দখল করা হয়েছে চলাচলের রাস্তা। একই সঙ্গে ডিএনডি সেচ খালের পাড়ে সৌন্দর্য বর্ধনে লাগানো কিছু গাছ কেটে বাঁশের ভেড়া দিয়ে হাট বসানো হয়েছে। সড়কের উপর বেঁধে রাখা হয়েছে বহু গরু। ফলে এ সড়ক দিয়ে যানবাহন ও জনচলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
সিআইখোলা হাটের ইজারাদার মো: সালামের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। হাট কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন স্থানে ব্যানার সাটিয়ে কাউন্সিলরের ছেলের ফোন নাম্বার দিয়ে রেখেছে। যাতে কেউ ইজারাদারের সাথে যোগাযোগ করতে না পারে।
জানতে চাইলে কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলাম বলেন, সিটি কর্পোরেশন থেকে ইজারা নিয়েই হাট বসানো হয়েছে। তবে জনদুর্ভোগ যেন না হয় সেদিকে আমার নজর রয়েছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী মো: জাকির হোসেন জানান, পশুর হাট ইজারা দেওয়ার সময় ইজারাদারদেরকে বিভিন্ন শর্ত বেধে দেওয়া হয়েছে। যদি কেউ ইজারার শর্ত ভেঙ্গে জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা দখল করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমি লোক পাঠিয়ে খবর নিচ্ছি। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।