সোনারগাঁয়ে ফুটপাতে মাটির তৈরী হাড়ি পাতিল বিক্রি করতেন হাজী সোহাগ রনি। রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে তার। হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। ডাঁটে মটমট করেন এই সোহাগ রনি। শুধু দোকানদার নয়, বরং ছাত্রলীগ পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়ানোর পর এবার সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক । পুরো নারায়ণগঞ্জ জেলা চষে বেড়ান তিনি বীরের বেশে।
সাবেক এই ছাত্রলীগের সোহাগ রনি রাজনৈতিক ইস্যু করে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এখন তিনি হাজার কোটি টাকার মালিক। বিদেশে ব্যাবসা বাণিজ্য সহ রয়েছে সেকেন্ড হোম। শুধু তাই নয় সোনারগাঁ সহ বিভিন্ন জায়গায় বহুতল বাড়ি, একাধিক জমি, সবকিছু হয়েছেন রাতারাতি, করেছেন বিয়ে, তাও আবার বিএনপি সোনারগাঁ পৌরসভা সহ-সভাপতি সালাউদ্দিন এর ভাই আলাউদ্দিন এর মেয়ে । তার ছেলে হারুন উর রশিদ মিঠু নারায়ণগঞ্জ ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক।
হাজী সাহেবের বেড়ে ওঠা নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে ফুলবাড়ীয়া গ্রামে। ছোটবেলায় ছিল উশৃংখল চলাফেলা। মারামারি ভাঙচুর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছিল নিত্য দিনের সঙ্গী। পরে রাজনৈতিক ইসু করে শুরু করে জায়গা জমির দালালি। ধীরে ধীরে হয়ে উঠে ভূমি খেকো সোহাগ। জোর পূর্বক জমি দখল, নীরিহ মানুষের ফসলি জমি ভরাট করা সহ স্থানীয় কোম্পানির পক্ষ হয়ে শুরু করে বেপরোয়া জমি দখল। প্রতিবাদ করলেই মামলা হামলার ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে দিত। এভাবে ধীরে ধীরে হয় উঠে ভয়ংকর সোহাগ রনি। কিন্তু গত কয়েক বছর হলো এই কাজ বাদ দিয়ে রীতিমতো কোটিপতি তিনি।
সোনারগাঁ মোগরাপাড়া ইউনিয়নে কয়েকটি আঁট তলা বিশিষ্ট বাড়ির মালিক সোহাগ। রয়েছে কয়েকটি প্লটও তার। নারায়ণগঞ্জ রুপায়ন আবাসিক এলাকায় রয়েছে ডুপ্লেক্স বাড়ি। তার বাজার মূল্য চার কোটি ৫০ লাখ টাকা। নারায়ণগঞ্জ এন এইচ টাওয়ারে ১৪ তলায় রয়েছে আলিশান ফ্লাট। যার মূল্য এক কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও নতুন বহুতল ভবন তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। এখানেই শেষ নয়। এলাকার বিভিন্ন গ্রামে কিছুদিন আগে বেশ কয়েকটি জমি কিনেছেন সোহাগ। তাছাড়া বিভিন্ন কোম্পানি, ফ্যাক্টরী, বালুর ট্রাক, বালুর ড্রেজার, কোম্পানির নামে নিজস্ব পরিবহনসহ ঢাকায় আলিশান বাড়ি, ফ্লাট। রয়েছে নিজে ব্যবহার করার একাধিক কোটি টাকার আলিশান গাড়ি। মধ্যপ্রাচ্যে ৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কি করে এত সম্পদের মালিক সোহাগ রনি তার প্রশ্নও জমেছে সাধারণ মানুষের মাঝে ।
হঠাৎ শূন্য থেকে কোটিপতি বনে যাওয়া সোহাগের কি শুধুই জমি বেচাকেনার ব্যাবসা নাকি আলাদিনের চেরাগ পেলেন, যার ছোঁয়ায় গড়েছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ ? অভিযোগ আছে, ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে মাদক ব্যবসায় জড়ান তিনি। এলাকার মানুষকে নানাভাবে ফাঁদে ফেলে চাঁদা দাবিসহ হয়রানির অভিযোগও রয়েছে সোহাগের বিরুদ্ধে।
তার রাজনৈতির পরিচয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্ধ জানান, রাজনৈতিক পরিচয়ে মাদকসহ সমাজের নানা কার্যকলাপে জড়ান এই ব্যক্তি। এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই তিনি বলেন, আমি ওমুকের আন্ডারে আছি, ওমুকের ছত্রছায়ায় আছি , আমি নারায়ণগঞ্জের এক প্রভাবশালী পরিবারের ও নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী নেতার ছেলের বন্ধু।
একই সাথে একজন শীর্ষ প্রভাবশালী নেতা ও তার প্রভাবশালী পুত্রের সাথে তোলঅ ছবি দেখিয়ে বলেন আমি এখন আর সোনারগাঁয়ের কাউকে গোনায় ধরি না । আমার নেতা নারায়ণগঞ্জ শহরের।
একই কথা বলেন, মোগরাপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবু ও। তিনি বলেন, মাদকসহ আরও নানা কাজে জড়িত সোহাগ। তবে রাজনৈতিক কোনো ব্যক্তিত্বেরই প্রশ্রয় পেয়েছে সে।
শুধু তাই না, অস্ত্র ব্যবসায়ী ও কিশোর গ্যাং লিডারের সাথে তার গভীর সখ্যতাও আছে। নিজেও গড়ে তুলেছেন কিশোর গ্যাং। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের যেনো শেষ নেই। সোহাগ যে ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে এলাকায় অধিপত্য বিস্তার করেন সেটিও ভুয়া।
তবে ছাত্রলীগ নেতা নন বলে বিষয়টি নিজেই স্বীকার করেন সোহাগ। বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি। বর্তমানে কোনো কমিটিতে তার পোস্ট ছিল না সে কথাও স্পষ্ট জানিয়ে দেন সোহাগ।
কিছু দিন ধরে একটি অডিও রেকর্ডিং ফাঁস হয়ে যায়, যেখানে সোহাগ নিজেই আরমান হত্যার কথা স্বীকার করতে শোনা যায়। সে শুধু ভূমি খেকো নন একজন সিরিয়াল কিলার ও বটে। সোনারগাঁওয়ে চাঞ্চল্যকর আরমান হত্যার প্রধান আসামি ও রায়হান হত্যার প্রধান আসামি ও বটে। মোটা অংকের টাকার কন্ট্রাক্টে মানুষ হত্যা করাও তার কাজ ছিল।
এ ছাড়াও সেই অডিও রেকর্ডিং তাঁর মুখ থেকে শোনা যায়, তার পৈতৃক সম্পত্তি খুবই নগন্য । তাঁর বাবার আঁট দশ শতাংশ জমি ছাড়া কিছুই ছিল না। জায়গা জমি দখল করে তিনি আজ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ।
এমন অভিযোগের বিষয়ে সোহাগ রণি গণমাধ্যমকে বলেন আমরা রাজনীতি করি বলে এমন অনেক অভিযোগ ই করে প্রতিপক্ষরা।
সোহাগ রনির বিরুদ্ধে বিশাল এমন অভিযোগের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাই বলেন, শুধু সোনারগাঁয়েই না সারাদেশেই আমরা দেখতে পাচ্ছি এমন ঘটনা ঘটছে । কমিটি হলে অবশ্যই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিগত সময়ে উল্লেখিত এমন অভিযোগের বিষয়ে সোনারগাঁ থানার ওসি তদন্ত মন্তব্য করেছিলেন, সোহাগ রনির বিরুদ্ধে সব অভিযোগই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মাদক ব্যবসা কিংবা কিশোর গ্যাংয়ের সাথে জড়িত থাকলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এরই মধ্যে অনেক মাদক ব্যবসায়ীকেই আমরা গ্রেফতার করেছি।
সু শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সভাপতি ধীমান সাহা বলেন, আমার দাবী করবো দুদক যেন এমন অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন ।
অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ দুদক এর উপ পরিচালক মইনুল হাসান রওশানী গণমাধ্যমকে বলেন, দুদকের কাছে যে কেউ অভিযোগ করতে পারে। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্তা নেয়া হবে ।