অর্থপাচার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কিছু মানুষ লোভী হয়ে যায়। টাকা–পয়সার লোভ এত বেড়ে যায় যে, দেশ বাদ দিয়ে বিদেশে রাখতে গিয়ে পরে দেশ থেকে ভাগতে হয়। সেই অর্থ বানিয়ে লাভটা কী হলো। এতই অর্থ বানিয়ে ফেললো যে, শেষে আর দেশেই থাকা যায় না। তাহলে লাভ হয় কি? এটা তো মানুষ চিন্তা করে না।
মঙ্গলবার সকালে ভারত সফর নিয়ে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সরকারপ্রধান বলেন, টাকা বানানো (তাদের) নেশার মতো পেয়ে যায় মনে হয়। এটা হলো বাস্তব কথা। তবুও আমি বলব, যেখানে যেটুকু সমস্যা আছে, সেগুলো সমাধানে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। তারজন্য আমরা আইনও তৈরি করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আমলে আমরা সবচেয়ে বেশি বেসরকারি খাত খুলে দিয়েছি। হ্যাঁ, ব্যাংকিং খাতে কেউ ভালো চালাচ্ছে, কেউ খারাপ চালাচ্ছে। কোনো সময় অনেকে ঠিকমতো চালাতে পারে না। এটা চিরাচরিত নিয়ম। যদি কোনো ব্যাংক দুর্বল হয়ে যায়, সেটাকে সহযোগিতা করা বা একটা ব্যাংকের সঙ্গে আরেকটা ব্যাংককে একীভূত করা হয়। অর্থাৎ যারা সেখানে আমানত রাখে, তাদের রক্ষা করাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সেটাই পালনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
ভারতের কাছে বাংলাদেশ বিক্রি হয় কীভাবে সেই প্রশ্ন রেখে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বলে ভারতের কাছে বাংলাদেশ বিক্রি হয়ে যাবে, আমার প্রশ্ন বিক্রিটা হয় কীভাবে? আসলে যারা এ কথা বলে তারা নিজেরাই ভারতের কাছে বিক্রি হওয়া।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি মিত্র দেশ, আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাধে কাধ মিলিয়ে নিজেদের রক্ত ঢেলে দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। ভারত মিত্রশক্তি হিসেবে আমাদের পাশে থেকে যুদ্ধ করেছে। পৃথিবীর যেসব দেশে যুদ্ধে মিত্রশক্তি সহায়তা করেছে, তারা কিন্তু সেই দেশ থেকে ফেরত যায়নি। এখানে ভারত কিন্তু ব্যতিক্রম। যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছেন যে তারা দেশে ফিরে যাক, ভারতের প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে তাদের ফেরত নিয়ে গেছে। আমরা ভারতের সহযোগিতায় বাংলাদেশে তিস্তা প্রকল্প করবো। সেই বিষয়ে নয়াদিল্লি আমাদের আশ্বাস দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা এই দেশকে বিক্রি করে না। কারণ আমরা এই দেশকে স্বাধীন করেছি। এতে যে কষ্টটা ভোগ করেছি, সেটা আমরা জানি। যারা বিক্রির কথা বলে, তারা পাকিস্তানের দালালি করেছে।
ভারতে দু’দিনের সরকারি সফর শেষে শনিবার রাতে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে শুক্রবার দুপুরে নয়াদিল্লি যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লোকসভা নির্বাচনের পর বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করার পর ভারতে কোনো সরকার প্রধানের এটিই প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। এ ছাড়াও এই সফরটি ছিল ১৫ দিনেরও কম সময়ে ভারতের রাজধানীতে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় সফর। এর আগে তিনি ৯ জুন মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি সফরে ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ককে আরও সুসংহত করতে সাতটি নতুন ও তিনটি নবায়নকৃতসহ ১০টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে।