জাগো নারায়ণগঞ্জ:
পুুরান ঢাকার বংশাল এলাকায় মিরনজিল্লা হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর বর্বরোচিত হামলা ও উচ্ছেদের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসুচি পালন করেছে বাংলাদেশ পুজা উদযাপন কমিটি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দ। শনিবার ( ১৩ জুলাই ) বিকেল ৩টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের নিচে এ মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করা হয়।
বাংলাদেশ পুজা উদযাপন কমিটি নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটির সভাপতির সভাপতিত্বে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসুচি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুজা উদযাপন কমিটি নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক শিখন সরকার শিপন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুজা উদযাপন কমিটি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর কমিটির বিভিন্ন থানা ও ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি-সাধারন সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ,বাংলাদেশ ডোম সমাজ উন্নয়ন কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ঈশ^র লাল প্রমুখ।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসুচি অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সারাদেশে ১৫ লাখের উপরে রয়েছে হরিজন সম্প্রদায়ের লোক রয়েছে। আর এ সম্প্রদায়টি সমাজের নিন্ম শ্রেনীর হিসেবে গন্য করে সাধারন মানুষ। আর এ সকল লোকগুলো সরকারী সম্পত্তির উপরই ঘর তুলে বসবাস করে থাকেন। এ দেশে রোহিঙ্গাদের জন্য সরকার বাড়িঘর নির্মান করে দিয়ে জামাই আদরে লালন পালন করছে অথচ দেশের হরিজন সম্প্রদায়কে উচ্ছেদ করা হচ্ছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়। তারা আরও বলেন, বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক দেশ অথচ এ দেশে হিন্দুদের মন্দির,মঠ ও প্রতিমাসহ নানাকিছু ভাংচুর করা হচ্ছে। ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও ৩৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে উদ্যোশ্যে করে বলেন, ৭১ সালে শুধু আপনারা মুসলমানরাই কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ করেননি। আমরাও কিন্তু করেছি। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে আপনারা মিরনজিল্লা হরিজন কলোনীতে উচ্ছেদের নামে ভাংচুর ও মারধরের যে কান্ড ঘটিয়েছেন তা সত্যিই ন্যাক্কারজনক। আমরা অনতিবিলম্বে মেয়র এবং কাউন্সিলরের শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মাসদাইর মহাশ্মশানের টনি ডোম। তার তিন পুরুষ যাবত উক্ত প্রতিষ্ঠানে কাজ করে আসছে। অথচ বহিরাগত একটি হামলার ঘটনায় সেই তিনপুরুষ যাবত কাজ করে যাওয়া টনি ডোমকে চাকুরীচ্যুত করে পরিবারসহ সেখান থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। শুধু তাই নয় টনির ঘরে থাকা প্রতিমাগুলেঅ বের করে দিয়ে তা খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়েছে টনিকে অবগত না করে। আমরা হরিজন সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রায় ৮টি প্রতিষ্ঠান থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মহোদয়কে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কোন উত্তর তো দেয়নি এমনকি আমাদের সাথে কথা বলাটাও মেয়র প্রয়োজন মনে করেননি। আমরা মেয়র মহোদয়কে অনুরোধ করে বলবো, আপনি আমাদের সাথে বসে টনির বিষয়টির সমাধান করুন এবং টনি ডোমকে তার চাকুরীতে পুর্নবহাল করুন। তারা আরও বলেন,করোনাকালে যখন সাধারন কোন মানুষ বাড়ির বাহিরে বের হয়নি এবং লাশ সৎকারে কেউ এগিয়ে আসেনি তখন কিন্তুু আপনি ( মেয়র ) নির্দেশেই কিন্তু টনি ডোম শ্মশানে লাশ সৎকারের কাজগুলো সম্পন্ন করেছিলো ওর পরিবারের সদস্যদের প্রতি মায়া ত্যাগ করে। সেই করোনা যোদ্ধা টনিকে কোন কারন ছাড়াই কিছু মানুষের কান কথার উপর নির্ভরশীল হয়ে সেখান থেকে উচ্ছেদ করলেন তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছেনা।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল পুর্বক বক্তব্যে বাংলাদেশ পুজা উদযাপন কমিটি নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক শিখন সরকার শিপন বলেন, আমরা যে সমাজে বসবাস করছি তা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার দ্বায়িত্বে রয়েছে এ হরিজন সম্প্রদায়। ঢাকার মিরনজিল্লা হরিজন কলোনীতে যে কলংকিত ঘটনা ঘটিয়েছে তা সত্যিই দুঃখজনক। এ কান্ডে যারা জড়িত রয়েছেন তাদের প্রত্যেকের শাস্তি দাবী জানাচ্ছি। তিনি হরিজন সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দদের উদ্যোশে বলেন,আপনারা আপনাদের কর্মসুচি চালিয়ে যান আমরা বাংলাদেশ পুজা উদযাপন কমিটি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের নেতৃবৃন্দরা আপনাদের পাশে আছি। তিনি নারায়ণগঞ্জ মহাশ্মশানের টনি ডোম প্রসঙ্গে তিনি বলেন,নারায়ণগঞ্জের সর্বশ্রেনীর হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক টনির পক্ষের আছে। আপনারা মেয়র মহোদয়কে আবারো চিঠির মাধ্যমে অবগত করুন এবং টনিকে তার চাকুরীতে পুর্নবহাল করুন।
মানববন্ধন কর্মসুচি শেষে একটি মিছিল বের করে চাষাড়া গোলচত্তর ঘুরে ২নং রেলগেইট প্রদক্ষিন করে পুনরায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের নিচে এসে তা সমাপ্ত করা হয়।