সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বুধবার মতবিনিমিয় সভা ডেকেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হন সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা। এ সভায় ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে হাজির হন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তাকে দেখামাত্রই উত্তেজিত হন সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা।
এ সময় ড. আব্দুর রাজ্জাককে সভাস্থলে দেখে সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা চিৎকার দিয়ে ওঠেন, ‘তিনি (ড. আব্দুর রাজ্জাক) এখানে কেন?’ ‘তার ছেলে কেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সরকারবিরোধী পোস্ট করেছেন’, সেটিও জানতে চান সাবেক নেতারা।
বেলা ১১টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এমন বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার পর সাবেক কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপির বড় ছেলে রেজুয়ান শাহরিয়াম সুমিতের ফেসবুক ওয়াল ঘেটে একটি পোস্ট পাওয়া গেছে; যেটি ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কোটা আন্দোলন ইস্যুতে ছাত্রলীগকে আক্রমণ করে ১৭ জুলাই নিজের ফেসবুক ওয়ালে ওই পোস্ট করেন সুমিত।
সেখানে তিনি লেখেন, ‘এরা (ছাত্রলীগ) বুক ফুলিয়ে যতই ‘জয় বাংলা’ বলে চেঁচাক, ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ২০২৪ এর আজকের এই ছাত্রলীগের কোনো ধরনের সম্পর্ক আছে বলে আমি মনে করি না। আজ এরা চেতনাহীন, পথভ্রষ্ট, অর্থলোভী পঙ্গপাল ছাড়া কিছুই নয়। আন্দোলনরত ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনায় না গিয়ে এই পঙ্গপাল বাহিনী লেলিয়ে দেওয়া কোনো আদর্শের রাজনীতি আমি জানি না, তবে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি বা দর্শনের সঙ্গে তার কোনো মিল নেই, তা ঢের বলতে পারি। এই পঙ্গপাল পুষতে পুষতে কবে গোটা জাতিই চেতনাহীন, পথভ্রষ্ট, ও অর্থলোভী হয়ে যায়!
সরকারের সমালোচনা করে দেওয়া ওই স্ট্যাট্যাসে রাজ্জাকপুত্র কবি শামসুর রাহমানের একটি কবিতার লাইন জুড়ে দেন- ‘রাজু, তুমি মেধার রশ্মি-ঝরানো চোখ মেলে তাকাও তোমার জাগরণ আমাদের প্রাণের স্পন্দনের মতোই প্রয়োজন। ’
এদিকে রেজুয়ান শাহরিয়াম সুমিতের ফেসবুক আইডিতে গিয়ে তার ছাত্রলীগবিরোধী পোস্টটি পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্ট্যাট্যাসটি দেওয়ার পর ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেলেন তিনি। তবে স্ট্যাটাসের একটি স্ক্রিনশট যুগান্তরের হাতে এসেছে।
এদিকে শুধু আব্দুর রাজ্জার নয়, সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের তোপের মুখে পড়েন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও। বুধবার সাবেক ছাত্রনেতাদের মতবিনিময় সভায় ডেকে আলোচনা না করে সংবাদ সম্মেলন করায় হট্টগোল শুরু হয়। পরে সংবাদ সম্মেলন শেষ না করেই সভাস্থল ত্যাগ করেন দলের সেতুমন্ত্রী।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সাবেক ছাত্রনেতাদের মতবিনিময় সভার জন্য ডেকে মিডিয়ার সামনে কথা বলা শুরু করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সময় ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা হট্টগোল শুরু করেন। সাবেক নেতারা ওবায়দুল কাদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, আমাদের ডেকেছেন, আগে তো আমাদের কথা শুনবেন। আলোচনা করবেন। সেটা না করে আপনি মিডিয়ার সামনে কথা বলা শুরু করেছেন। আমাদের ডেকে কেন সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন?
এর আগে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত সাবেক ছাত্রনেতাদের উদ্দেশে বলেন, অভিমান ভুলে কোটা আন্দোলনের নামে যারা নারকীয় ধ্বংস চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেখবে মাঠে কারা থাকে। পার্টি অফিসে বসে থাকতে দেওয়া হবে না।’
তথ্যসুত্রঃ যুগান্তর