প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশে গত তিন সপ্তাহের অচলাবস্থার অবসান হয়েছে। স্বস্তি ফিরেছে জনমনে। এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে শেয়ারবাজারেও। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুতেই ব্যাপক উত্থান হয়েছে তালিকাভুক্ত প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারদরে। শেয়ারবাজার খোলার পর প্রায় সব শেয়ারের দর বাড়লেও শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দরপতন হয়েছে। একই অবস্থায় আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ারেরও।
আন্দোলন দমাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বুধবার পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল। তবে সেনাবাহিনীর কাছে ক্ষমতা দিয়ে দেশত্যাগের পর সোমবারই সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ব্যাংকসহ সব সরকারি-বেসরকারি অফিস খোলা রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। এর ফলে আজ স্বাভাবিক সময়ে শেয়ারবাজারের লেনদেন শুরু হয়।
লেনদেনের প্রথম ঘণ্টা শেষে বেলা ১১টায় প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ৩৬০ কোম্পানির শেয়ার এবং ৩৭ মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৮৭ শতাংশের দর বেড়ে কেনাবেচা হতে দেখা গেছে। বিপরীতে দর হারিয়ে কেনাবেচা হতে দেখা যায় ১০ শতাংশ শেয়ার।
দরবৃদ্ধি পাওয়া শেয়ারগুলোর মধ্যে ৭৫টি দিনের সার্কিট ব্রেকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ দরে (সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ) কেনাবেচা হতে দেখা যায়। গুটিকয়েক শেয়ার ছাড়া আজ অধিকাংশ শেয়ারে ব্যাপক ক্রেতা উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিপরীতে সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দর বা এর কাছাকাছি মূল্যে কেনাবেচা হওয়া শেয়ারগুলোর বিক্রেতা শূন্য অবস্থা তৈরি হয়েছে।
একই চিত্র দেখা যাচ্ছে দেশের দ্বিতীয় শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) লেনদেনে।
সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারদরে ব্যাপক উত্থানে শেয়ারবাজার সূচকেও বড় উত্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বেলা ১১টায় ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ১৮৬ পয়েন্ট বেড়ে ৫৪১৫ পয়েন্টে অবস্থান করতে দেখা গেছে। সূচক বৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
অবশ্য লেনদেন শুরুর মাত্র ১২ মিনিটে সূচকটি আগের দিনের তুলনায় ২৫১ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়ে ৫৪৮১ পয়েন্ট ছুঁইছুঁই অবস্থানে উঠেছিল।
বৃহস্পতিবার ঢাকার শেয়ারবাজারে পুরো সাড়ে চার ঘণ্টার লেনদেন সময়ে মাত্র ২০৭ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছিল। আজ লেনদেনের আধা ঘণ্টারও কম সময়ে ওই পরিমাণ শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। বেলা ১১টা বা লেনদেনের প্রথম ঘণ্টা পর্যন্ত শেষে এ বাজারে ৩৮৪ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।
সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দরপতন: শেয়ারবাজার খোলার পর প্রায় সব শেয়ারের দর বাড়লেও শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দরপতন হয়েছে। একই অবস্থায় আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ারেরও। ব্যাংকটির মালিকানায় সরকারের অংশ বড় হলেও এতে বেক্সিমকো গ্রুপে বিনিয়োগ দিয়ে সালমান এফ রহমান ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদে আছেন। তার মালিকানাধীন বেক্সিমকো ফার্মা, শাইনপুকুর সিরামিক্সের শেয়ারের দরপতন হয়েছে। তবে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারদরে ফ্লোর প্রাইস এখনও কার্যকর রাখায় ওই শেয়ারের দরপতন হওয়ার সুযোগ নেই। পাবলিক ও ব্লক মার্কেট মিলে শুধু ডিএসইতেই প্রায় ১০০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রির আদেশ দিয়ে বসে আছেন ১ হাজার ৩৭০ জন বিনিয়োগকারী, যার বিপরীতে কোনো ক্রেতা নেই।