মন্ত্রীত্ব পাওয়ার পর থেকে নিজেকে কুমিল্লা-১০ (কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট) আসনের ‘একমাত্র অভিভাবক’ বলে দাবি করতেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ওরফে লোটাস কামাল। এ জন্য নিজের নির্বাচনী এলাকার কোনো মানুষ অন্য দলের রাজনীতি করুক, সেটা তিনি চাইতেন না। সবাইকে আওয়ামী লীগের পতাকাতলে আসার আহ্বান জানাতেন তিনি। তার এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের যেসব নেতা স্বেচ্ছায় আওয়ামী লীগের যোগ দিয়েছিলেন, দলে বড় পদ ও জনপ্রতিনিধির চেয়ারে বসিয়ে তাদের ‘পুরস্কৃত’ করেছিলেন তিনি।
আর যারা তার আহ্বানে সাড়া দেননি, তাদের দলীয় ক্যাডার বাহিনী দিয়ে পিটিয়ে এলাকা ছাড়া করা ছিল তার নিত্যদিনের কাজ। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের সাবেক এই অর্থমন্ত্রী ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও কেড়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে এসব বিষয় নিয়ে ভয়ে মুখ খুলেননি কেউ।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লোটাস কামালের দাপট ছিল সব মহলে।
সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে শিক্ষকদেরও তার রোষানলে পড়তে হয়েছে। তার কথা না শোনায় অনেককে বাড়ি ও কর্মস্থল থেকে তুলে নিয়ে প্রলোভন ও হুমকি দিতেন।
দলীয় নেতাকর্মীদের ভাষ্য- লোটাস কামাল অন্য দলের নেতাকর্মীদের নিজ দলে ভেড়াতে গিয়ে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করতেন। এ ছাড়া রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ ও লুটপাট করতে গড়ে তুলে ছিলেন সিন্ডিকেট।
যার নেপথ্যে ছিল তার দুই ভাই, ভাইজা ও পিএস।
২০১১ সালে শেয়ারবাজার লুটে স্ত্রী ও মেয়েদের কাজে লাগান সাবেক এই অর্থমন্ত্রী। দেশের টাকা পাচার করে বিদেশে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। তবে লোটাস কামাল নিজের নামে অর্থসম্পদ বেশি রাখেননি। স্ত্রী ও মেয়েদের নামে হস্তান্তর করেছেন।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই দিন রাত ১২টায় নিজের মেয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের চেয়ারপারসন নাফিসা কামালকে নিয়ে লাগেজ ভর্তি টাকা নিয়ে সিঙ্গাপুরে পালিয়ে গেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। তাদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
জানা গেছে, সাবেক এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম মজুমদারের মৃত্যুর পর তার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার অঙ্গীকার করে ১৯৯৪ সালে সাবেক কুমিল্লা-৯ আসনের আওয়ামী রাজনীতির হাল ধরেন ব্যবসায়ী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ১৯৯৬ সালে নৌকার টিকিটে এই আসন থেকে তিনি বিপুল টাকা খরচ করে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন। ওই সময় থেকে কালাম মজুমদারের ব্যক্তিগত সহকারী কেএম সিংহ রতনকে নিজের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেন। সাবেক এমপির ভক্তদের সমর্থন আদায় করতে ‘আবুল কালাম মজুমদার স্মৃতি সংসদ’ প্রতিষ্ঠা করেন। তার নামীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আর্থিক অনুদান দিতেথাকেন। ছাত্রলীগের সাবেক শতাধিক নেতাকে নিজের কম্পানিতে চাকরি দেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাসিক ভাতা প্রথা চালু করেন। ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সিমসহ মোবাইল ফোন উপহার দেন। এতকিছুর পরও জনবিচ্ছিন্ন থাকায় ২০০১ সালে তিনি বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরীর কাছে বিপুল ভোটে হেরে যান।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কুমিল্লা-৯ (কুমিল্লা সদর দক্ষিণ) ও কুমিল্লা-১১ (নাঙ্গলকোট) আসনকে একীভূত করে কুমিল্লা-১০ আসন করা হয়। দেশের অন্যতম বৃহৎ এই আসন থেকে ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বারের মতো তিনি এমপি নির্বাচিত হন। এরপরই তিনি ভোল পাল্টাতে শুরু করেন। সাবেক এমপি কালাম মজুমদারের ঘনিষ্টদের গুরুত্ব দেওয়া কমিয়ে দেন। কালাম মজুমদারের রাজনৈতিক শত্রুদের আপন করতে শুরু করেন। তাদের আশ্রয় দিয়ে বিভিন্নভাবে পুর্নবাসনের উদ্যোগ নেন। বিএনপি-জামায়াত থেকে যোগদান করা লোকদের দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ ও জনপ্রতিনিধির চেয়ারে বসান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন করে নিজের এপিএস, দুই ভাই ও ভাতিজার মাধ্যমে লুটপাটের সিন্টিকেট তৈরি করেন। পরিবারতন্ত্র কায়েমের অংশ হিসেবে ২০০৯ সালে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের সিনিয়র নেতাদের বাদ দিয়ে নিজের আপন ছোট ভাই গোলাম সারওয়ারকে চেয়ারম্যান বানিয়েছেন তিনি। জীবনে কখনও ছাত্রলীগের রাজনীতি না করলেও উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামী লীগের অভিভাবক হয়ে যান গোলাম সারওয়ার। সেই সময়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মালেককে অনেকে ‘পুতুল সভাপতি’ বলতেন। তৎকালীন সময়ের পরিকল্পনামন্ত্রী লোটাস কামালের মন্ত্রীত্বের ক্ষমতা ব্যবহার করে এক পর্যায়ে নতুন কমিটি করে গোলাম সারোয়ার নিজেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ দখল করেন। আর সেই কমিটিতে ত্যাগীদের পাশাপাশি তিনি হাইব্রিডদের আওয়ামী লীগ করার সুযোগ করে দেন। সেই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক করেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত রুহুল আমীন চৌধুরীকে। এরপর থেকে উপজেলা প্রশাসন ও আওয়ামী লীগে রুহুল আমিন চৌধুরীর আধিপত্য শুরু হয়। তার আধিপত্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েন দলের ত্যাগীরা। উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম বলে রুহুল আমিন চৌধুরী ঠিকাদারদের থেকে কমিশন আদায় করতেন। ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে টিআর কাবিখার টাকা আত্মসাৎ করতেন। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়ি চালক আবদুর রাজ্জাক ও বারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম আহমেদের সহায়তায় লালমাই পাহাড়ে মাটিকাটা সিন্ডিকেট থেকে চাঁদা উঠাতেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্য ও জমি অধিগ্রহণের নামে লোটাস কামালের ছোট ভাই গোলাম সারওয়ার হাতিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। চানবালিয়া খাল দখল করে মাটি বিক্রি করে তিনি বিপুল টাকা কামিয়েছেন সারওয়ার। গত ২১ মে অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে হেরে যান গোলাম সারওয়ার। এরপর থেকে তিনি আর রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেননি। গত জুনের প্রথম সপ্তাহে তিনি গোপনে কানাডা পালিয়ে যান। জনশ্রুতি রয়েছে, দেশের টাকা পাচার করে লোটাস কামালের ভাই গোলাম সারওয়ার গত ১৫ বছরে কানাডাতে একাধিক বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন।
এদিকে ২০১৭ সালে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার আটটি ও লাকসামের একটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয় নতুন উপজেলা লালমাই। লোটাস কামাল নবগঠিত লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রথম কমিটিতে সভাপতি করেন তার বড় ভাই আবদুল হামিদকে আর সাধারণ সম্পাদক করেন এপিএস কেএম সিংহ রতনকে। নতুন উপজেলা সাজাতে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে লুটপাট শুরু করেন মন্ত্রীর ভাই ও এপিএস। ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে তারা টিআর কাবিখার বিপুল টাকা আত্মসাৎ করেছেন। উন্নয়ন কাজের সকল ঠিকাদার থেকে উপজেলা উন্নয়ন ফান্ডের নামে কমিশন নিতেন। তাদের লুটপাট নামের এই ব্যবসার ক্যাশিয়ার ছিলেন লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক কাজী মেহেদী হাসান বাপ্পী। তবে বিষয়টি নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করায় ২০২০ সালের শেষের দিকে পদত্যাগ করেন মন্ত্রীর ভাই ও এপিএস। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লোটাস কামাল তার ভাতিজা কামরুল হাসান শাহীনকে বানিয়েছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক। এক বছর আগে লালমাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হন লোটাস কামালের ভাতিজা কামরুল হাসান শাহীন। ওই নির্বাচনে তার সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন লালমাই সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মমিন মজুমদার। নির্বাচনে কেন্দ্র দখল ও ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে না দিয়ে লোটাস কামাল নিজের ক্ষমতায় উপজেলা চেয়ারম্যান বানান ভাতিজা শাহীনকে। শাহীন চেয়ারে বসেই তার বাবা লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবদুল হামিদের মতো করেই ঠিকাদারদের কমিশনের জন্য চাপ দিতে থাকেন।
অভিযোগ রয়েছে, গত এক বছরে টিআর কাবিখা প্রকল্পের কোনো কাজ হয়নি। প্রকল্পের নামে টাকা উত্তোলন করে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের অফিস নির্মাণের কথা বলে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাত করেছেন। প্রতিবছর বিপিএল খেলা শুরুর আগেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের জন্য ফান্ড সংগ্রহের নামে কোটি কোটি চাঁদা তুলেছেন এই শাহীন। তার সমর্থিতরা বাগমারা বাজার ও ভুশ্চি বাজারে সরকারি জায়গা দখল করে কয়েকশ দোকান নির্মাণ করে অবৈধভাবে ভাড়া আদায় করছেন।
এদিকে এমপি হওয়ার পর থেকে মুস্তফা কামাল দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাৎ, মতবিনিময় ও সভা-সমাবেশ করলেও ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর তিনি নির্বাচনী এলাকায় আসা বন্ধ করে দেন। তার পক্ষে কুমিল্লা সদর দক্ষিণে ছোট ভাই গোলাম সারওয়ার, লালমাইয়ে বড় ভাই আবদুল হামিদ ও নাঙ্গলকোটে ব্যক্তিগত সহকারী কেএম সিংহ রতন নিয়ন্ত্রনের দায়িত্ব পান। কাগজে কলমে মুস্তফা কামাল এমপি হলেও নাঙ্গলকোটে কেএম সিংহ রতনই যেন ছায়া এমপি হয়ে যান। প্রতি শুক্রবার রতন লালমাই উপজেলার আলীশ্বর গ্রামস্থ বাড়িতে আসার খবর পেলে দলের শত শত নেতাকর্মী তার বাড়িতে অবস্থান করতেন। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা বদলির তদবির করতে তার বাড়িতে আসতেন। নিজেদের লুটপাটের স্বার্থে তাকে এই ছায়া এমপি হয়ে উঠতে সহযোগিতা করেছেন নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন কালু, নাঙ্গলকোট পৌর মেয়র আবদুল মালেকসহ লুটপাটে ব্যস্ত নেতারা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি গঠন, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, সরকারি চাকরি ও বদলির নামে ঘুষ লেনদেন করতেন লোটাস কামালের এপিএস রতন নিজেই। উন্নয়নের সকল প্রকল্পে লোটাস কামালের নামে ভাগ নিতেন রতন।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরপরই গোপনে টাকার বস্তা নিয়ে সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যান সাবেক এই মন্ত্রী। তার সঙ্গে ছিলেন তার ছোট মেয়ে ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের চেয়ারপারসন নাফিসা কামালসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য। সরকার পতনের খবর পেয়ে ওইদিন সারা দেশের মতো কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোটেও মুক্তিকামী ছাত্র-জনতাও রাস্তায় নেমে আসে। তারা লোটাস কামালের সিন্ডিকেট রাজনীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে। বিএনপির সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরীর নিষেধাজ্ঞার কারণে বিক্ষুব্ধ জনতা লোটাস কামালের বাড়িতে হামলা করতে গিয়ে ফিরে আসে বলে জানা গেছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা বলতে থাকেন- জনবিচ্ছিন্ন এক জালিমের হাত থেকে সৃষ্টিকর্ত আমাদের রক্ষা করেছেন। লোটাস কামাল বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন দুর্নীতির টাকায়। দুদকের উচিত তদন্ত করে দেশের সম্পদ ফিরিয়ে আনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগ সমর্থিত এক শিক্ষক নেতা বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল সাহেব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের চেয়েও যোগদানকৃত নেতাদের বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। তিনি সবসময় বলতেন এই আসনে কেউ অন্য দল করার দরকার নেই। বিএনপি-জামায়াতের সবাইকে আমি আমার সঙ্গে নিয়ে আসবো। প্রস্তাব দেওয়ার পর যোগ না দিলে তিনি পুলিশ দিয়ে হয়রানি করতেন। তার পরিবারতন্ত্র ও সিন্ডিকেটের কারণে গত ১৫ বছরে দলের নির্যাতিত ও ত্যাগীরা কোনো ধরনের মূল্যায়ন পায়নি। সিন্ডিকেটকে আর্থিকভাবে ম্যানেজ না করে কেউ ইউপি সদস্যও হতে পারেনি। অথচ সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে লুটপাটকারীরা পালিয়ে গেছে। তাদের অপকর্মের কারণে ত্যাগীরা এখন বাজারে উঠতেও ভয় পায়।
স্থানীয় বিএনপি কর্মী আবুল কালাম বলেন, আওয়ামী লীগে যোগদান না করায় কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেনের ওপর দুই দফা হত্যাচেষ্টা করে গুলিবিদ্ধ করেছে লোটাস কামালের ক্যাডার বাহিনী। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় বিএনপি নেতা আমান উল্যাহ আমানের বাড়ি ঘরে হামলা ভাঙচুর করা হয়েছিল। বিএনপি নেতা হাফেজ বিল্লালকে বারবার গ্রেপ্তার করে জঙ্গি বানানোর অপচেষ্টা করেছে তারা। সাবেক ইউপি মেম্বার হুমায়ুন কবির শরীফ ও জেলা যুবদল নেতা শাহ আলমকে পিটিয়ে পঙ্গু করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল কামাল বাহিনী। দলের বেশিরভাগ নেতা গত ১৫ বছর নিজের বাড়িতে ঘুমাতে পারেননি।
লালমাই উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ মিয়া বলেন, গত বছরের ২৬ আগষ্ট লালমাই উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের উন্দানিয়ায় বিএনপি নেতা মফিজুর রহমানের বাড়িতে কর্মী সভার আয়োজন করেছিল বিএনপি। খবর পেয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রীর ভাতিজা ও লালমাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা সেই বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে। হামলাকারীদের গুলিতে আমি পঙ্গুত্ববরণ করি। গুরুতর আহত হন বিএনপি নেতা মফিজুর রহমান, যুবদল নেতা আবদুর রহমান ও স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা মনির হোসেন। এই ঘটনায় বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করে উল্টো থানায় মামলা করেন বেলঘর উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম। এমন শত শত ঘটনা করেছে লোটাস কামাল বাহিনী।
লালমাই উপজেলা বিএনপি নেতা ইউছুফ আলী মীর পিন্টু বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের নির্দেশে গত ১৫ বছরে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ ও লালমাই উপজেলায় ৮৫টি গায়েবি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ১০ সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে কারাবরণ করতে হয়েছিল। আমাকেও ১৩টি মামলায় আসামি করা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ২ আগস্ট সকালে আওয়ামী সন্ত্রাসী আয়াতুল্লাহ, আকতার, ভুট্টু ও হান্নানের নেতৃত্বে আমাকে অপহরণ করে লালমাই পাহাড়ে গুম করে। পরবর্তীতে আমার নেতা মনিরুল হক চৌধুরীর হস্তক্ষেপে র্যাবের একটি টিম অভিযান চালিয়ে আমাকে উদ্ধার করে।
সুত্রঃ কালের কন্ঠ