ষ্টাফ রিপোর্টার:
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ, শিক্ষার্থীদের মৃত্যু, পুলিশ সদস্যদের মৃত্যু ও থানা পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ৬ আগষ্ট থেকে দেশের প্রতিটি থানার কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও আবারো পুলিশ সদস্যরা ফিরতে শুরু করেছে স্ব স্ব থানাগুলোতে। ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে বিভিন্ন থানায় হামলা, ভাংচুর ও পুলিশ সদস্যদের হত্যার ঘটনার পর ফতুল্লা মডেল থানারও পুলিশি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় পুলিশ। সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে থানায় ফিরতে শুরু করেছে ফতুল্লা থানার পুলিশ সদস্যরা। ইতিমধ্যে ৭০% পুলিশ সদস্য থানায় নিজ কর্মস্থলে যোগদান করেছেন বলে জানিয়েছেন ফতুল্লা মডেল থানার ওসি নূরে আযম। খুব শীঘ্রই বাকি সদস্যরাও থানায় ফিরে আসবে বলেও জানান তিনি।
ফতুল্লা থানার পুলিশ সদস্যরা ফিরে আসা এবং থানার স্বাভাবিক কার্যক্রম নিয়ে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ নূরে আযম জানান,আমাদের আইজিপি স্যারের নির্দেশে ইতিমধ্যে ফতুল্লা থানায় ৭০% পুলিশ সদস্য ফিরে এসেছে। বাকিরাও চলে আসবে। আপনেরা জানেন আন্দোলনের পরবর্তী ঘটনায় আমাদের অনেক সদস্য আহত ও নিহত হয়েছে। আমাদের পুলিশের যে স্বাভাবিক কার্যক্রম জনগনের সেবা দেওয়া সেটা দিতে পারছি না। সে জন্য আমরা নিজেরাই দুঃখিত। আমাদের হয়তো একটু সময় লাগছে । কিন্তু আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি অচিরেই যে সেবা প্রত্যাশী জনগনকে সেবা দেওয়ার।
নূরে আযম আরো বলেন,পুলিশ জনগনের বন্ধু।আমরা জনগনের বন্ধু হিসেবেই থাকতে চাই। আমরা ন্যায় বিচারের পক্ষেই থাকবো। যেভাবে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা লাভ করা যায় আমরা সে পথেই থাকবো। যারা যে ধরনের অপরাধ করছে সে ধরনেরই শাস্তি পাবে। আপনেরা একটু ধৈর্য ধরুন আমরা আপনাদের পাশে ছিলাম, আপনাদেই পাশে থাকবো হয়তো আমাদের একটু সময় লাগছে।
উল্লেখ্য যে, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। যা ৯ দফা আন্দোলন থেকে পরবর্তী এক দফা আন্দোলনে চলে আসে শেখ হাসিনার পদত্যাগ। এতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ,র্যাব ও যৌথ বাহিনী। সারাদেশে অনেক শিক্ষার্থী নিহত ও আহত হয়। শুধু শিক্ষার্থীরাই না অনেক পুলিশ সদস্যও নিহতের ঘটনা ঘটে। একই সাথে দেশের বিভিন্ন থানায় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ সহ থানায় দায়িত্বরত পুলিশদের উপর হামলা চালিয়ে দুর্বৃত্তরা নির্মমভাবে হত্যা ও আগুনে পুড়িয়ে ফেলে। এঘটনা কেন্দ্র করে ৫ আগষ্ট সরকার পদত্যাগ করার পরই বিভিন্ন থানাগুলোতে ধ্বংসযজ্ঞ চালায় দুর্বৃত্তকারীরা। এতে অনেক পুলিশ সদস্যদের প্রান হারায়। অনেক পুলিশ সদস্য নিজের জীবনের নিরাপত্তার জন্য থানা ছেড়ে চলে যায় এবং অনেকে থানা ত্যাগ করে।
ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে বিভিন্ন থানায় হামলা, ভাংচুর ও পুলিশ সদস্যদের হত্যার ঘটনার পর দেশব্যাপী পুলিশি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় পুলিশ। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশ হত্যাসহ সকল পুলিশি স্থাপনায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে অতিদ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে, নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে এককালীন ও আহত সদস্যদেরও আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান, পুলিশ বাহিনীকে কোনও দলীয় সরকার রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যবহার করতে পারবে না সেজন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে সহ মোট ১১ দফা দাবীতে কর্মবিরতি ঘোষনা দেয় পুলিশ সদস্য। তবে পুলিশের নতুন আইজি ময়নুল ইসলামের নির্দেশে থানায় ফেরা শুরু করেছেন কর্মবিরতি দেওয়া পুলিশ সদস্যরা। ইতোমধ্যে দেশের ৫৮৩টি থানায় কার্যক্রম শুরু করেছেন পুলিশ সদস্যরা।
অন্যদিকে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসায় দেশের পরিস্থিতির স্বাভাবিক হবার পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরাও যেন থানাগুলোতে ফিরে তার জন্য নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে সকল পুলিশ সদস্যদের চাকুরীতে যোগদানের নির্দেশ দিয়েছেন উপদেষ্টা। বৃহস্পতিবারের মধ্যে যে সকল পুলিশ সদস্য চাকুরী যোগদান না করবে তাদের চাকুরী থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে তিনি এটারও নির্দেশ দেন।
এদিকে পুড়িয়ে ফেলা থানাগুলোও পরিষ্কার করে স্বাভাবিক কাজ করার অবস্থায় ফিরে আনছে শিক্ষার্থীরা। এছাডাও ডাকাতের উৎপাত বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগন মিলে পাহারা ও ট্রাফিক কাজের দায়িত্ব নেন শিক্ষার্থীরা।