জাগো নারায়ণগঞ্জ
একসময় ছিলেন নারায়ণগঞ্জে পাগলা ঘাটের লেবার। পিতা ছিলেন লেবার সর্দার। পিতার মৃত্যুর পর লেবার হতে বনে যান লেবার সর্দার। নাম মোকারম সর্দার।
ডিবি প্রধান নানান অপকর্মের হোতা ডিবি হারুনের শেল্টারে স্বল্প সময়ে বিশাল বিত্ত বৈভবের মালিক বনে যান মোকারম সর্দার। মাত্র ২০/২২ বছরের ব্যবধানে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। সচেতন এলাকাবাসী লেবার থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার রহস্য উদঘাটনে দুর্নীতি দমন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
একটি সূত্র হতে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলি উপজেলার দামপাড়া ইউনিয়নের সরদার হাটি নামক গ্রামে ১৯৮১ সালের পহেলা মে জন্মগ্রহণ করেন মোকারম সর্দার। প্রায় মাস ৩ আগে নিকলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ডিবি প্রধান হারুনের বদৌলতে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। সেই সাথে আত্মগোপন করেন হত্যা সহ নানান অপকর্মের হোতা ডিবি হারুন।
সে হারুনের একনিষ্ট অনুসারী মোকাররম সর্দার। জনশ্রুতি রয়েছে, মোকাররম সর্দার ডিবি হারুনের অবৈধ পন্থায় উৎপাজিত অর্থ দেখভাল করেন। যা তদন্ত করলে এর রহস্য উদঘাটন হবে বলে মনে করেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ও কিশোরগঞ্জের নিকলি বাসী।
লেবার সরদার মোকারমের এই উত্থানের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতাপশালী সরকারি চাকরীজীবি ডিবি হারুন।
ডিবি হারুনের অবৈধ আয়ের উৎসব জমা রাখত মোকাররম সরদারের নিকট। তাইতো লেবার থেকে জনপ্রতিনিধি হওয়ার খায়েশে উপজেলা নির্বাচনে কোটি কোটি টাকা খরচ করেন মোকাররম সর্দার।
একসময় জাতীয় দৈনিক ও বিভিন্ন ইলেকট্রিক মিডিয়ায় মোকারম সর্দারের হাজার কোটি টাকার মালিক হবার সংবাদ প্রকাশ হলেও ডিবি হারুনের প্রভাব খাটিয়ে মোকাররম সর্দার পার পেয়ে গেছে।জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের পাগলাঘাটে একজন শিশু শ্রমিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু হয় মোকারম সর্দারের।
বাবা মৃত নুরুল ইসলামের মৃত্যুর পর বাবার স্থলাভিষিক্ত হয়।
এর ধারাবাহিকতায় শেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফখরুদ্দিনের আমলে কোন এক যাদুর স্পর্শে ভাগ্য রাতারাতি বদলে যায়।
তিনি পরিচয় দিতে থাকেন দানবীর হিসাবে। ছোট ভাই আনোয়ার হোসেনকে দামপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচন করতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেন। দিনের আলো এমনকি রাত্রের অন্ধকারে মোকাম সর্দার হয়ে ওঠেন ব্যতিক্রম চরিত্র এবং নিকলী এলাকার একসময় বিএনপি’র নেতাকর্মী হিসেবে একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে উঠেন।
ভাগ্যের চাকার আর্বতে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে যান।
অত্যন্ত চতুর মোকারম সরদার বিএনপি’র কর্মী বনে যান একসময়।অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন নেতাদের ম্যানেজ করে নেন। এলাকায় দান-খয়রাত করে দানবীর ও মহান ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে পরিচিত করে তোলেন। এমনকি সরকারী,বেসরকারী বড় বড় ব্যক্তিদের বিভিন্ন উপহার দিয়ে সখ্যতা গড়ে তোলেন। হাজার কোটি টাকার মালিক মোকাররম সরদার গত উপজেলা নির্বাচনে নিকলী থেকে প্রতিদ্বিন্দা করেন। নির্বাচন কমিশন অফিসে তথ্য গোপন করে গত ১৮/৪/২০২৪ হলফনামা দাখিল করেন।
তাতে তিনি উল্লেখ করেন, বাড়ি ভাড়া বাবদ বার্ষিক আয় ৯০,০০০ টাকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হতে আয় ২০ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা, নগদ ক্যাশ হিসেবে দুই কোটি ২০ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা,স্বর্ন ১০ ভরি, দামপাড়া মৌজায় দেড় শতাংশ বাড়ি জায়গা, কিশোরগঞ্জ মোজায় আড়াই শতাংশ, ভিন্নগাও মৌজায় ৪০.৪৩ শতাংশ জমি,ভিন্নগাও মৌজায় ৭০ শতাংশ জায়গা হিসেবে উল্লেখ করেন।
জাগো নারায়ণগঞ্জ ২৪.কমের হাতের প্রকৃত তথ্য গোপন করে হলফনামায় উল্লেখ ছাড়াও মোকারম সর্দারের বিপুল সম্পত্তির তথ্য এসেছে। যা নির্বাচনে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়নি।
সেগুলোর মধ্যে দামপাড়া মৌজায় খতিয়ান নম্বর ৩৫/২২ দাগ নম্বর ৯৪৮ জায়গার পরিমাণ ২৫ শতাংশ রেজিস্ট্রেশনের তারিখ ১/০৮/ ২০১৩ যার প্রকৃত মূল্য ২ কোটি টাকা অথচ দলিলে দেখানো হয়েছে ২০ লক্ষ টাকা।
দামপাড়া মৌজার খতিয়ান নাম্বার ২৪৮৬, ২৪৮৫, ৩৮০৫ জায়গার পরিমাণ ১০. ৯০ একর, যার প্রকৃত বাজার মূল্য তিন কোটি টাকা। দলিলের মূল্য ছিল ২৯ লক্ষ টাকা। সাফ কবলা দলিল নাম্বার ২৫৫২/২০১৯, দামপাড়া মৌজায় দশ শতাংশ জায়গার উপর নির্মিত তিন তলা ডুপ্লেক্স বিল্ডিং যার বর্তমান বাজার মূল্য পাঁচ কোটি টাকা।হাশেম চেয়ারম্যান, রইসউদ্দিন মেম্বার, নজরুলের কাছ থেকে ২০ একর জমি ক্রয় করেন যার বর্তমান মূল্য ৩ কোটি টাকা, গোড়াদিঘী মৌজায় ৭ একর সম্পত্তি খরিদ করেন যার বাজার মূল্য ৫০ লক্ষ টাকা, অধ্যাপক বাবর আলীর কাছ থেকে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে তিনতলা বিল্ডিং, নারায়নগঞ্জের ফতুল্লায় ৬ শতাংশ জমির উপর চার তলা বিল্ডিং, বর্তমান বাজার মূল্য এক কোটি ৩০ লক্ষ টাকা দামের একটি প্রাডো গাড়ি কিনেন। যা তিনি হলফ নামায় উল্লেখ করেননি। এছাড়াও কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক নামে- বেনামে,বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে বিপুল পরিমান নগদ টাকা রয়েছে।সামান্য লেবার থেকে হাজার কোটি টাকার হওয়ার রহস্য উদঘাটনে অন্তবর্তী সরকার,সেনাবাহিনী ও দূর্নীতি দমন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে মোকারম সর্দারের ব্যবহত মুঠোফোন ০১৯২১৪৯৬১@@ নাম্বারে কল করা মোবাইলে কথা বলতে অস্বীকার করেন।তার অফিসে গিয়ে দেখা করে কথা বলতে বলেন।মোবাইলে বলতে বললে তিনি বলেন,যে অভিযোগ দেয়া হয়েছে তা ভিত্তিহীন।
( চলবে)