থানা থেকে অভিযোগ তুলে নিতে বাদিকে হুমকি ধমকি
ষ্টাফ রিপোর্টার:
দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজী না করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি কড়া নির্দেশনা দিয়েছিলো নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি। জেলা ও মহানগর বিএনপি থেকে বলা হয়েছিলো, দলের নাম ভাঙ্গিয়ে যদি কেউ দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজীতে লিপ্ত হয়, তাহলে তাকে ছাড় দেয়া হবেনা। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কিন্তু কে শোনে কার কথা? শীর্ষ নেতাদের ওই কঠোর নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে নারায়ণগঞ্জ শহরে কথিত বিএনপি নেতা আমির হোসেনের চলছে ভয়ংকর দখলবাজী, চাঁদাবাজী। গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে শহরের গলাচিপা এলাকার কথিত এ বিএনপি নেতা আমির হোসেন। বর্তমানে দেশ অর্ন্তবর্তীকালিন সরকার চালালেও তিনি মনে করছেন বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে গেছে। আর তাই তিনি ঝুট সেক্টর থেকে শুরু করে দিগুবাবুর বাজারসহ সব সেক্টর দখল করার জন্য মেতে উঠেছেন। সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের হুমকি ধমকি থেকে শুরু করে চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ীদের কুপিয়ে আহত করার মতও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ওইসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা হলে মামলা তুলে নেয়ার জন্যও বাদিদের হুমকি দিচ্ছেন তিনি। বর্তমানে তিনি এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন, যার কারণে সাধারণ ব্যবসায়ীরাও তার যন্ত্রণায় অতিষ্ট।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুর ভিজিটিং কার্ড নিয়ে বিভিন্ন গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নিজেকে টিপুর লোক দাবি করে ঝুট সেক্টর দখল করার চেষ্টা করছেন আমির হোসেন। এমনই একটি ভিজিটিং কার্ড গণমাধ্যমের হাতে এসে পৌছছে। যেখানে দেখা যায়, ভিজিটিং কার্ডের পেছনে মো: আমির হোসেন নাম ও মোবাইল নাম্বার লেখা। এ কার্ডটি অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু নিজেই তাকে দিয়ে গার্মেন্টস থেকে ঝুট নামাতে বলেছিলেন বলে দাবি করেছেন আমির হোসেন। এমন প্রভাব দেখিয়ে তিনি বীরদর্পে গার্মেন্টস থেকে ঝুট নামানোর চেষ্টা করেন। তবে গার্মেন্টস মালিক কর্তৃপক্ষ তাকে ঝুট দিতে না চাইলে তিনি মালিকদের সাথেও প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, প্রায় অর্ধশতাধীক সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নিয়ে দিগুবাবুর বাজারসহ শহরের বিভিন্নস্থানে মহড়া দিচ্ছেন। সাধারণ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক সকলকে চাঁদা দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন এবং হুমকি ধমকি দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, ওই সব স্থানে গিয়ে বীরদর্পে বলে বেড়াচ্ছে, ‘এতদিন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সব খাইছে। এখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় নাই, তাই আমরা খামু। কেউ কিছু বললে তার কলার ধইরা নিয়ে আমু।’
এদিকে গত ২৫ আগষ্ট শহরের দিগুবাবুর বাজারে গিয়ে চাঁদার জন্য বেশ কয়েকজন কাঁচামাল ব্যবসায়ীদের কুপিয়ে আহত করে আমির হোসেনের সন্ত্রাসীরা। ওই দিন ভোরবেলায় দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাজারে মহড়া দেওয়ার পর এ ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে আহত কাঁচামাল ব্যবসায়ী শুক্কুর ও আশিক নামে দুই ভুক্তভোগী নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু অভিযোগ দায়ের করার পরও আহত ওই ব্যবসায়ীর বাসায় গিয়ে অভিযোগ তুলে নিতে তাকে হুমকি ধমকি দিচ্ছেন আমির। বর্তমানে অভিযোগের বাদিরা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন বলে জানিয়েছেন সাংবাদিকদের।
এ থেকেই বুঝাযায়, কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আমির হোসেন। শুধু বেপরোয়াই নয়, তিনি যেন হয়ে উঠেছেন এক অপ্রতিরোধ্য। কোন ভাবেই তাকে থামানো যাচ্ছেনা। তিনি যেন গোটা শহর গিলে খাওয়ার জন্য টাকার নেশায় মেতে উঠেছেন। যখন যার নাম পারছেন ভাঙ্গিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করছেন।
এদিকে বিএনপি নেতাদের এ ধরনের কর্মকান্ড দেখে ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জের বেশিরভাগ মানুষকেই বলতে শোনা গেছে, তাহলে কি এমন দখলদারিত্বের জন্যই ক্ষমতায় যেতে চায় বিএনপি? তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পত হয়েছে দু’সপ্তাহ হয়নি। এর মধ্যেই বিএনপি নেতারা সেক্টর দখলে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। শোনাযাচ্ছে, বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তারা নাকি চাঁদাও দাবি করছেন। যদি এখনই এমন অবস্থা হয়, ভবিষ্যতে যদি তারা ক্ষমতায় যান তাহলে কি অবস্থা হবে, এটা দেখেই তা বুঝা যাচ্ছে। যেন অসুরদের কাছ থেকে মুক্তি পেয়ে রাক্ষসদের কাছে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিষয়টা সত্যিই উদ্বেগের।
সচেতন মহলের দাবি, এসমস্ত বিএনপি নেতাদের যদি এখনই রোখা না যায়, তাহলে তারা দলকেই খেয়ে ফেলবে। এক ড্রাম দুধকে নষ্ট করার জন্য একফোটা চনাই যথেষ্ট। তাই বিএনপির ভাবমুর্তি নষ্ট করার হাত থেকে বাঁচাতে হলে যতদ্রুত সম্ভব এ সমস্ত নেতাদের চিহ্নিত করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের পরামর্শ দিয়েছে তারা।