ষ্টাফ রিপোর্টার:
চলতি বছরের পুরোটা সময় নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা শূন্যের কাছাকাছি থাকলেও গত কয়েকদিন ধরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েছে। নারায়ণগঞ্জের দুটি সরকারি হাসপাতালের সূত্রমতে এই তথ্য জানা গেছে। দুই হাসপাতালে এই মাসে সর্বমোট ১২১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। যার মধ্যে পুরুষ রোগীর সংখ্যাই বেশি।
চলতি মাসের শুরু থেকে টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ায় শহরের বেশকিছু রাস্তায় সৃষ্ট গর্ত, বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানি ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় এডিস মশার বংশবিস্তার বেড়েছে। এর ফলে হাসপাতালে ডেঙ্গুর রোগীর চাপও বেড়েছে। তবে এ নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
নারায়ণগঞ্জের খানপুর এলাকায় অবস্থিত ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এর মধ্যে অধিকাংশ রোগীই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বর্তমানে ৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সর্বশেষ ১০ দিনেই ৩০ এর অধিক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন।
অন্যদিকে, শহরের জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সর্বমোট ৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হলেও সর্বশেষ ১৭ দিনে ৫০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
বর্তমানে ১০ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবি ফরহাদ হোসেন। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে জ্বর অনুভব করলে ডেঙ্গু টেস্ট করাই। পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে ভর্তি হই।
বর্তমানে অনেকটাই ভালো আছি। আশা করছি দ্রুতই বাড়ি ফিরে যেতে পারব।’
মো. রিপন নামের আরেক রোগী বলেন, ‘আমি সিটি করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। আমাদের এলাকায় একটা খাল আছে ওই খালের পানি ময়লা। কেউ সেটা পরিষ্কার করে না। আমাদের জনপ্রতিনিধিরাও ঠিকমতো ওষুধ দেন না। ওই এলাকার অনেক মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। আমারও একই অবস্থা। খুব কষ্ট হচ্ছে। জানি না কবে সুস্থ হবো?’
খানপুর ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এমএ বাশার বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে আমাদের হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়লেও কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। কিছুদিন আগে বৃষ্টি হওয়ার কারণে এডিস মশার প্রকোপ বেড়ে গিয়েছে। এই রোগ থেকে বাঁচার প্রথম উপায়ই হচ্ছে জনগণের সচেতনতা। পাশাপাশি জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন যদি নিয়মিত ওষুধ দেন তাহলে এডিস মশা বংশবিস্তার করতে পারবে না। মূলত বছরের সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকে। তাই এই সময়ে যদি কারো জ্বর আসে তাহলে অবশ্যই তার ডেঙ্গু টেস্ট করা জরুরী। আর রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ বাদে কোনো ওষুধ সেবন করা যাবে না। ডেঙ্গু টেস্ট করতে এসে কোনো রোগী যেনো হয়রানীর শিকার না হয় সেজন্য আমরা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আশা করছি, অন্যান্য বারের মতোন এবারও আমরা ডেঙ্গু মোকাবেলা করতে পারব।’
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. জহিরূল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে ডেঙ্গু রোগীর চাপ কিছুটা বাড়লেও রোগীদের সেবা প্রদান করতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। যথেষ্ট স্যালাইন মজুদ রয়েছে। তবে আমাদের হাসপাতালে ডেঙ্গু টেস্টিং কিটের কিছুটা সংকট রয়েছে। আমরা ৫ হাজার টেস্টিং কিটের জন্য আবেদন জানিয়েছি। আশা করছি, খুব শিগগিরই আমরা কিট হাতে পাব।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. এএফএম মুশিউর রহমান বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে। তবে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। তাহলে ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেকটাই কমিয়ে আনা যাবে।’
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘ডেঙ্গু মোকাবেলায় আমরা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অনেকগুলো উদ্যোগ নিয়েছি। এরইমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে আমাদের টিম সবাইকে সতর্ক করতে লিফলেট বিলি করেছেন এবং আমি নিজেও বিভিন্ন স্থানে গিয়ে সবাইকে ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতন করে এসেছি। নগরবাসীকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।’
সংগৃহিত